ধর্ষণের ঘটনায় আরও থলের বেড়াল বের হয়ে আসছে!

​এখন আমরা অনেক অনিয়মের কাহিনী জানতে পারছি। দুজন নারীকে ধর্ষণের অভিযোগকে কেন্দ্র করে আমরা সমাজ, রাষ্ট্রের আরও অনেক নিয়ম কানুন লঙ্ঘিত হবার কথা জানতে পারছি।
বনানী ধর্ষণ মামলায় পাঁচজনকে আসামী করে অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ। ছবি: স্টার

এখন আমরা অনেক অনিয়মের কাহিনী জানতে পারছি। দুজন নারীকে ধর্ষণের অভিযোগকে কেন্দ্র করে আমরা সমাজ, রাষ্ট্রের আরও অনেক নিয়ম কানুন লঙ্ঘিত হবার কথা জানতে পারছি।

শুরু করলেন শুল্ক গোয়েন্দারা। তারা বনানীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন ছাত্রী ধর্ষণ মামলার এক অভিযুক্তের বাবার ‘ডার্টি মানি’র খোঁজে নেমে পড়লেন। তার বাবা ধনাঢ্য স্বর্ণ ব্যবসায়ী। রাজধানীতে তার অনেকগুলোর স্বর্ণের দোকান রয়েছে। ব্যবসায় কোনও শুল্ক ফাঁকি দিয়েছেন কিনা, স্বর্ণ ও হীরার গহনা যা তার দোকানগুলোতে বিক্রির জন্য প্রদর্শিত হচ্ছে এবং আরও যা প্রদর্শিত হচ্ছে না সেগুলোর বৈধ কাগজপত্র আছে কিনা- সেসব খতিয়ে দেখতে শুল্ক গোয়েন্দারা এখন গলদঘর্ম হচ্ছেন। তারা একটা শোরুমও নাকি তালা মেরে দিয়েছেন। অনেক স্বর্ণ জব্দ করেছেন। তাকে শুল্ক অধিদপ্তরে তলব করা হয়েছে; নানা প্রশ্নের জবাব দিতে হবে তাকে নিশ্চয়।

বনানীর যে হোটেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন ছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে সেই হোটেলের নাকি অনুমোদন নেই। মানে অনুমোদন ছাড়াই হোটেল নির্মাণ করা হয়েছে। তাহলে আরও কিছু অনিয়ম থাকতে পারে। সঙ্গতভাবেই প্রশ্ন আসে, অবৈধভাবে নির্মিত হোটেলে কিভাবে পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ দেওয়া হল?

প্রথমে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা তল্লাশি চালালেন ওই হোটেলে। তারা কিছু পেলেন না। শুল্ক গোয়েন্দারা অভিযান চালিয়ে ১০/১২ বোতল বিদেশি মদ উদ্ধার করলেন। বলা হচ্ছে হোটেলটিতে নাকি অবৈধ বার রয়েছে। এর মানে লাইসেন্স ছাড়াই তারা মদের ব্যবসা করছিলেন। হোটেল মালিককে তলব করা হয়েছে। শুল্ক গোয়েন্দারা তাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করবেন।

ইতোমধ্যে অনেক অনিয়মের কথা প্রকাশ পেয়েছে। আরও অনেক অনিয়মের কথা হয়তো জানা যাবে। ঘটনার সূত্রপাত হয়েছে ধর্ষণের অভিযোগ থেকে। যদি হাইপোথেটিক্যালি ভাবা হয়—ওই দুজন ছাত্রী ধর্ষিত না হতেন, বা ধর্ষিত হবার পর অভিযোগ না করতেন, তাহলে কি আজ আমরা এসব কথা জানতে পারতাম? অথবা কম বেশি আমরা জানি, কিন্তু এসব কথা আলোচনায় আসতো না। আমরা হয়তো নতুন করে ভ্যাট আরোপের ফলে কি কি জিনিসের দাম বাড়বে বা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বিচক্ষণ কর্মকর্তাদের মতে আদৌ দ্রব্যমূল্য বাড়বে কিনা সে সব নিয়েই আলোচনায় ব্যস্ত থাকতাম। নয়তো বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গত সপ্তাহে যে ‘ভিশন ২০৩০’ ঘোষণা করেছেন সে সব নিয়ে বিচার বিশ্লেষণ করতাম।

কিন্তু এখন ভ্যাট বৃদ্ধির প্রস্তাব বা খালেদা জিয়ার ‘দেশ গড়ার ভিশন’ কোনও আলোচনায় নেই। সবার দৃষ্টি ধর্ষণের দায়ে অভিযুক্তদের গ্রেফতার ও শুল্ক গোয়েন্দাদের ‘ডার্টি মানি’ খোঁজার অভিযানে। সাংবাদিক ভাই-বোনেরা আরও নতুন কিছু যোগ করছেন, যেমন ওই হোটেলটা অনুমোদনহীন। এই খবরগুলো কিন্তু সুখকর নয়। কারণ প্রত্যেকটা খবরে আমাদের দুর্বল ও ভঙ্গুর শাসন ব্যবস্থা প্রকাশ পাচ্ছে। যেমন ধরুন—শুল্ক গোয়েন্দারা কেন এত দিন ওই স্বর্ণ ব্যবসায়ীর ‘ডার্টি মানি’র খোঁজে অভিযান চালালেন না? তার দোকানের স্বর্ণালঙ্কারগুলোর বৈধ কাগজপত্র আছে কিনা সেটা এত দিন কি তারা যাচাই করেছেন?

আরও কিছু প্রশ্নের জন্ম নিয়েছে জনসাধারণের মনে। যেমন ধরুন—আরও স্বর্ণ ব্যবসায়ী আছেন রাজধানীসহ সারা দেশে, সেসব দোকানেও কি শুল্ক গোয়েন্দারা অভিযান চালাবেন? অভিযোগ আছে স্বর্ণের বাজার টিকে আছে চোরাচালানের মাধ্যমে দেশে আনা স্বর্ণের দ্বারা। বিমানবন্দরে যত অবৈধ স্বর্ণ আটক হয়, তার কত শত গুণ যে হাত গলিয়ে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা বেষ্টনী পার হয়ে চলে যায় সে সব খবর আমরা জানি?

আবার ধরুন, অবৈধভাবে হোটেল নির্মাণের কথা। রাজউক তাহলে কি করছে? চোখের সামনে অত বিশাল সুদৃশ্য একটা হোটেল গড়ে উঠলো আর রাজউক কর্মকর্তারা চেয়ে চেয়ে দেখলেন, তাদের বলার কিছু ছিলো না? আবার অমন একটা অবৈধ স্থাপনায় ওয়াসা, ডেসা, তিতাস—পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস সংযোগ দিয়ে দিলো চোখ বন্ধ করে? ওই হোটেলে নাকি অবৈধভাবে মদের ব্যবসা চলতো। তাহলে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কি ঘুমিয়ে ছিলো যে কিছু জানতো না?

সর্বোপরি, বনানী থানা পুলিশ কী করেছে? তারাও কি জানতো না যে ওই হোটেলে অবৈধভাবে মদের ব্যবসা চলে? সবার চুপ থাকার মানে হল যে কথা প্রচলিত আছে সেটাই সত্য— সবাই ম্যানেজ হয়ে গেছেন? টাকা শুধু কথা বলে না, টাকা কথা থামিয়েও দিতে পারে! তাহলে কি ওই ‘ডার্টি মানি’র ভাগ অনেকেই পেয়েছেন? গ্রেপ্তার হবার পরে একজন অভিযুক্ত ধর্ষক যে ভাষায় তার বাবার ক্ষমতার দাপটের কথা বলছে, এবং তার বাবাও যে ভাষায় কথা বলেছে তাতে জনমনে এমন ধারণার জন্ম হয়েছে যে তারা অনেক ক্ষমতাশালী; অনেক ক্ষমতাশালী লোকজনের সাথেই তাদের সখ্যতা রয়েছে। তবে কি ‘ডার্টি মানি’র ভাগ ক্ষমতাশালী কেউ কেউ পেয়েছেন?

ধর্ষণের অভিযোগ করতে গিয়েও দুই জন ছাত্রীকে থানায় হয়রানির শিকার হতে হয়েছে এবং তদন্ত পরিচালনা করতে নাকি পুলিশ নানাভাবে চাপের সম্মুখীন হচ্ছে- এমন অভিযোগ তাদের ক্ষমতার কথাই মনে করিয়ে দেয়।

সব ঘটনাগুলো একটা দুর্নীতিগ্রস্ত; অসুস্থ সিস্টেমের সাক্ষ্য বহন করে। যে সকল অনিয়ন অভিযোগের কথা শোনা যাচ্ছে সে সবের কি সুষ্ঠু তদন্ত হবে? ওই সকল অনিয়মের সঙ্গে যারা জড়িত ছিলেন বা আছেন তাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হবে? নাকি সব কিছু আগের মতই চলবে?

Comments

The Daily Star  | English

Five crisis-hit banks secure BB guarantee for liquidity

Five crisis-hit banks have obtained a Bangladesh Bank (BB) guarantee to avail liquidity support from the inter-bank money market, according to central bank officials.

5h ago