ভিন্ন দলের দুই রাজনীতিকের জন্য কি আইন সমান নয়?
দুর্নীতির মামলায় ১০ বছরের দণ্ড নিয়ে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হাজি মোহাম্মদ সেলিম শনিবার চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ড গেছেন।
ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাজি সেলিম আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের উপদেষ্টা।
একজন জনপ্রতিনিধি চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতেই পারেন, এ নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই, সেটা সঙ্গতও নয়। তবে হাজি সেলিমের ক্ষেত্রে প্রশ্ন ওঠে, কারণ তিনি দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত।
দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের মামলায় ২০০৮ সালে ঢাকার একটি আদালত হাজি সেলিমকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। সেই সঙ্গে তাকে ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। জ্ঞাত আয় বহির্ভূত ১৪ কোটি ৬৫ লাখ টাকা সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে এই মামলা করা হয়েছিল।
গত বছরের ৯ মার্চ হাইকোর্ট তার সাজা বহাল রেখে রায় দেন। সেই সঙ্গে রায় পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে তাকে নিম্ন আদালতে গিয়ে আত্মসমর্পণ করার আদেশ দেওয়া হয়। রায়ে বলা হয়, আত্মসমর্পণ না করলে তার বিরুদ্ধে আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করতে পারবে।
এই রায়ের ফলে হাজি সেলিমের সংসদ সদস্য পদও খারিজ হওয়ার কথা ছিল।
সংবিধানের ৬৬ (২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কোনো আইনপ্রণেতা নৈতিক স্খলনজনিত ফৌজদারি অপরাধে দুই কিংবা ততোধিক বছর কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে সংসদ সদস্য থাকার যোগ্যতা হারান এবং মুক্তি পাওয়ার পর ৫ বছর পর্যন্ত তিনি আর সংসদ সদস্য হওয়ার যোগ্য বিবেচিত হন না।
এর পরও হাজি সেলিম সংসদ সদস্য আছেন। তার আইনজীবী আহমেদ রাজা এর আগে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, তার মক্কেলের সংসদ সদস্য পদ বহাল থাকবে, কারণ এটি এখনো সর্বোচ্চ আদালতের বিচার্য বিষয়।
তবে ভিন্ন একটি রাজনৈতিক দলের একজন রাজনীতিকের ক্ষেত্রে ঘটনাটি সম্পূর্ণ ভিন্ন।
দুইবারের প্রধানমন্ত্রী বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে দেওয়া হয়নি।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়াকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। সেদিনই তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। পরে সে বছরই হাইকোর্ট তার সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করেন।
খালেদা জিয়া ৭৭৬ দিন কারাগারে কাটিয়েছেন।
করোনা মহামারির মধ্যে কিডনি ও লিভারের রোগে আক্রান্ত খালেদা জিয়া ২০২০ সালের ২৫ মার্চ শর্ত সাপেক্ষে কারাগার থেকে মুক্তি পান।
এক্ষেত্রে প্রধান শর্ত রাখা হয়, খালেদা জিয়া ঢাকায় তার বাসায় অবস্থান করবেন এবং তিনি দেশের বাইরে যেতে পারবেন না।
গত বছর গুরুতর অসুস্থ হলে খালেদা জিয়ার দল, বিশিষ্ট নাগরিক, অন্যান্য রাজনৈতিক দল এবং তার পরিবারের পক্ষ থেকে একধিকবার সরকারের কাছে তাকে বিদেশ পাঠানোর দাবি জানানো হয়। তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করার পর এই দাবি জোরালো হয়। কিন্তু সরকারের দিক থেকে কোনো সাড়া আসেনি।
চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর আবেদন প্রত্যাখ্যান করে আইন মন্ত্রণালয়।
ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা উল্লেখ আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করা হয়েছে। এক্ষেত্রে শর্ত আছে যে তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না। এই শর্ত শিথিলের সুযোগ না থাকায় তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না।
এই ব্যাখ্যা মানলে ১০ বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত হাজি সেলিমের বিদেশ যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে।
এ ছাড়াও ১৪ বছর আগে বিচারিক আদালতে হাজি সেলিমের দণ্ড হলেও এখন পর্যন্ত তাকে কারাগারে যেতে হয়নি। অন্যদিকে খালেদা জিয়ার মামলার রায় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাকে জেলে পাঠানো হয়।
তাহলে কি রাজনৈতিক মতাদর্শের ভিন্নতার কারণে আইনের প্রয়োগও ভিন্ন? এখানে কি বাংলাদেশের সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদে বর্ণিত--সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী—এর ব্যত্যয় হচ্ছে না?
Comments