অর্থনীতি সমিতির বিকল্প বাজেটের আকার ২০ লাখ কোটি টাকা

budget_22-23_22may22.jpg
ছবি: সংগৃহীত

চলতি অর্থবছরে সরকারি বাজেটের চেয়ে ৩ গুণ বড় বাজেট প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি।

আজ রোববার সকালে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির অডিটোরিয়ামে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি আবুল বারকাত আসন্ন ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য বিকল্প জনগণতান্ত্রিক বাজেট প্রস্তাবনা তুলে ধরেন।

উন্নয়ন এবং পরিচালন ব্যয় মিলে এই বাজেটের মোট আকার ২০ লাখ ৫০ হাজার ৩৬ কোটি টাকা। যা বর্তমান বাজেটের চেয়ে ৩ দশমিক ৪ গুণ বড়।

আবুল বারাকাত বলেন, আমাদের বাজেট সম্প্রসারণশীল বাজেট।

তিনি আরও বলেন, সরকারের বাজেট শুরুই হয় টাকা-পয়সাকে মূল লক্ষ্যবস্তু ধরে নিয়ে। আমরা মনে সমাজ নির্মাণে এই পদ্ধতির শুরুটাই ভ্রান্ত। কারণ টাকা-পয়সা কখনো মূল লক্ষ্য হতে পারে না, তা লক্ষ্য অর্জনের মাধ্যম হতে পারে মাত্র। আমাদের বাজেট প্রণয়নের কর্মকাণ্ড শুরু হচ্ছে শোভন জীবন নির্মাণে দেশের মানুষের জন্য কী কী প্রয়োজন তা দিয়ে। এর মধ্যে আছে, মানুষের সুস্বাস্থ্য, সুস্থ দীর্ঘায়ু। আমাদের দেশে উন্নয়নের কথা বললে বলা হয়, ৭১ বছর আয়ু। আমরা ৭১ বছর আয়ু গুরুত্বপূর্ণ মনে করি না। এক দিকে জনগণের চাহিদা, অন্য দিকে টাকা-পয়সা। আমরা বাজেট ব্যালেন্সের পক্ষে নই। আমরা অর্থনীতি ব্যালেন্সেরও পক্ষে নই। আমরা সোশ্যাল ব্যালেন্সের পক্ষে। 

বাজেট প্রস্তাবনায় ৩৩৮টি সুপারিশ করা ধরা হয়। আবুল বারাকাত বলেন, বৈষম্য-অসমতা-দারিদ্র্য দূর করতে শুধু আসন্ন বাজেটে নয়, আগামী অন্তত ৫ বছর সমাজ থেকে আয়, সম্পদ, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা বৈষম্য ক্রমাগত হ্রাস করে এক সময় নির্মূল করার লক্ষ্যে যেতে হবে। বাজেটে আয় ও ব্যয়ের মৌলিক কাঠামোগত পরিবর্তন হতে হবে। বাজেটে অর্থায়নের উৎস নির্ধারণে দরিদ্র, নিম্নবিত্ত, বিত্তহীন, প্রান্তিক, নিম্ন মধ্যবিত্ত এবং মধ্য মধ্যবিত্ত শ্রেণির ওপর কোনো ধরনের কর দাসত্ব আরোপ করা যাবে না।

তিনি আরও বলেন, করোনা মহামারির আগে সামাজিক সুরক্ষা বেষ্টনীর আওতায় আসার যোগ্য ছিল ২ কোটি। যাদের ৭৫ শতাংশ এই সুবিধা পেতেন না। এই সংখ্যা কোভিডকালে বেড়ে কমপক্ষে সাড়ে ৩ কোটিতে দাঁড়িয়েছে। নিঃস্বতর হয়েছে অনানুষ্ঠানিক খাত। বেকার হয়েছেন কয়েক কোটি মানুষ। অবস্থা একই রকম থাকলে সামাজিক সুরক্ষা প্রাপ্তিযোগ্য মানুষের দ্বিগুণ বাড়বে এবং বেড়েছে। এসব বিবেচনায় আমাদের প্রস্তাবিত জনগণতান্ত্রিক বাজেটে এটি হলো সর্বোচ্চ বরাদ্দ প্রাপ্তিযোগ্য খাত। এই খাতে সরকার যা বরাদ্দ করে থাকে তা যৌক্তিক নয়। যে কারণে আমরা নতুন ৮টি খাত অন্তর্ভুক্ত করেছি।

বার্ষিক প্রাক্কলিত মূল্যস্ফীতি ৫ থেকে ৭ শতাংশের মধ্যে রাখতে হবে। সরকার যে মূল্যস্ফীতির কথা বলে সেটি প্রকৃত মূল্যস্ফীতির তুলনায় অনেক কম। শর্ত হলো, কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে এবং ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করতে হবে। মূল্যস্ফীতি এমন কোনো পর্যায়ে নেওয়া যাবে না অর্থনীতিকে মূল্যস্ফীতির ঘূর্ণনচক্রের মধ্যে ফেলবে। খাদ্য মূল্যস্ফীতি কোনো অবস্থাতেই বাড়ানো যাবে না, বলা হয় প্রস্তাবনায়।

অর্থনীতি সমিতির সভাপতি বলেন, বাংলাদেশের আর্থিক ব্যবস্থা মূলত ব্যাংক নির্ভর। বেল আউট কর্মকাণ্ডে বৃহৎ ঋণগ্রহীতাদের নির্বিচার নগদ অর্থ প্রদান কোনোভাবেই সমীচীন হবে না। লক্ষ রাখতে হবে ব্যাংক ব্যবস্থাসহ আর্থিক খাতের কর্মকাণ্ডের ফলে আমাদের দেশে যেন আর্থিক রেন্ট সিকিং পুঁজি প্রণোদিত না হয়; তাই হচ্ছে।

তিনি বলেন, শ্রীলঙ্কার ঘটনা দেখার পরে বৈদেশিক ঋণ নিঃসন্দেহে আমাদের দুশ্চিন্তার বিষয়। বৈদেশিক ঋণ, অনুদানের রাজনৈতিক অর্থনীতি সম্পর্কে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির অবস্থান বরাবর খুবই স্বচ্ছ। 'এই মুহূর্তে আমাদের দেশের মানুষের মাথাপিছু দেনা ৩৮ হাজার টাকা', 'জিডিপির তুলনায় বৈদেশিক ঋণ খুব বেশি নয়', 'বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে আমাদের অবস্থা স্বস্তিদায়ক', 'আমরা এখন বিদেশে ঋণ দেই'—এসবই সরকারি কাথা-বার্তা এবং আপাত দৃষ্টিতে স্বস্তিদায়ক। বৈদেশিক ঋণ নিয়ে এখন পর্যন্ত আমাদের অবস্থান বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, যখন থেকে আমরা একসঙ্গে ৪ থেকে ৫টি বৈদেশিক ঋণ নেওয়া মেগা প্রকল্পের ঋণের সুদ পরিশোধ করা শুরু করবো, তখন থেকে ঋণ পরিশোধ অবস্থা সবুজ না হলে লাল সংকেতবাহী হওয়ার সম্ভাবনা প্রচুর। আনুমানিক সময় আমাদের হিসাবে ২০২৭-২৮ সাল।

শিক্ষা নিয়ে আমাদের নীতিগত প্রস্তাব, সরকারে যে বা যারাই থাকুন না কেন প্রথমেই নিঃশর্তভাবে স্বীকার করে নিতে হবে শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হলো জ্ঞান সমৃদ্ধ, বিচার বোধ সম্পন্ন, নৈতিক দৃষ্টিতে উন্নত ও সৌন্দর্য বোধ সমৃদ্ধ পূর্ণাঙ্গ মানুষ সৃষ্টি করা। আমরা জানি আমাদের শিক্ষা এটার সঙ্গে মেলে না। শিক্ষা খাতে বাজেট কোনোভাবে ব্যয় হিসেবে দেখা যাবে না, সামাজিক বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে হবে। জিডিপির অনুপাতে শিক্ষা খাতে সরকারি বরাদ্দ নিম্নমুখী, বলেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

The silent emergency: Politicisation of our healthcare sector

The erosion of trust in doctors is creating crisis for the healthcare sector.

6h ago