তরুণদের প্রতি কীর্তিমানদের বার্তা

ডেইলি স্টারের ‘সেনটিনেল অব ফ্রিডম অব থট’ সম্মাননাপ্রাপ্তদের মধ্যে মঞ্চে উপস্থিত হামিদা হোসেন, ড. কামাল হোসেন, মুস্তাফা মনোয়ার, নূরজাহান বোস, রফিকুন নবী, অধ্যাপক রেহমান সোবহান, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, এবং শরিফা খাতুন। অসুস্থতাজনিত কারণে অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, আহমদ রফিক, বদরুদ্দীন উমর ও যতীন সরকার অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন না। ছবি: স্টার

প্রতিষ্ঠার ৩৩ বছরে পদার্পণে বুদ্ধিবৃত্তিক স্বাধীনতার প্রচার ও প্রসারে নিরলস কাজ করা ১২ কীর্তিমানকে 'সেনটিনেল অব ফ্রিডম অব থট' সম্মাননা দিয়েছে দ্য ডেইলি স্টার।

গতকাল শনিবার ঢাকার র‌্যাডিসন ব্লু হোটেলে আয়োজিত এক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে দেশের বুদ্ধিবৃত্তিক স্বাধীনতার পাটাতন তৈরিতে অগ্রগামী এবং চিন্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি অঙ্গীকারবন্ধ এই ১২ সূর্যসন্তানকে সম্মাননা দেওয়া হয়।

সম্মাননা পাওয়া জাতির এই ১২ জন সূর্যসন্তান তাদের কীর্তির মাধ্যমে সমাজে ইতিবাচক ও দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব রেখেছেন এবং এদের প্রত্যেকেই চিন্তার স্বাধীনতার নিরলস সমর্থক।

সম্মাননাপ্রপ্তরা হলেন— আলোকিত মানুষের স্বপ্নদ্রষ্টা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, ভাষা সংগ্রামী আহমদ রফিক, লেখক-গবেষক ও বামপন্থী রাজনীতিক বদরুদ্দীন উমর, মানবাধিকার ও শ্রম অধিকারকর্মী হামিদা হোসেন, শিক্ষাবিদ-প্রাবন্ধিক ও সাম্যবাদী তাত্ত্বিক যতীন সরকার, সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইনজীবী ড. কামাল হোসেন, বরেণ্য চিত্রশিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার, লেখক-সমাজকর্মী নূরজাহান বোস, 'টোকাই' চরিত্রের স্রষ্টা চিত্রশিল্পী রফিকুন নবী, কিংবদন্তি অর্থনীতিবিদ ও প্রখ্যাত বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক রেহমান সোবহান, শিক্ষাবিদ-লেখক অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, এবং শিক্ষাবিদ ও ভাষা আন্দোলনকর্মী শরিফা খাতুন।

তারা প্রত্যেকেই আজীবন মানুষের অধিকার রক্ষা এবং স্বাধীন চিন্তাধারার প্রচার ও প্রসারে কাজ করে গেছেন। পরিণত হয়েছেন জাতির পথপ্রদর্শনকারী বিবেক হিসেবে।

গতকালের আয়োজনে উপস্থিত থেকে সম্মাননা গ্রহণ করেন হামিদা হোসেন, ড. কামাল হোসেন, মুস্তাফা মনোয়ার, নূরজাহান বোস, রফিকুন নবী, অধ্যাপক রেহমান সোবহান, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ও শরিফা খাতুন।

তবে অসুস্থতাজনিত কারণে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন না অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, আহমদ রফিক, বদরুদ্দীন উমর ও যতীন সরকার।

সম্মাননা পাওয়ার পর উপস্থিত ৮ আলোর দিশারী তরুণ প্রজন্মের উদ্দেশ্যে কথা বলেন। স্মরণ করিয়ে দেন দেশ, সমাজ ও মানবতার প্রতি তাদের দায়িত্ব-কর্তব্যের কথা। তাদের সংক্ষিপ্ত বক্তব্যগুলো নিচে তুলে ধরা হলো-

হামিদা হোসেন

আমি মনে করি আমাদের সমাজ এখনকার তুলনায় অনেক আলাদা ছিল। এখনকার তরুণরা খুব ভালো করছে। আমি মনে করি ৮০ কিংবা ১৬- আমাদের সবার একটি সাধারণ লক্ষ্য আছে। সেটা হচ্ছে আমরা এমন একটি সমাজ গড়ে তোলার চেষ্টা করছি যেখানে আমরা ন্যায়বিচারে বিশ্বাস করি এবং তা সবার জন্য।

কামাল হোসেন

তরুণ প্রজন্মের প্রতি আমার বার্তা হলো, তারা সবক্ষেত্রে খুব ভালো করছে। তরুণ প্রজন্ম সমাজে অত্যন্ত মূল্যবান অবদান রাখছে। এটা অব্যাহত রাখতে হবে।

মুস্তাফা মনোয়ার

তরুণ প্রজন্ম বলে কিছু আছে কি না জানি না। আমরাও তরুণ। সুতরাং সব প্রজন্মের জন্য চিন্তার স্বাধীনতা আবশ্যক। চিন্তার স্বাধীনতা না থাকলে মানুষ মানুষ হয়ে ওঠে না।

নূরজাহান বোস

আমি মনে করি তরুণ প্রজন্মের উচিত বাক স্বাধীনতা, লেখার স্বাধীনতার জন্য লড়াই করা। আমি চাই তরুণ প্রজন্ম উঠে দাঁড়াক এবং স্বাধীনতার জন্য, দেশের জন্য লড়াই করুক। জীবন দিতে হলেও এটা করতে হবে। আমার বয়স ৮৫ বছর এবং আমি এখনো তাই মনে করি।

রফিকুন নবী

এমন কিছু করবে না যা দেশের ক্ষতি করে, জনগণ বা সমাজের ক্ষতি করে। নিজেকে সবার উপরে রাখার সংকল্প থাকতে হবে। সুচিন্তা লুকিয়ে রাখা যাবে না। এটা প্রকাশ করা উচিত।

রেহমান সোবহান

চিন্তার স্বাধীনতা এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা কারও উপহার নয়। এটি তখনই আসবে যখন তুমি সেই স্বাধীনতা প্রয়োগের জন্য তোমার অধিকার দাবি করবে। অর্থাৎ তুমি যদি পর্যাপ্তবার এটা করো, তবে তুমি স্বাধীনতা পাবে এবং কেউ এটি তোমার কাছ থেকে কেড়ে নিতে পারবে না।

মনে রাখবে, তোমাকে সবসময় কথা বলতে হবে এবং নিজেকে দৃঢ়ভাবে প্রকাশ করতে হবে। এভাবেই স্বাধীনতা অর্জিত হয়।

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

তরুণদের ৩টি জিনিস প্রয়োজন। প্রথমত, জ্ঞানের সাধনা, যা ছাড়া মানুষ বিকশিত হতে পারে না। দ্বিতীয়ত, সামাজিকীকরণ। কারণ মানুষ একা বিকশিত হতে পারে না। এই জ্ঞান অন্যদের কাছ থেকে অর্জন করতে হবে এবং ছড়িয়ে দিতে হবে।

আর বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের যে তৃতীয় জিনিসটি থাকা উচিত তা হলো- সাহস। আমি আশা করব, তোমাদের ভেতর এই ৩টি জিনিসের সমন্বয় ঘটবে।

শরিফা খাতুন

কেবল ব্যক্তি নয়। গোটা সমাজ মানুষের চিন্তার বিকাশের প্রক্রিয়ায় জড়িত।

শিক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি শিশু যাতে বই পড়তে পারে সেজন্য লাইব্রেরি থাকতে হবে। আমাদের এমন একটি পাঠ্যক্রম তৈরি করতে হবে যাতে প্রতিটি শিক্ষার্থী নিজেদের বিকাশ করতে পারে। এখানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর বড় ভূমিকা আছে।

Comments

The Daily Star  | English

7 colleges to continue operating under UGC until new university formed

Prof AKM Elias, principal of Dhaka College, to be appointed as the administrator

1h ago