শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টের বাসভবনে ঢুকে পড়েছেন বিক্ষোভকারীরা
শ্রীলঙ্কার বাণিজ্যিক রাজধানী কলম্বোতে অবস্থিত প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের বাসভবনে ঢুকে পড়েছেন বিক্ষোভকারীরা। বিক্ষোভ শুরুর আগেই প্রেসিডেন্টকে নিরাপত্তার জন্য সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
ফলে এক নজিরবিহীন অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সঙ্কটে পড়েছে দেশটি।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদন মতে, আজ শনিবার অর্থনৈতিক সংকটে জর্জরিত দ্বীপ রাষ্ট্রটিতে সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে জোরালো সরকার বিরোধী বিক্ষোভের এক পর্যায়ে বিক্ষোভকারীরা পুলিশী ব্যারিকেড ভঙ্গ করে রাষ্ট্রপতির বাসভবনের ভেতরে ঢুকে পড়েন।
স্থানীয় টিভি চ্যানেল নিউজফার্স্টের প্রচারিত ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, কয়েকজন হেলমেট পরিহিত বিক্ষোভকারী শ্রীলঙ্কার পতাকা হাতে বাসভবনের ভেতরে ঢুকে গেছেন।
২ কোটি ২০ লাখ মানুষের দেশ শ্রীলঙ্কা ভয়াবহ বৈদেশিক মুদ্রা সঙ্কটে ভুগছে। ফলে দেশটিতে জরুরি ওষুধ, জ্বালানী ও খাদ্য আমদানির ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়েছে।
দেশের মানুষ মূলত এই দুর্দশার জন্য প্রেসিডেন্ট গোতাবায়াকে রাজাপাকসেকেই দায়ী করে। মার্চ মাস থেকে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের মাধ্যমে দেশের নাগরিকরা তার পদত্যাগ দাবি করে এসেছে। কিন্তু তিনি এতে কর্ণপাত করেননি।
ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহের উদ্যোগে আদালতের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির নির্বাহী ক্ষমতা খর্ব করা হয়েছে।
আজ ব্যতিক্রমধর্মী বিক্ষোভে হাজারো উত্তেজিত মানুষ রাষ্ট্রপতির বাসভবনের কাছাকাছি এসে গোতাবায়ার বিরুদ্ধে শ্লোগান দিতে থাকে।
শ্রীলঙ্কার সংবাদ মাধ্যম ডেইলি মিররের প্রতিবেদন মতে, পুলিশ জল কামান, কাঁদানে গ্যাস ও ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। তবে এতে কাজ হয়নি। বিক্ষোভকারীরা রাজাপাকসের বাড়িটিকে চারপাশ দিয়ে ঘিরে ফেলতে উদ্যত হন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, উত্তেজিত জনতা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙ্গে রাজাপাকসের বাড়ির দিকে এগিয়ে যায় এবং এক পর্যায়ে তারা বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে।
প্রতিবেদন মতে, বিক্ষোভ শুরুর আগেই গোতাবায়াকে তার বাসভবন থেকে অজ্ঞাত স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। প্রতিরক্ষা বিভাগের উচ্চপর্যায়ের এক সূত্রের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, প্রেসিডেন্টকে নিরাপত্তার জন্য সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
জ্বালানীর অভাবে চলমান পরিবহন সঙ্কটের মাঝেও বিক্ষোভকারীরা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাস, ট্রেন ও ট্রাকে করে কলম্বো এসে পৌঁছান।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে দেশের জনগণের মধ্যে অসন্তোষ অনেক বেড়েছে। এর পেছনে মূল কারণ বিদেশ থেকে জ্বালানী তেলের চালান আসা বন্ধ হওয়া, স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং শুধুমাত্র অত্যাবশ্যক প্রয়োজনের ক্ষেত্রে পেট্রোল ও ডিজেলের রেশনিং ব্যবস্থা চালুর সিদ্ধান্ত।
৩৭ বছর বয়সী সামপাথ পেরেরা পেশায় জেলে। তিনি ৪৫ কিমি দূরে অবস্থিত নেগোমবো শহর থেকে বাসে করে বিক্ষোভে যোগ দেওয়ার জন্য কলম্বো এসেছেন।
পেরেরা রয়টার্সকে বলেন, 'আমরা বারবার গোতাকে (গোতাবায়া) বলেছি বাড়ি ফিরে যেতে, কিন্তু সে এখনও ক্ষমতা আঁকড়ে পড়ে আছে। সে আমাদের কথা না শোনা পর্যন্ত আমরা থামবো না।'
পেরেরার মত আরও লাখো মানুষ ধারাবাহিক জ্বালানী সঙ্কট ও ৫৪ দশমিক ৬ শতাংশ মূল্যস্ফীতির বিরূপ প্রভাবের শিকার হয়েছেন।
রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে শ্রীলঙ্কার ৩ বিলিয়ন ডলারের তহবিল পাওয়ার আলোচনায় অচলাবস্থা দেখা দিতে পারে বলে বিশ্লেষকরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
Comments