নোয়াখালীতে ‘গণধর্ষণ’: ‘নির্দেশদাতাকে’ বাদ দিয়ে ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা

স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

নোয়াখালীর সুর্বণচর উপজেলায় গত ৩১ ডিসেম্বর ৪ সন্তানের জননীকে গণধর্ষণ অভিযোগের ঘটনায় ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

কিন্তু, অভিযুক্তদের তালিকায় সাবেক এক ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। যদিও ওই নারী অভিযোগ করেছিলেন যে, ‘ধানের শীষে’ ভোট দেওয়ায় ওই ব্যক্তি তার সহযোগীদের তাকে ধর্ষণ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

ভুক্তভোগী নারীর স্বামী- যিনি ১ জানুয়ারি মামলাটি করেছিলেন- আমাদের সংবাদদাতাকে জানান, পুলিশ প্রথমে ঘটনার বিবরণী (এফআইআর) লিখে নেয় এবং পরে সেখানে তাকে সই করতে বলে।

গতকাল দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, “আমি নিরক্ষর মানুষ... সেখানে কী লেখা হয়েছে তা আমি পড়তে পারিনি। আমি শুধু সই করে দিয়েছি।”

নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৩৫ বছরের ওই নারী গত ৩১ ডিসেম্বর অভিযোগ করেছিলেন, নির্বাচনে বিএনপি’র ধানের শীষ প্রতীকে ভোট দেওয়ায় রুহুল আমীনের ১০ থেকে ১২ জন সহযোগী তাকে ধর্ষণ করে।

তবে, সুবর্ণচর আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক হিসেবে পরিচয়দানকারী রুহুল আমীন এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

ওই নারীর স্বামী গতকাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, পরিদর্শক (তদন্ত) মো. ইব্রাহিম খলিলের নেতৃত্বে একদল পুলিশ সদস্য ৩১ ডিসেম্বর সকাল ৯টার দিকে তাকে ও তার ছেলেকে চর জব্বার থানায় নিয়ে আসে।

তিনি বলেন, “আমি পুলিশকে বলেছি যে, ধানের শীষে ভোট দেওয়ায় চর জুবিলী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য রুহুল আমীন তার সহযোগীদেরকে আমার স্ত্রীকে ধর্ষণের নির্দেশ দেয়।”

“কিন্তু, মামলার বিবরণীতে পুলিশ রুহুল আমীনের নাম ও ধর্ষণের কারণ কোনোটিই উল্লেখ করেনি,” অভিযোগ করেন তিনি।

এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ইব্রাহিমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, অভিযুক্তরা সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য রুহুল আমীনের সমর্থক বলে মামলার বাদী তাদেরকে জানিয়েছেন।

তাহলে মামলার বিবরণীতে রুহুলের নাম নেই কেন?- জানতে চাইলে ইব্রাহিম দাবি করেন যে, অভিযোগকারী নিজেই রুহুলের নাম উল্লেখ করেননি।

এ ঘটনায় ৩১ ডিসেম্বর রাতে বাদশা আলম নামে এক অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

আরও পড়ুন:

ধানের শীষে ভোট দেওয়ায় ৪ সন্তানের মাকে ‘আওয়ামী লীগ কর্মীদের গণধর্ষণ’

ওই পুলিশ কর্মকর্তা আরও জানান, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে দায়ের করা সেই মামলায় উল্লেখিত অভিযুক্তদের সবাইকে গ্রেপ্তার করার চেষ্টা চলছে। অন্য অভিযুক্তরা হলেন- মো. সোহেল (৩৫), হানিফ (৩০), স্বপন (৩৫), চৌধুরী (২৫), বেচু (২৫), বাসু (৪০), আবুল (৪০), মোশাররফ (৩৫) এবং সালাউদ্দিন (৩৫)। এরা সবাই সুবর্ণচরের মধ্য বাইগ্গা গ্রামের বাসিন্দা।

মামলার বিবরণীতে বলা হয়েছে, গত ৩১ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ১২টার দিকে প্রতিবেশী সালাউদ্দিন নামের এক লোক অভিযোগকারীর বাড়িতে আসে এবং তার নাম ধরে ডাকে। এ সময় তার স্ত্রী দরজা খুলে দিলে অভিযুক্তরা জোরপূর্বক ঘরে ঢুকে পূর্বশক্রতার জেরে তাকে ও তার স্ত্রীকে মারতে থাকে। একপর্যায়ে তারা অভিযোগকারী ও তার সন্তানদের হাত-পা ও মুখ বেঁধে ফেলে। পরে তার স্ত্রীকে একটি পুকুরপাড়ে নিয়ে গণধর্ষণ করে।

এছাড়াও, অভিযুক্তরা চলে যাওয়ার আগে অভিযোগকারীর বাড়িঘর ভাঙচুর করে বলেও মামলার বিবরণীতে উল্লেখ করা হয়েছে।

এরপর, অভিযোগকারী নিজেকে বাঁধামুক্ত করেন এবং স্ত্রীকে পার্শ্ববর্তী একটি পুকুরপাড় থেকে উদ্ধার করেন।

নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক মো. খলিল উল্লাহ দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, ওই নারীর স্বাস্থ্য পরীক্ষার রিপোর্টটি এখনও হাতে আসেনি।

এদিকে, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক ১ জানুয়ারি বলেছেন, এ ঘটনায় নির্বাচন কমিশন (ইসি) কোনো পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হলে তারা নিজেরাই তদন্ত করবে।

এছাড়াও, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশসহ ৪০টি মানবাধিকার সংগঠনের একটি প্লাটফর্ম এ ঘটনার নিন্দা ও জড়িত ব্যক্তিদের যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে। ভুক্তভোগী ও তার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিতেরও দাবি করেছে সংগঠনগুলো।

আরও পড়ুনঃ নোয়াখালীতে গণধর্ষণ মামলায় আরও ২ আসামি গ্রেপ্তার​

Comments

The Daily Star  | English
Dhaka University JCD Leader Shahriar Alam Shammo Killed

3 arrested over killing of DU JCD leader near Suhrawardy Udyan

Masud Alam, deputy commissioner of Ramna Division Police, said the arrestees are outsiders

15m ago