আজ মধ্যরাত থেকে ২২ দিন ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা

আজ রোববার মধ্যরাত থেকে নদী থেকে ইলিশ আহরণে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হচ্ছে। এমন নির্দেশনায় ক্ষুব্ধ দক্ষিণাঞ্চলের জেলেরা।

তবে সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেরা বড় আকারের ইলিশ পাওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, সাগর থেকে নদীর মোহনায় বাঁধা, ডুবোচর ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ইলিশ আগমন ও চলাচলে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। তবে তারা আশা প্রকাশ করেন, মৌসুম শেষে হলেও জেলেরা ভালো ইলিশ পাবেন।

নিষেধাজ্ঞার সময়ে ইলিশ ধরা, বিক্রয় ও পরিবহন সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে বলে নিশ্চিত করেছে মৎস্য অধিদপ্তর।

ভোলার সদর উপজেলার আলাউদ্দিন মাঝি গত ৩ দিনে বঙ্গোপসাগরে ভাসানচর সংলগ্ন এলাকা থেকে ৪০০টিরও বেশি বড় আকারের ইলিশ ধরেছেন। সেগুলো তিনি বিক্রি করেছেন ২ লাখ ৪০ হাজার টাকায়।

তবে ভোলার সদর উপজেলার সোহাগ হাওলাদার জানান, নদীতে মাছ ধরে গত এক সপ্তাহে ২০ কেজির বেশি মাছ পাননি। তিনি বলেন, 'নদীতে একদম মাছ নেই বললেই চলে।'

দক্ষিণের অন্যতম প্রধান মৎস্য বিক্রয়কেন্দ্র মহীপুর মৎস্য কেন্দ্রের পাইকারি বিক্রেতা ফজলু গাজী বলেন, 'ইলিশের সরবরাহ এক-চতুর্থাংশেরও কম। ৬৫ দিনের বন্ধের পর নিম্নচাপ ছিল। ফলে জেলেরা সাগরে যেতে পারেনি। প্রতি বছর সাধারণত পূর্ণিমার সময় নিষেধাজ্ঞা শুরু হলেও এবার শুরু হয়েছে অমাবস্যা থেকে। এতে করে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। এটি একটা ষড়যন্ত্র। দেশের মৎস্য সম্পদ এর ফলে ধ্বংস হয়ে যাবে।'

বরিশালের পোর্টরোড পাইকারি মৎস্য বিক্রয়কেন্দ্রে ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে অনেক কম। এই সময়ে বাজার ইলিশে পরিপূর্ণ থাকার কথা থাকলেও রয়েছে সামান্য।

মৎস্য আড়ৎদার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক নীরব হোসেন টুটুল বলেন, 'অস্বাভাবিক হারে মাছ কমছে। এই সময়ে হাজার মন ইলিশ থাকার কথা বাজারে। কিন্তু, এর ৪ ভাগের ১ ভাগও নেই।'

বরিশালের মৎস্য কর্মকর্তা বিমল দাস বলেন, 'ইলিশ সাগর থেকে নদীতে অবাধে আসতে পারছে না। সাগরে জাল পেতে থাকার কারণে ইলিশ আসতে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। এ ছাড়াও ডুবোচরেও আটকে যাচ্ছে।'

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি ইসরাইল পণ্ডিত বলেন, 'এবার জেলেরা চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখনও তারা নদীতে ইলিশ পাচ্ছে না। এই অবস্থা নিরসনে জেলেদের জন্য বরাদ্দ করা চালের পরিমাণ বৃদ্ধির দাবি জানাচ্ছি।'

বরিশাল বিভাগের ৬টি জেলায় ৩ লক্ষাধিক ইলিশ আহরণকারী জেলে রয়েছেন। তাদেরসহ সারাদেশের জেলেদের নিষেধাজ্ঞার এই ২২ দিনের জন্য খাদ্য সহায়তা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বিভাগীয় মৎস্য কার্যালয়ের উপপরিচালক আনিসুর রহমান তালুকদার।

তিনি বলেন, 'এবার কিছু কিছু এলাকায় ইলিশ কম পাওয়া গেছে। তবে, সময় শেষ হয়ে যায়নি। নিষেধাজ্ঞার পর জেলেরা প্রচুর মাছ পাবেন বলে আশা করছি। আমরা আশা করছি এই নিষেধাজ্ঞা সফল হবে এবং ৬ লাখ টন ইলিশ মাছ আহরণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে।'

ইলিশ গবেষক আনিসুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ইলিশ সাগরে পাওয়া যাচ্ছে, কিন্তু নদীতে কিছু কিছু এলাকায় কম। এর অর্থ হলো, বাঁধার কারণে সাগর থেকে নদীতে ইলিশ ঢুকতে পারছে না। নদীর মোহনাতে ডুবোচর এবং জাল পেতে রাখার কারণে ইলিশ চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ ছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঠিক সময়ে আবহাওয়ার হিসেব মিলছে না। এর ফলে ইলিশের আগমনেও তারতম্য হচ্ছে।'

তিনি আরও বলেন, 'আমরা অনেক চিন্তা করেই মধ্য আশ্বিন থেকে নিষেধাজ্ঞার কথা বলেছি। ফুল মুন ও নিউ মুনের মধ্যবর্তী সময়ই ইলিশের ডিম ছাড়ার প্রকৃত সময়। পূর্ণিমা ছাড়াও অমাবস্যায়ও ইলিশ ডিম ছাড়ে। গত বছর ইলিশ ৫২ ভাগেরও বেশি ডিম ছেড়েছে। এবারও আমরা আশা করি কমবে না। জেলেরাও মাছ পাবে, তবে তা হয়তো আগে পরে হতে পারে। এর ফলে মোট মাছ উৎপাদন কমবে না। ভয়ের কিছু নেই। জেলেদের মাছ পেতে একটু ধৈর্য ধরতে হবে।'

Comments

The Daily Star  | English
Anti-Discrimination Students Movement

Students to launch political party by next February

Anti-Discrimination Student Movement and Jatiya Nagorik Committee will jointly lead the process

11h ago