গত ৪৮ বছর ধরে প্রতিদিন একটি করে গাছ লাগিয়েছেন এই ব্যক্তি

এখানে যেটা করতে দেখা যাচ্ছে এটা তার নিত্যদিনের কাজ। গত ৪৮ বছর ধরে প্রতিদিন অন্তত একটি করে গাছ লাগিয়েছেন আব্দুল সামাদ শেখ। ছবি: স্টার

মানুষের রাতে ঘুম না হওয়ার নানা কারণ থাকতে পারে। কিন্তু ফরিদপুরের ভাগনডাঙ্গা গ্রামের রিকশাচালক আব্দুল সামাদ শেখের ঘুম না হওয়ার একটাই কারণ; সেটা হলো সেদিন হয়তো কোন গাছ লাগাতে পারেননি তিনি। ‘গাছ সামাদ’ নামে পরিচিত এই ব্যক্তি গত ৪৮ বছর ধরে প্রতিদিন একটি করে গাছ লাগিয়েছেন। বলতে গেলে গাছ লাগানোই তার নেশা।

তিনি বলেন, “একটা গাছ লাগাতে না পারলে সারারাত আমার ঘুম হয় না। ১২ বছর বয়স তখন থেকে এই কাজ করছি।” এখন তার বয়স ৬০ বছর।

বছরে ৩৬৫ দিন থাকে। ৪৮ বছরে অধিবর্ষের ১২ দিন যোগ করলে মোট ১৭ হাজার ৫৩২ দিন হয়। অন্তত এই সংখ্যক গাছ লাগিয়েছেন সামাদ।

“বেশিরভাগ সময়ই আমি সরকারি জমিতে গাছ লাগাই যেন পরবর্তীতে গাছ কেউ কেটে ফেলতে না পারে।” ফরিদপুর সদর, চরভদ্রাসন ও সদরপুর উপজেলাতে সরেজমিনে তার কথার প্রতিফলন দেখা যায়। এসব এলাকার বিভিন্ন সরকারি অফিস ও মসজিদ প্রাঙ্গণের অনেক গাছই সামাদের লাগানো।

শুধু গাছ লাগিয়েই সামাদের কাজ শেষ হয় না। সেসব গাছের গোঁড়ায় পানিও দেন তিনি। তিনি বলেন, “কাউকে গাছ কাটতে দেখলেই আমি বাধা দেই ও বকাবকি করি। আমি প্রাণীসহ সব প্রকৃতির সবকিছুকেই ভালোবাসি, বিশেষ করে গাছ।”

ফরিদপুর জেলা প্রশাসকের অফিসের দুইটি কুঁড়েঘরে পাঁচ সদস্যের পরিবার নিয়ে বসবাস করেন সামাদ। তার নিজের কোন জমি নেই। “রিকশা চালিয়ে প্রতিদিন ১০০ টাকা আয় হয় আমার।” বলেন তিনি। “এই টাকা দিয়ে পরিবারের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনার পর ফরিদপুর হর্টিকালচার সেন্টার থেকে অন্তত একটা গাছের চারা কিনি।”

পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে জানা যায়, গাছের প্রতি তার এতো ভালোবাসা যে দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার চেয়ে গাছের চারা কেনা কখনও কখনও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। তার স্ত্রী জর্না বেগম (৫০) বলেন, “তার আয় খুব বেশি না। পরিবারের দৈনিক খরচ মেটাতে হয়। মাঝে মধ্যে আমি তাকে গাছ লাগাতে নিষেধ করলেও তিনি শোনেন না। গাছের প্রতি তার ভালোবাসা কিছুতেই থামে না।”

তবে ছেলে মো কুতুবউদ্দিন (৩০) বাবার কাজ সমর্থন করেন। “আমি আমার বাবাকে কখনোই গাছ লাগাতে নিষেধ করিনি। সমাজের জন্য ভালো কাজ করছেন তিনি।”

প্রতিবেশী সফিক মোল্লা (৩০) দীর্ঘদিন থেকে সামাদকে গাছ লাগাতে দেখছেন। তিনি বলেন, “আমাদের এলাকায় প্রতিদিনই কোন না কোন জায়গায় তাকে গাছ লাগাতে দেখি।” স্থানীয় আরেক ব্যক্তি মো আবুল কালাম হাওলাদার (৫৫) বলেন, “সামাদ আমাদের এলাকার একজন আদর্শ নাগরিক। তার কাজ আমাকে সত্যিই অনুপ্রাণিত করে।”

এদের কথার সাথেই সুর মেলালেন আরেক প্রতিবেশী মো সাকান্দার আলি (৬০)। তিনি বলেন, সামাদ শুধু গাছ ভালোবাসে তা নয়। সে মানুষকেও সহায়তা করে। তার কাছে সাহায্য চাইলে তা করার যথাসাধ্য চেষ্টা করে সে। তার মত বিরল লোক আমাদের সমাজে খুব দরকার।”

ভাগনডাঙ্গা বাজারের দোকানদার মো ফিরোজ শেখ (৪৫)বলেন, “আমাদের এলাকায় এমন অনেক বড় গাছ আছে যেগুলো অনেক আগে সামাদ লাগিয়েছিল। আমি ছোটবেলা থেকেই তাকে গাছ লাগাতে দেখছি।”

স্বাভাবিক কারণেই ফরিদপুর হর্টিকালচার সেন্টারে সামাদ একজন সুপরিচিত ব্যক্তি। বাগানের মালি শহীদ খান বলেন, “গত ২০ বছর থেকে এখানে কাজ করছি আমি। প্রতিদিন দেখি, এখান থেকে একটি করে চারাগাছ কিনে নিয়ে যান তিনি।”

হর্টিকালচার সেন্টারের পরিচালক কার্তিক চন্দ্র চক্রবর্তীও একই কথা জানান। সামাদ আসলে তাকে গাছের চারা নির্বাচনে সহায়তা করতে সেন্টারের সব কর্মচারীকে বলে রেখেছেন তিনি।

সামাদের ভাষায়, “ফল গাছের চারা লাগাতে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি আমি। এর মধ্যে কাঁঠাল আমার সবচেয়ে প্রিয়। আমি গাছ লাগাই কারণ ঈশ্বর এটা করতে বলেছেন।”

Click here to read the English version of this news

Comments

The Daily Star  | English

Jatrabari turns into battlefield as students clash

Students of three colleges clashed at Dhaka's Jatrabari today, turning the area into a battlefield

1h ago