বঙ্গবন্ধুর কীর্তির প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে গবেষণা করেছি

অমর একুশে বইমেলা শেষের দিকে। এখনো প্রতিদিন মেলায় আসছে নতুন বই। এর মধ্যে পাঠকসমাবেশ থেকে প্রকাশ হয়েছে গবেষক ড. সুনীল কান্তি দের 'বঙ্গবন্ধুর দৈনন্দিন জীবন ও তাঁর অনুসারীগণ, 'বঙ্গবন্ধু মানিক মিয়া সম্পর্ক' । তিনি দীর্ঘদিন মুক্তিযুদ্ধ এবং বঙ্গবন্ধু নিয়ে কাজ করছেন। নতুন বই ও নিজের গবেষণা নিয়ে কথা বলেছেন দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে।

বঙ্গবন্ধু নিয়ে কাজ করেছেন দীর্ঘদিন। তার কোন বিষয়টা আপনাকে প্রেরণা দিয়েছে, যা কাজে  বাধ্য করছে? 
সুনীল কান্তি দে : বাধ্য হয়েছি, না বলে বলা উচিত দায়বদ্ধতা। বঙ্গবন্ধু সারাজীবন সাধারণ মানুষের জন্য ভেবেছেন, কীভাবে পাকিস্তানি শোষণ নির্যাতন থেকে বাঙালিকে রক্ষা করা যায়। যার জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করতে গিয়ে শাসক গোষ্ঠীর, নির্যাতন, জেল জুলুমের স্বীকার হয়েছেন। তিনি সাধারণ মানুষের পালস্ বুঝতেন। তাই তার বক্তৃতা-বিবৃতিতে সাধারণ মানুষের কথাই উঠে এসেছে। তরুণ বয়সে মুসলিম লীগের সাধারণ কর্মী থেকে আওয়ামী লীগের তৎকালীন নেতাবৃন্দকে ছাপিয়ে প্রধান জাতীয় নেতায় পরিণত হন। সর্বোপরি ধাপে ধাপে আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে সকল স্তরের বাঙালিদের একসূত্রে গেঁথে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য উদ্বুদ্ধ করেছেন। এখানেই তিনি অপ্রতিদ্বন্দী।

বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবার পরিজনকে হত্যা করে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলার যে ষড়যন্ত্র করেছিল এবং তার প্রতিবাদস্বরূপ ও কীর্তির প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে গবেষণা করেছি। 

আবুল মনসুর আহমদ, মানিক মিয়া  ও বঙ্গবন্ধু পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়া ভালো ছিল। ৩জন নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী? 

সুনীল কান্তি দে :  আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাকালে আবুল মনসুর আহমদ ও বঙ্গবন্ধু একসঙ্গে কাজ করেছেন। যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন ও পরবর্তীতে পূর্ব-বাংলায় আওয়ামী লীগ সরকারে আবুল মনসুর ও বঙ্গবন্ধু একসঙ্গে মাঠ থেকে রাজনীতি করেছেন। দুইজন জেল জুলুমের স্বীকার হয়েছে। তবে ১৯৬৩ সালে এন, ডিঃ এফ থেকে আওয়ামী লীগের পূর্ণজীবন নিয়ে দুইজনের মধ্যে মতভেদ দেখা দেওয়ায় আবুল মনসুর আহমদ আওয়ামী লীগ থেকে বের হয়ে যান। তবে পরবর্তীতে দুইজনের রাজনৈতিক ঘনিষ্ঠতা না থাকলেও ব্যক্তিগত সম্পর্ক ভালো ছিল বলে জানা যায়। 

মানিক মিয়ার সাথে বঙ্গবন্ধুর সম্পর্ক অনেকটা সহোদর ভাইয়ের মতো ছিল। বঙ্গবন্ধু মানিক মিয়াকে বড় ভাইয়ের মতো শ্রদ্ধা করতেন। আন্দোলন সংগ্রামে তার পরামর্শ নিতেন। তবে সকল সময়ে দুইজন সকল বিষয়ে একমত হতেন তাও নয়। যেমন যুক্তফ্রন্ট করার বিষয়ে প্রথম দিকে বঙ্গবন্ধু সম্মত ছিলেন না। কারণ বঙ্গবন্ধু সারা পূর্ববঙ্গ ঘুরে সভা সমিতি ও বিভিন্ন দলীয়-আওয়ামী লীগের শাখা ও কর্মী সৃষ্টি করে বুঝতে পেরেছিলেন আওয়ামী লীগ একাই মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে জনমত গড়তে সক্ষম। তবে মানিক মিয়া ও তৎকালীন অন্যান্য নেতাদের পরামর্শে যুক্তফ্রন্ট করতে সম্মত হয়েছিলেন। এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু তাঁর 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী' তে বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন। মানিক মিয়ার ইত্তেফাককে প্রতিষ্ঠা ও অর্থনৈতিক সাহায্য সহযোগিতা করতে বঙ্গবন্ধু ছিলেন অগ্রণী। মানিক মিয়াকে যে সমস্ত চিঠিপত্র বঙ্গবন্ধু লিখেছেন আমার বইতে বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যাবে। 

বঙ্গবন্ধু তার সমকালে আওয়ামী লীগের অন্যান্য নেতাদের থেকে মানিক মিয়াকে বেশী বিশ্বাস করতেন। তাই ১৯৬২ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে তথা বাংলাদেশকে স্বাধীন করার বিষয়ে সাহায্য চেয়ে ভারতের তৎকালীন জহরলাল নেহেরুকে যে চিঠি লিখেছিলেন সে বিষয়ে পরামর্শ ও গোপন সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল ইত্তেফাক অফিসে মানিক মিয়ার উপস্থিতিতে। এ সভায় উপস্থিত ঢাকার নিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশনের রাজনৈতিক কর্মকর্তা শশাঙ্ক শেখর ব্যানার্জী তার মাধ্যমে চিঠি আদান-প্রদান হয়। 

বঙ্গবন্ধুর মানস গঠনে কার ভূমিকা বেশি আছে, আপনার গবেষণা বলে? 

সুনীল কান্তি দে : বঙ্গবন্ধুর মানস গঠনে নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতিতে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ, আবুল কাশেম ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এবং সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রামে মাস্টারদা সূর্য সেন ও নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু ভূমিকা অনস্বীকার্য বলে আমি মনে করি। 

শতবর্ষে অনেক বই বের হয়েছে। তাকে নিয়ে আপনার পড়া নির্বাচিত কিছু বই সম্পর্কে বলবেন? 

সুনীল কান্তি দে : শতবর্ষ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে প্রচুর বই প্রকাশিত হয়েছে। সকল বই পড়া তো সম্ভব হয়নি। কাজেই কোনটা রেখে কোনটা বলি, নির্বাচিত বই কোনগুলো তাও চিহ্নিত করা দুষ্কর। কারণ আমার পড়ার বাইরেও প্রচুর বই রয়ে গেছে। তবে এটা বলা যায় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যে সংখ্যক বই বের হয়েছে পৃথিবীর আর কোন জাতির পিতা বা জাতীয় নেতার সম্পর্কে এতো বই প্রকাশিত হয়েছে বলে মনে হয় না।

পাঠক তৈরিতে বইমেলা কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে?

সুনীল কান্তি দে : বইমেলা লেখক, পাঠক ও প্রকাশকদের মিলনমেলা। সারাবছর অপেক্ষায় থাকে বই মেলার জন্য। পাঠকদের আগ্রহের কথা মাথায় রেখে তরুণ-প্রবীণ লেখকদের নিয়ে প্রকাশকদের থাকে আলাদা প্রস্তুতি। বিচিত্র রকমের বইপত্র দিয়ে প্রকাশকরা বইমেলায় উপস্থিত হয়। পাঠকরা তাদের নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী বই কেনেন। পাঠকরা পরিচিত হন দেশের সমাজ, সংষ্কৃতি রাজনীতির সঙ্গে। কাজেই বইমেলা পাঠক তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। 

Comments

The Daily Star  | English

India’s fencing along border ‘unauthorised’

Dhaka has told New Delhi that such activities will hurt bilateral ties

11h ago