বাজেটে বড় কারখানাগুলো পেতে পারে বিশেষ সুবিধা: অর্থমন্ত্রী
বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ বাড়াতে সরকার বড় কারখানাগুলোকে উৎসাহিত করে রপ্তানি বাড়ানো এবং রেকর্ডসংখ্যক অভিবাসী শ্রমিককে বিদেশে পাঠানোর পরিকল্পনা করছে।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, 'বড় কারখানাগুলোতে সহায়তার ক্ষেত্রে আসন্ন বাজেটে চমক থাকবে।'
এ ছাড়া উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যেও জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হবে।
অর্থমন্ত্রী গত সোমবার দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন। তিনি আগামীকাল জাতীয় সংসদে চতুর্থ বাজেট উপস্থাপন করতে যাচ্ছেন।
'আমরা বড় বড় কারখানা যেগুলো অন্যান্য দেশে পণ্য তৈরি ও বিক্রি করতে সক্ষম তাদেরকে সহায়তা করব।
মন্ত্রী বলেন, 'আমরা "মেড ইন বাংলাদেশ" পণ্যের প্রচার করব এবং বৈশ্বিক চাহিদা পূরণের জন্য অন্য কোথাও (বাংলাদেশের বড় কারখানাগুলোর সহায়তায়) পণ্য উৎপাদনের সুবিধা প্রদান করব। আমরা রপ্তানির জন্য গাড়ি তৈরি করব।'
তবে বড় বড় কারখানাগুলোকে কী ধরনের সহায়তা দেওয়া হবে সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি তিনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, এই সহায়তার মধ্যে কর মওকুফ এবং নীতিগত উভয়ই বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
আগামী বাজেটের আকার হতে পারে ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা।
রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা হতে পারে ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহের দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে।
বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা বা মোট দেশজ উৎপাদনের ৫.৫ শতাংশ হতে পারে। যার অর্থ এটি ৫ শতাংশের ঊর্ধ্বসীমার উপরে থাকবে। কোভিড মহামারি সরকারকে প্রত্যাশার চেয়ে কম রাজস্ব উৎপাদন সত্ত্বেও ব্যয় বাড়াতে বাধ্য করার আগ পর্যন্ত এই হার ছিল।
এমন এক সময় বাজেট ঘোষণা করা হচ্ছে যখন অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ঊর্ধ্বগতি এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ চাপের মধ্যে আছে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ অস্থিরতা বাড়িয়ে দিয়েছে এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের গতিপথকে ব্যাহত করছে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, 'আমরা চলতি অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক অভিবাসী শ্রমিক বিদেশে পাঠাবো।'
চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে প্রায় ৮ লাখ অভিবাসী শ্রমিক বিদেশে গেছেন। যা এক বছর আগের তুলনায় অনেক বেশি। অর্থমন্ত্রী আশা করছেন, চলতি অর্থবছর ৩০ জুন শেষ হওয়ার আগে এই সংখ্যাটি ১০ লাখে পৌঁছাবে।
তিনি বলেন, 'ইউক্রেনের যুদ্ধ শেষ হলে পশ্চিমা দেশগুলোতে অতিরিক্ত শ্রমিকের প্রয়োজন হবে। আমরা আগামী অর্থবছরে ১৫ লাখ জনশক্তি রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে যাচ্ছি।'
চলতি অর্থবছরে দেশের রপ্তানি আয় ৫০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, 'আমরা উচ্চ মূল্যের পণ্য খুব বেশি উৎপাদন করি না। আমাদের রপ্তানিতে কোনো প্রভাব পড়বে না।'
মাঝারি রপ্তানির বিপরীতে উচ্চতর আমদানি বিল এবং ধীর গতির রেমিট্যান্স প্রবাহের কারণে, বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে সম্প্রতি প্রভাব পড়েছে।
আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, 'রিজার্ভ এখনো সুবিধাজনক পর্যায়ে আছে। আমরা শিগগির এটি ৫০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করব।'
যেহেতু আগামী কয়েক মাস নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেশি থাকার সম্ভাবনা আছে, তাই সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, মুদ্রাস্ফীতির কারণে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এক কোটি পরিবারকে সহায়তা করা হবে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি গত এপ্রিলে ১৮ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, 'আমরা সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী প্রকল্প শুরু করছি। সুবিধাভোগীদের সাহায্য চাইতে আমাদের কাছে আসতে হবে না। তারা যাতে বাড়িতে বসে সহায়তা পায় সেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মোবাইলের মাধ্যমে তাদের কাছে অর্থ পৌঁছে যাবে।'
অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচির জন্য মোট বরাদ্দ হতে পারে ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা বা জিডিপির ২ দশমিক ৫ শতাংশ। বাজেট অধিবেশনে সর্বজনীন পেনশন প্রকল্প নিয়ে বিলটিও পেশ করা হতে পারে।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, আগামী অর্থবছরে বাংলাদেশে থেকে অবৈধভাবে বিদেশে নিয়ে যাওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার সুযোগ দিতে পারে সরকার।
প্রথমবারের মতো অবৈধভাবে বিদেশে নিয়ে যাওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার সুবিধা দেওয়া হবে। যারা ট্রেড আন্ডার-ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে বিদেশে অর্থ নিয়ে গেছেন তারা জরিমানা হিসেবে ৭ শতাংশ কর দিয়ে তা ফিরিয়ে আনার সুযোগ পেতে পারেন বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, 'এই সুযোগ শুধু আগামী অর্থবছরের জন্য পাওয়া যাবে।'
অনুবাদ করেছেন সুমন আলী
Comments