‘তালেবানরা প্রতিশ্রুতি মানলে দেশটিতে স্থিতিশীলতা আসতে পারে’
আফগানিস্তানে তালেবানদের ক্ষমতা দখল সমগ্র বিশ্ব ও আঞ্চলিক রাজনীতিকে নাড়া দিয়েছে। আগামী কয়েকদিনের ঘটনাপ্রবাহ কী হতে পারে, সেটি এখন বিশ্বজুড়ে আলোচিত হচ্ছে। সার্বিক পরিস্থিতির বিষয়ে সম্প্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক শাহাব এনাম খানের সঙ্গে কথা বলেছে দ্য ডেইলি স্টার।
দ্য ডেইলি স্টার: কেন আফগান নিরাপত্তা বাহিনী তালেবানদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারল না?
শাহাব এনাম খান: তালেবানরা নানামুখী কৌশল অবলম্বন করেছে। যার মধ্যে সামরিক, বেসামরিক ও কূটনৈতিক উদ্যোগ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এ ছাড়াও, আন্তর্জাতিক বাহিনীর সহায়তা ছাড়া এমনকি ছোট আকারের সংঘাতের সঙ্গে মোকাবিলা করার মতো সক্ষমতাও ছিল না আফগানিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর। আফগানিস্তান পুনর্গঠনের দায়িত্বে নিয়োজিত বিশেষ মহাপরিদর্শক তার প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোতে উল্লেখ করেছেন, আফগান নিরাপত্তা বাহিনীতে গুণগত মানের দিক দিয়ে তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি। সে কারণে তালেবানরা আবারও সংগঠিত হওয়ার পর নিরাপত্তা বাহিনী কিংবা সাধারণ জনগণের কাছ থেকে কোনো ধরনের বাধার সম্মুখীন হয়নি।
ডেইলি স্টার: বর্তমান তালেবানদের সঙ্গে আগে ক্ষমতায় থাকা তালেবানদের কি কোনো পার্থক্য আছে?
শাহাব খান: আগে পশতুন সম্প্রদায়ের সদস্যরা তালেবান বাহিনীতে আধিপত্য বিস্তার করত। এরপর ২০১৪ সালে তারা একটি আলোচনা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিজেদের সব গোত্রের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন হিসেবে নতুন করে ব্র্যান্ডিং করে এবং তাজিক, শিয়া, হাজারা ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের সদস্যদের দলে অন্তর্ভুক্ত করে। এ কারণে এখন তালেবান বাহিনীর নেতাদের মধ্যে আমরা বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের দেখতে পাই।
তবে, তালেবানদের জন্যে সবচেয়ে বড় চিন্তার বিষয় হচ্ছে দলের নেতাদের এই বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীর সদস্যদের মধ্যে একতা বজায় রাখা।
ডেইলি স্টার: তালেবানরা ক্ষমতায় থাকলে আফগান জনগণের ভবিষ্যৎ কেমন হতে পারে?
শাহাব খান: যদি তালেবানরা (আলোচনার সময়) বেইজিং অথবা ওয়াশিংটনের কাছে এবং আফগান জনগণকে দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলো মেনে চলে, তাহলে দেশটিতে স্থিতিশীলতা আসতে পারে। তবে, যদি তারা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে এবং ২০১৪ সালের আগের মতো জঙ্গি মতবাদ অবলম্বন করে, তাহলে সেটি আফগান ও সমগ্র অঞ্চলের জন্যেই খারাপ হবে। আমাদেরকে আরও কয়েক সপ্তাহ অপেক্ষা করে দেখতে হবে যে, কাবুলে কী হয়।
এখন পর্যন্ত কাবুলে উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো কোনো রক্তপাতের ঘটনা ঘটেনি। বিমানবন্দরের ঘটনাটি ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে ঘটেছে। কিছু তালেবান ঘরে ঘরে গিয়ে জিজ্ঞেস করেছে সেখানে কোনো অস্ত্র কিংবা সরকারি যানবাহন আছে কি না। কিন্তু, আমরা এখনো তালেবানের পক্ষ থেকে গানিপন্থি কিংবা পশ্চিমপন্থিদের বিরুদ্ধে বড় আকারের প্রতিশোধমূলক আচরণের কোনো প্রমাণ পাইনি। এই পরিস্থিতির পরিবর্তন হতে পারে অবশ্যই। কিছু লুটপাট ও ডাকাতির ঘটনা ঘটতে পারে, যেটি ক্ষমতার পটপরিবর্তনের সময় কখনো কখনো ঘটে থাকে। তবে, আফগানদের মধ্যে তালেবানের কঠিন পন্থা ফিরিয়ে আনার ভয়টি বেশ ভালোভাবেই রয়েছে।
তালেবানদের ক্ষমতায় ফিরে আসা প্রসঙ্গে নারীদের অধিকারের বিষয়টি একটি বড় উদ্বেগের ব্যাপার। এটি এমন একটি বিষয়, যেটিকে পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। নারীদের ক্ষমতায়ন ছাড়া প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব নয়।
ডেইলি স্টার: এই ঘটনাটি বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক রাজনীতিতে কী ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে?
শাহাব খান: এটি একটি গেম-চেঞ্জিং ঘটনা। কারণ, দুটি ভিন্ন ভিন্ন মৈত্রী গঠিত হয়েছে। একটি হচ্ছে বেইজিং-কাবুল-ইসলামাবাদ। আরেকটি হচ্ছে তেহরান-আঙ্কারা-কাবুল। পাশাপাশি দিল্লি ও ঢাকারও বড় ভূমিকা রয়েছে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। যেহেতু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ অঞ্চলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ রাজনৈতিক নেত্রী, তিনি সার্ককে আবারও চালু করতে পারেন। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর জন্যে কাবুলকে ঘিরে আঞ্চলিক সহযোগিতা আবারও চালু করার জন্যে এটি একটি বড় সুযোগ। বাংলাদেশ বহুপাক্ষিকতা ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতায় দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, যেটি জঙ্গিবাদকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্যে প্রয়োজন। এ কারণে বাংলাদেশ এই উদ্যোগে নেতৃত্ব দিতে পারে।
ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান
Comments