আড়িয়াল বিলের মিষ্টি হাসি

ছবি: সাজ্জাদ হোসেন/স্টার

মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার আড়িয়াল বিলের মিষ্টি কুমড়া চাষিদের মুখে হাসি ফুটেছে। গতবারের তুলনায় এবার আবাদ কম হলেও ভালো দাম পেয়েছেন তারা।

বর্তমান বাজারে গ্রীষ্মকালীন সবজি এখনো না আসায় চাষিরা কুমড়া আগাম তুলে বিক্রি করেছেন।

কৃষি অফিস সূত্র জানায়, এবার আড়িয়াল বিলে ১৪৫ হেক্টর জমিতে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ হয়েছে, যা গত বছর ছিল ১৯০ হেক্টর। বর্তমানে কৃষকরা আড়িয়াল বিলের মিষ্টি কুমড়া কেজিপ্রতি ১৫ থেকে ১৮ টাকায় বিক্রি করছেন। গত বছর কেজিপ্রতি তারা পেয়েছেন ৮ থেকে ১০ টাকা।

ছবি: সাজ্জাদ হোসেন/স্টার

শীতে শুকিয়ে যাওয়া এ বিল জুড়ে মিষ্টি কুমড়ার চাষ হয়৷ শ্রীনগরের শ্যামসিদ্ধি ইউনিয়নের গাদিঘাট গ্রাম থেকেই আড়িয়াল বিলের শুরু। গাদিঘাট, আলমপুর, শ্রীধরপুর, বাড়ৈখালী গ্রামসহ বিলের বিভিন্ন স্থানে আবাদ হয় মিষ্টি কুমড়া।

বিল থেকে গত ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাস থেকে তোলা হচ্ছে মিষ্টি কুমড়া৷ বর্তমানে কুমড়া তোলা শেষ পর্যায়ে।

ছবি: সাজ্জাদ হোসেন/স্টার

সরেজমিনে দেখা গেছে, কৃষকরা জমি থেকে কুমড়া মাথায় নিয়ে রাস্তার পাশে স্তূপ করে রাখছেন। আবার বিলের খাল দিয়ে ট্রলারের মাধ্যমে আনা হচ্ছে গাদিঘাট বাজারের কাছে। সেখান থেকে গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ঢাকার কাওরানবাজার, মিরপুরসহ বিভিন্ন পাইকারি বাজারে।

আড়িয়াল বিলের কৃষক ও পাইকাররা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তারা প্রতি কেজি কুমড়া পাইকারদের কাছে ১৫ থেকে ১৮ টাকা দরে বিক্রি করেছেন। পাইকাররা হাটে নিয়ে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করছেন কেজিপ্রতি ২০ থেকে ২৪ টাকা দরে। খুচরা বিক্রেতারা তা ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করছেন কেজিপ্রতি ৪০ থেকে ৫০ টাকায়।

ছবি: সাজ্জাদ হোসেন/স্টার

গাদিঘাট গ্রামের কৃষক মো. জালাল উদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত প্রায় ৩ লাখ টাকার মিষ্টি কুমড়া বিক্রি করেছি। গত বছর একই পরিমাণ কুমড়া চাষ করে অর্ধেক দাম পেয়েছিলাম। করোনার জন্য তখন বিক্রিও কম ছিল। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ক্ষতিও হয়েছিল। কিন্তু, এবার ভালো দাম পাচ্ছি।'

কৃষক রহমত উল্লাহ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আড়িয়াল বিলের বেশিরভাগ কুমড়া যায় ঢাকার কাওরানবাজার ও মিরপুরে। সেখান থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। এবার ৭০ কেজি ওজনের ৫টি মিষ্টি কুমড়া হয়েছিল। সেগুলো ৫ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে।'

'একেকটি কুমড়া পরিপক্ব হতে ৩ মাস লাগে' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'বাজারের অন্যান্য কুমড়ার দাম কেজিপ্রতি ১০ টাকা হলে আড়িয়াল বিলের মিষ্টি কুমড়ার দাম হয় ১৫ টাকা।'

ছবি: সাজ্জাদ হোসেন/স্টার

কৃষক গিয়াস উদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রায় ২ শতক জমিতে কুমড়া চাষ করেছিলাম। ২ হাজার টাকার মতো খরচ করে প্রায় ১০ হাজার টাকার কুমড়া বিক্রি করেছি। অন্যান্য সবজির পাশাপাশি কুমড়া চাষ করেছি। সর্বনিম্ন ১০ কেজি থেকে শুরু করে ১২০ কেজি পর্যন্ত ওজনের হয়েছে কুমড়া।'

তিনি আরও বলেন, 'মুন্সিগঞ্জের গাদিঘাট এলাকা থেকে ঢাকার কাওরানবাজার পর্যন্ত ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা গাড়ি ভাড়া লাগে। জমি থেকে কুমড়া তোলার জন্য এক শ্রমিককে ৫০০ টাকা দিতে হয়। শ্রমিকদের বেশিরভাগ চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে এসেছেন।'

কৃষক সিরাজ ঢালী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ বছর প্রায় ২৮ শতক জমিতে চাষের খরচ হয়েছে প্রায় ৩৫ হাজার টাকা। মোট এক লাখ টাকার মিষ্টি কুমড়া বিক্রি করেছি। দূর-দূরান্ত থেকে অনেককে এসেও কিনে নিয়ে যান। আড়িয়াল বিলের কুমড়ার সুনাম সারাদেশেই আছে।'

ছবি: সাজ্জাদ হোসেন/স্টার

কৃষক মো. ফারুক বেপারি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'একেকটি গাড়িতে প্রায় ২০০ থেকে ২৫০টি মিষ্টি কুমড়া পরিবহণ করা যায়। জমি থেকে তোলা মিষ্টি কুমড়ার দানা সংগ্রহ করে রাখা হয়। মৌসুম এলে সেগুলো রোপণ করা হবে।'

'কুমড়া চাষে খুব বেশি পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না' বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

ছবি: সাজ্জাদ হোসেন/স্টার

শ্রীনগর উপজেলা কৃষি অফিসার সান্ত্বনা রাণী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এবার আড়িয়াল বিলে ৪৫ হেক্টর জমিতে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ কম হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ ও অসময়ে বৃষ্টির কারণে কুমড়ার ক্ষতি হয়েছে। তবে আবাদ কম হলেও ভালো দাম পাচ্ছেন কৃষক। বর্তমান বাজারে গ্রীষ্মকালীন সবজি আসা শুরু হয়নি। তাই কৃষক মিষ্টি কুমড়া আগাম তুলে বাজারে সরবরাহ করছেন।'

তিনি আরও বলেন, 'গত বছর মিষ্টি কুমড়ার পাশাপাশি অন্যান্য গ্রীষ্মকালীন সবজি বাজারে থাকায় কৃষক দাম কম পান। আড়িয়াল বিলের বড় আকৃতির মিষ্টি কুমড়া দেশের আর কোথাও পাওয়া যায় না। মাটির গুণাগুণ ও প্রাকৃতিক পরিবেশের কারণে আকারেও বড় হয়। অন্যস্থানে বীজ বপণ করেও এই বিলের মতো বড় আকৃতির কুমড়া পাওয়া যায় না।'

Comments

The Daily Star  | English

Over 45 lakh cases pending in courts

Each HC judge is burdened with 6,552 cases, while Appellate Division judges are handling 4,446 cases each, and lower court judges 1,977 cases each.

1d ago