নারিকেলি চেলা ও তিত পুঁটির কৃত্রিম প্রজনন কৌশল উদ্ভাবন

তিত পুঁটি ও নারিকেলি চেলা। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) বিজ্ঞানীরা আরও ২টি বিপন্ন প্রজাতির মাছের কৃত্রিম প্রজননে সফলতা অর্জন করেছেন।

দেশে প্রথমবারের মতো মিঠাপানির বিপন্ন প্রজাতির নারিকেলি চেলা ও তিত পুঁটি মাছের কৃত্রিম প্রজনন প্রযুক্তি উদ্ভাবনে সফলতা অর্জনের মধ্য দিয়ে ৩৬ প্রজাতির মাছের কৃত্রিম প্রজননে সাফল্য অর্জন করেছে বিএফআরআই।

গত মে মাসে ইনস্টিটিউটের নীলফামারী জেলার সৈয়দপুরস্থ স্বাদু পানি উপকেন্দ্র থেকে নারিকেলি চেলা ও ময়মনসিংহস্থ কেন্দ্র থেকে তিত পুঁটি মাছের কৃত্রিম প্রজনন কৌশল উদ্ভাবন করা হয়।

নারিকেলি চেলা মাছের প্রজনন গবেষণায় ছিলেন প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. খোন্দকার রশীদুল হাসান, ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. ইশতিয়াক হায়দার, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা তাশরিফ মাহমুদ মিনহাজ ও শ্রীবাস কুমার সাহা।

তিত পুঁটি মাছের গবেষণায় সম্পৃক্ত ছিলেন মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. অনুরাধা ভদ্র, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. শাহীন আলম ও ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. সেলিনা ইয়াসমিন।

গবেষক শাহীন আলম বলেন, 'মলা, ঢেলা ও পুঁটি জাতীয় মাছ গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর পুষ্টির অন্যতম উৎস হিসেবে বিবেচিত হতো। পরবর্তীতে এসব মাছের উৎপাদন প্রাকৃতিক জলাশয়ে কমে যাওয়ায় পুষ্টি থেকে সাধারণ ভোক্তারা বঞ্চিত হতে থাকেন। এসব মাছ মানুষের কাছে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যেই বিএফআরআই নিরলসভাবে কাজ করছে।'

অঞ্চলভেদে 'কাটারি' ও 'নারিকেলি চেলা' নামে পরিচিত মাছটি নদী, পুকুর, বিল, হ্রদ ও খালের তলদেশে বসবাস করে। সুস্বাদু হওয়ায় উত্তরাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মাছটি খুবই জনপ্রিয়।

মাছটিতে মানবদেহের জন্য উপকারী অণুপুষ্টি উপাদান ভিটামিন এ ও জিংক বিদ্যমান রয়েছে। এ মাছের প্রাচুর্যতাও বর্তমানে প্রকৃতিতে ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে।

এই প্রজাতিটিকে বিপন্নের হাত থেকে রক্ষার লক্ষ্যে ইনস্টিটিউটের স্বাদু পানি উপকেন্দ্র সৈয়দপুরের বিজ্ঞানীরা বিগত ২০২১ সালে উত্তরাঞ্চলের তিস্তা ও চিকলী নদী থেকে নারিকেলি চেলা মাছ সংগ্রহ করে উপকেন্দ্রের পুকুরে গবেষণা শুরু করেন। প্রাকৃতিক পরিবেশে বেড়ে ওঠা 'নারিকেলি চেলা' অন্য মাছের মতো বর্ষা ঋতুতে হালকা স্রোতযুক্ত জলাশয়ে প্রজনন করে থাকে।

অন্যদিকে, তিত পুঁটি মাছটি এক সময় বাংলাদেশের নদী-নালা, খাল-বিল, হাওর-বাঁওর ও পুকুরে পাওয়া যায়। মাছটি বাংলাদেশসহ ভারত, মিয়ানমার, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ডে পাওয়া যায়।

আইইউসিএন ২০১৫ এর তথ্য অনুযায়ী মাছটি বিপন্ন প্রজাতির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত। এ মাছে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান ও অন্যান্য অনুপুষ্টি পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে, যা মানবদেহের প্রয়োজনীয় ভিটামিন, মিনারেল ও খনিজ লবণের চাহিদা পূরণ করে।

মাছটি অ্যাকুরিয়ামের বাহারি মাছ হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। এ ছাড়া সিদল ও শুটকি তৈরিতেও তিত পুঁটি ব্যবহৃত হয়।

মাছটিকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষার লক্ষ্যে ২০২১ সালে স্বাদু পানি কেন্দ্র ময়মনসিংহের বিজ্ঞানীরা নেত্রকোণা ও কিশোরগঞ্জের হাওর এবং ব্রহ্মপুত্র নদী হতে সংগ্রহ করে কেন্দ্রের পুকুরে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করে।

বিএফআরআই মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ বলেন, 'দেশীয় ছোট মাছ বাঙালির সংস্কৃতি ও কৃষ্টির অবিচ্ছেদ্য অংশ। বিপন্ন প্রজাতির দেশীয় মাছ সুরক্ষায় বর্তমান সরকার বদ্ধ পরিকর। এরই ধারাবাহিকতায় ইনস্টিটিউট থেকে গবেষণা পরিচালনা করে ৬৪ প্রজাতির বিপন্ন মাছের মধ্যে নারিকেলি চেলা, তিত পুঁটিসহ মোট ৩৬ প্রজাতির মাছের জীনপুল সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়েছে। বাণিজ্যিক গুরুত্ব সম্পন্ন অবশিষ্ট সব দেশীয় বিপন্ন মাছকে পর্যায়ক্রমে চাষের আওতায় এনে সুরক্ষা করা হবে।'

বিএফআরআই থেকে বিলুপ্তপ্রায় ও দেশীয় ৩৬ প্রজাতির মাছের প্রজনন ও চাষাবাদ প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে। এর মধ্যে পাবদা, গুলশা, টেংরা, গুজি আইর, চিতল, ফলি, মহাশোল, বৈরালী, বালাচাটা, গুতুম, কুচিয়া, ভাগনা, খলিশা, গজার, রাণী, বাতাসী, পিয়ালী ইত্যাদি অন্যতম।

এসব প্রযুক্তি মাঠ পর্যায়ে সম্প্রসারিত হওয়ায় বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির মাছের প্রাপ্যতা সম্প্রতি বৃদ্ধি পেয়েছে।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০০৯ সালে পুকুরে দেশীয় ছোট মাছের উৎপাদন ছিল ৬৭ হাজার ৩৪০ মেট্রিক টন, যা ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ২ দশমিক ৫০ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে।

অর্থাৎ গত ১২ বছরে চাষের মাধ্যমে দেশীয় ছোট মাছের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৪ গুণ। দেশীয় মাছ সুরক্ষায় ইনস্টিটিউটে দেশে প্রথমবারের মত ২০২০ সালে লাইভ জীনব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

Inside the 3-year plan to fix banks

Bangladesh has committed to a sweeping overhaul of its troubled financial sector, outlining a detailed three-year roadmap as part of its latest agreement with the International Monetary Fund.

9h ago