আমাদেরও সোনার খনি আছে!

​কথাটা অবিশ্বাস্য বটে, বাংলাদেশে সোনার খনি! তাও একটি নয়— তিন তিনটি সোনার খনি!
ছবি: রয়টার্স

কথাটা অবিশ্বাস্য বটে, বাংলাদেশে সোনার খনি! তাও একটি নয়— তিন তিনটি সোনার খনি!

ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং সিলেটে তিনটি বিমানবন্দর সোনার খনি হিসাবে পরিচিত হয়ে উঠছে! সবচেয়ে বড় খনি হলো রাজধানীর বিমানবন্দরটি। কেননা সবচেয়ে বেশি স্বর্ণ এখানেই পাওয়া যায়। অন্য দুটি খনিতে তুলনামূলক কম পাওয়া যায়। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী তারা গত চার বছরে তিনটি খনি থেকে এক টনের বেশি স্বর্ণ উদ্ধার করেছেন। মানে ২৭ মণ স্বর্ণ; প্রতি বছর গড়ে ছয় মণের কিছু বেশি! বেশ ভালো উৎপাদন!

এসব সোনা নাকি বিমানবন্দর পার হয়ে যাচ্ছিলো। চলে যাচ্ছিলো সাঁতার কেটে কেটে, নাকি ডুবে ডুবে, নাকি ভেসে ভেসে তা আমরা যারা সাধারণ মানুষ তাদের ভাবনার বাইরে। সব জানেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। তারা জানিয়েছেন কিভাবে ওই ২৭ মণ সোনা পার হয়ে যাচ্ছিলো। তারা যেতে দেননি। তারা ধরে ফেলেছেন, উদ্ধার করেছেন। সব সোনা কি ভেসে ভেসে আসে, নাকি আকাশে উড়ে উড়ে খনিতে আসে? যত সোনা আসে গোয়েন্দারা কি সব উদ্ধার করতে পারেন?

নাকি যতটা উদ্ধার হয় তার অনেক অনেক গুণ বেশি উদ্ধার হয় না? যেসব উদ্ধার হয় না সেগুলো কি খনিতে থেকে যায়, নাকি খনি থেকে অন্যরা অন্য কোথাও নিয়ে চলে যায়, মানে রপ্তানি হয়?

রাজধানীর বনানীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রী ধর্ষণ ঘটনায় একজন সোনা ব্যবসায়ীর ছেলে অভিযুক্ত হবার পর থেকে বাংলাদেশ সোনার প্রবেশাধিকার প্রসঙ্গটা আবার সামনে এসেছে। শুল্ক গোয়েন্দারা ধর্ষণে অভিযুক্তের বাপের নামকরা সোনার দোকানে হানা দিয়েছে। সোনার বৈধতা আছে কিনা তা যাচাই করছেন। কয়েকশো কেজি সোনা আটকও করেছেন। এই ঘটনা জানান দিচ্ছে যে সব অবৈধ সোনা বিমান বন্দরে আটক হয় না। ফাঁক ফোকর গলিয়ে বাজারে ঢুকে পরে, অলংকার হয়ে শো-রুমগুলোতে চকচক করে তাকিয়ে থাকে, পয়সাওয়ালা ক্রেতাদের নজর কাড়তে।

সারা দেশে অনেক সোনার দোকান রয়েছে। তাদের কাছে থাকা সোনার বৈধতা নিয়েও কি প্রশ্ন আছে? পত্রপত্রিকার খবর বলছে, বাংলাদেশে জুয়েলারি ব্যবসা নাকি পাচার হয়ে আসা সোনার উপর চলছে অনেক কয়েক দশক ধরে। গত তিন দশক যাবত নাকি এলসি খোলার মাধ্যমে সোনা আমদানি হয় না। তাহলে এত সোনা এলো কিভাবে?

বিশাল পরিমাণে সোনা নাকি পার্শ্ববর্তী দেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। তার মানে বাংলদেশকে  সোনা চোরাচালানের রুট হিসেবেও ব্যবহার করা হচ্ছে। পত্রিকার খবর অনুযায়ী ৩০টা সিন্ডিকেট চোরাচালানের সাথে জড়িত; তারা অঢেল পরিমাণ সোনা চোরাচালান করে। চোরাচালানের মাধ্যমে দেশের চাহিদা মেটাচ্ছে, আবার বিশাল পরিমাণ সোনা পার্শ্ববর্তী দেশে রপ্তানি করে তারা বৈদেশিক মুদ্রাও অর্জন করছে। তাহলে তো আমাদের খুশি হবারই কথা। কিন্তু আমরা খুশি নই কেন? কেন এসব নিয়ে প্রশ্ন উঠছে? আমাদের কিছু কর্মকর্তারা আর যারা ক্ষমতার আরও কাছাকাছি থাকেনা তারাও সেসবের ভাগ পাচ্ছেন বলে কি আমরা নাখোশ? নাখোশ না হয়ে আমরা কি খোশ হতে পারি না? এক সময় আমরা সবাই যদি ওই চোরাচালানের সুবিধাভোগী হতে পারি তাহলে সবার কপাল খুলে যাবে! ইতোমধ্যে আমাদের সার্বিক সিস্টেমকে দুর্নীতিপরায়ণ করতে সোনা চোরাচালান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বলে কি আমরা কষ্ট পেয়েছি?

তবে আশার কথা হলো আমাদের দেশপ্রেম এখনো অনেক সংবেদনশীল যে কারণে এসব অপকর্ম মানতে চাইছি না।

Comments

The Daily Star  | English

Five crisis-hit banks secure BB guarantee for liquidity

Five crisis-hit banks have obtained a Bangladesh Bank (BB) guarantee to avail liquidity support from the inter-bank money market, according to central bank officials.

5h ago