হাজি সেলিমের বিদেশ যাওয়া নিয়ে যা বলছেন আইনজীবীরা

ছবি: সংগৃহীত

আদালতের রায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপির) চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি না পেলেও দণ্ডাদেশ নিয়েই আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হাজি সেলিম দেশের বাইরে থেকে চিকিৎসা নিয়ে ফিরেছেন। দণ্ডিত আসামি হয়েও তার বিদেশ যাত্রা নিয়ে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা।

সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক ও জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাজি সেলিমের চিকিৎসা নিতে বিদেশ যাওয়ার বিষয়ে অ্যাডভোকেট শাহদীন মালিক আজ বৃহস্পতিবার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সংসদ সদস্য হাজি সেলিমকে বলা হয়েছিল ৩০ দিনের মধ্যে আত্মসমর্পণ করতে। এই সময়ের মধ্যে তিনি বিদেশ যেতে পারবেন না, সেটা বলা হয়নি।'

তিনি আরও বলেন, 'হাইকোর্টের রায়ে তার সাজা বহাল রাখা হয়েছে। রায়ের সময় আসামি উপস্থিত থাকলে তাকে সাধারণত কারাগারে নেওয়া হয়। হাজি সেলিম জামিনে ছিলেন বিধায় তাকে ৩০ দিনের মধ্যে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলেছিলেন হাইকোর্ট। তবে, তার পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত বা বাতিল কিংবা এই ৩০ দিনের মধ্যে বিদেশ যেতে পারবেন না, এমন কোনো আদেশ ছিল না।'

অ্যাডভোকেট জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, 'আইনের অবজেকটিভে যে ক্যারেক্টারিস্টিকস থাকে, প্রয়োগের ক্ষেত্রে যে সমতার ব্যাপার থাকে, সেটা অনেক সময় প্রশ্নবিদ্ধ হয়। আমাদের প্র্যাকটিসটা যেন স্ট্যান্ডার্ড প্র্যাকটিস হয়। আমাদের এখানে এটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে ভিন্নতা দেখতে পাই।'

জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ ২০০৭ সালের ২৪ অক্টোবর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে রাজধানীর লালবাগ থানায় দুর্নীতির মামলা করে দুদক। শুনানি শেষে ২০০৮ সালের ২৭ এপ্রিল ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৭ এ মামলায় তাকে ১৩ বছরের কারাদণ্ড দেন।

ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাজি সেলিমের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি জ্ঞাত উৎসের বাইরে ১৬ কোটি ৬৫ লাখ টাকার অর্থ সংগ্রহ করেছেন।

নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের পর গত বছরের ৯ মার্চ বিচারপতি মো. মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি একেএম জহিরুল হক মৌখিকভাবে এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে নিম্ন আদালতের দেওয়া ১০ বছরের কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বহাল রাখা হয়।

তবে হাইকোর্ট নিম্ন আদালতের রায়ের অন্য একটি অংশ বাদ দিয়েছেন। হাজি সেলিমকে দুদকের কাছ থেকে সম্পদের প্রকৃত পরিমাণ লুকানোর অভিযোগে আরও ৩ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।

হাজি সেলিমের আপিলের পর দেওয়া রায়ে হাইকোর্ট আরও জানিয়েছিল, তার (হাজি সেলিমের) ২৭ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ বাজেয়াপ্ত অবস্থায় থাকবে।

গত ১০ ফেব্রুয়ারি এই মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন হাইকোর্ট। আদালত তাকে ৩০ দিনের মধ্যে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন। পূর্ণাঙ্গ রায় বিচারিক আদালতে পৌঁছার পর থেকে এই ৩০ দিন গণনা শুরু হয়।

হাজি সেলিমের আইনজীবী সৈয়দ আহমেদ রাজা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, গত ২৫ এপ্রিল পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি বিচারিক আদালতে পৌঁছেছে।

গত ৩০ এপ্রিল চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ড যান হাজি সেলিম। থাই এয়ারওয়েজের একটি উড়োজাহাজে আজ দুপুর সোয়া ১২টার দিকে তিনি দেশে ফিরেছেন।

এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, 'হাজি সেলিম জরুরি চিকিৎসার জন্য ব্যাংককে গিয়েছিলেন। আবার ফেরত চলে এসেছেন। আইনগতভাবে যেটুকু প্রশ্ন আসে, তিনি একজন সংসদ সদস্য, তিনি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আইনকে মাথায় রেখেই তিনি গিয়েছেন।'

তিনি আরও বলেন, হাইকোর্টে ভারডিক্ট হলে তার অফিসিয়াল রায় চলে আসে। ভারডিক্ট হয়েছিল, অফিসিয়ালি কিন্তু ওটা ইমপ্লিমেন্ট হওয়ার আগেই তিনি (হাজি সেলিম) গিয়েছেন আবার চলেও এসেছেন।

Comments

The Daily Star  | English
education in Bangladesh

As a nation, we are not focused on education

We have had so many reform commissions, but none on education, reflecting our own sense of priority.

14h ago