তরমুজ খেতে অজানা রোগ, দুশ্চিন্তায় কৃষক

ছবি: সোহরাব হোসেন/স্টার

পটুয়াখালীতে তরমুজ খেতে অজানা রোগের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। গত ১ সপ্তাহ ধরে এ রোগের কারণে তরমুজ গাছের কাণ্ড শুকিয়ে যাচ্ছে, গাছ ঢলে পড়ছে।

মাস-খানেক পরেই তরমুজ বাজারজাত করার পরিকল্পনা ছিল কৃষকদের। কিন্তু এ অবস্থায় অজানা রোগের কারণে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তারা।

কৃষি বিভাগ কীটনাশক স্প্রের পাশাপাশি আক্রান্ত গাছগুলোকে উপড়ে মাটিতে পুতে ফেলার পরামর্শ দিচ্ছে।

পটুয়াখালী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, এ বছর জেলায় মোট ২২ হাজার ৮৯০ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে। সবচেয়ে বেশি চাষ হয়েছে রাঙ্গাবালীতে ৯ হাজার ৪৪৯ হেক্টর ও গলাচিপায় ৯ হাজার ৫০৫ হেক্টরে।

ছবি: সোহরাব হোসেন/স্টার

এ ছাড়াও, কলাপাড়ায় ১ হাজার ৯২৫ হেক্টর, বাউফলে ১ হাজার ৫৩১ হেক্টর, পটুয়াখালী সদর উপজেলায় ২৩৬ হেক্টর দশমিনায় ৪৫০ হেক্টর এবং মির্জাগঞ্জ ও দুমকিতে ১৫ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ২ হাজার হেক্টর তরমুজ খেতে এ রোগের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে শুধু রাঙ্গাবালীতেই ১ হাজার হেক্টর জমি রয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক এ কে এম মহিউদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আক্রান্ত খেতগুলো পরিদর্শন করেছি। জাব পোকা, থ্রিপস জাতীয় শোষক পোকা ও মাকড়সা জাতীয় পোকার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এ কারণে তরমুজ গাছের কচিপাতা শুকিয়ে যাচ্ছে। আক্রান্ত এলাকার কৃষকদের কীটনাশক ও মাকড়সানাশক ওষুধ স্প্রের পরামর্শ দিয়ে প্রচারপত্র বিতরণ করা হচ্ছে। এ ছাড়াও, খেতে যে গাছ আক্রান্ত হয়েছে, তা তুলে মাটিতে পুতে ফেলারও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।'

'এতে করে রোগ কম ছড়াবে,' বলে মন্তব্য করেন তিনি।

রাঙ্গাবালী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান ডেইলি স্টারকে জানান, তরমুজ খেতে এ নতুন রোগ সংক্রমণের পর জেলার আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাদের দল সম্প্রতি তরমুজ খেত পরিদর্শন করেছেন।

'তরমুজ খেতে পাতা কুঁকড়ে যাওয়া রোগ দেখা দিয়েছে,' উল্লেখ করে আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ইফতেখার মাহমুদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জমিতে একই ফসল বার বার ফলালে পোকা-মাকড়ের উপদ্রবসহ রোগ-বালাই দেখা দেয়। ভিন্ন ভিন্ন ফসল ফলালে রোগ-বালাই কমবে।'

ছবি: সোহরাব হোসেন/স্টার

রাঙ্গাবালী উপজেলার কাজীরহাওলা গ্রামের কৃষক নাসির খান (৪০) কয়েক বছর ধরেই তরমুজের আবাদ করছেন।

তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ বছর ২ একর জমিতে তরমুজ আবাদ করা হয়েছে। গাছগুলো বেড়ে উঠলেও হঠাৎ করে শুকিয়ে যেতে শুরু করেছে। কী রোগ হয়েছে তাও বলতে পারছি না। আগামী ১ মাসের মধ্যেই তরমুজগুলো বিক্রির উপযোগী হতো, এমন অবস্থায় এ রোগের আক্রমণে আমরা দিশেহারা।'

তিনি জানান, গত বছর ১ একর জমিতে তরমুজ আবাদ করেছিলেন। খরচ হয়েছিল ৪০ হাজার টাকা। সেসময় আড়াই লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করেছিলেন।

একই এলাকার কৃষক সাখাওয়াত দফাদার (৩৫) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ বছর আড়াই একর জমিতে তরমুজ আবাদ করেছি। ইতোমধ্যে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা খরচ করেছি।'

'অন্তত সাড়ে ৩ লাখ টাকার তরমুজ বিক্রির আশা করছি,' যোগ করেন তিনি।

কৃষি বিভাগ থেকে পরামর্শ দিলেও তা কাজে আসছে না বলে জানান তিনি।

জেলায় প্রতিবছর তরমুজ চাষ বাড়ছে। গত বছর জেলায় ১৪ হাজার ৮২২ হেক্টর খেতে তরমুজ আবাদ হয়েছিল। উৎপাদন হয়েছিল ৭ দশমিক ৪১ লাখ মেট্রিক টন তরমুজ।

এ বছর জেলায় তরমুজ আবাদ হয়েছে ২২ হাজার ৮৯০ হেক্টর জমিতে এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৯ দশমিক ১৫ লাখ মেট্রিক টন।

Comments

The Daily Star  | English

The wrongs of past 15yrs must be righted

The Daily Star spoke to BNP Secretary General Mirza Fakhrul Islam Alamgir on a host of issues ranging from elections to media freedom 

14h ago