বিশ্বের দ্রুততম বিদ্যুৎচালিত উড়োজাহাজ নির্মাণের দাবি রোলস রয়েসের

রোলস রয়েসের তৈরি বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুততম বিদ্যুৎচালিত উড়োজাহাজ ‘স্পিরিট অব ইনোভেশন’। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাজ্যের উড়োজাহাজ ইঞ্জিন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান রোলস রয়েস দাবি করেছে যে, তারা 'বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুততম বিদ্যুৎচালিত উড়োজাহাজ' নির্মাণ করেছে।

সিএনএন জানায়, 'স্পিরিট অব ইনোভেশন' নামের উড়োজাহাজটি ঘণ্টায় ৩৮৭ দশমিক ৪ মাইল (৬২৩ কিলোমিটার) গতিবেগে উড়ার রেকর্ড গড়েছে বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে রোলস রয়েস।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, স্পিরিট অব ইনোভেশন সর্বমোট ৩টি বিশ্ব রেকর্ড গড়েছে। যার মধ্যে আছে, গত ১৬ নভেম্বরে ঘণ্টায় ৩৪৫ দশমিক ৪ মাইল গতিতে ১ দশমিক ৮৬ মাইল দূরত্বে যাওয়া।

প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, ৩ হাজার মিটার উচ্চতায় পৌঁছুতে উড়োজাহাজটি সময় নিয়েছে ২০২ সেকেন্ড, যেটি এর আগের রেকর্ডের চেয়ে ১ মিনিট কম।

উড়োজাহাজটি যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামরিক উড়োজাহাজ পরীক্ষণ কেন্দ্রে ঘণ্টায় ৩০০ মাইল গতিতে ৯ দশমিক ৩২ মাইল পথ পাড়ি দিয়েছে, যেটি আরেকটি নতুন রেকর্ড তৈরি করেছে।

এসব তথ্য ও উপাত্ত যাচাই-বাছাইয়ের জন্য বৈশ্বিক উড্ডয়ন নিয়ন্ত্রক সংস্থা এফআইএ'র কাছে জমা দেওয়া হয়েছে।

এক্সেলারেটিং দ্য ইলেক্ট্রিফিকেশন অব ফ্লাইট (অ্যাক্সেল) প্রকল্পের অংশ হিসেবে এই উড়োজাহাজ তৈরি করা হয়েছে। এই প্রকল্পের অর্থায়ন করেছে অ্যারোস্পেস টেকনোলজি ইনস্টিটিউট (এটিআই), দ্য ডিপার্টমেন্ট ফর বিজনেস, এনার্জি অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড ইনোভেট ইউকে ইত্যাদি।

এই উড়োজাহাজে আছে একটি ৪০০ কিলোওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন 'পাওয়ারট্রেন'। এই যন্ত্রের মাধ্যমে উড়োজাহাজের চাকায় দ্রুতগতিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়।

রোলস রয়েস আরও দাবি করেছে, এই উড়োজাহাজের জন্য ব্যবহৃত প্রপালশান ব্যাটারি প্যাক এ যাবত তৈরি হওয়া ব্যাটারির মধ্যে সবচেয়ে বেশি 'পাওয়ার ডেনসিটি' সম্পন্ন। অর্থাৎ, প্রতি মিনিটে বিদ্যুৎ প্রবাহের দিক দিয়ে এটি সবচেয়ে দ্রুতগতির।

রোলস রয়েসের পরীক্ষামূলক বৈমানিক এবং উড্ডয়ন কার্যক্রমের পরিচালক ফিল ও'ডেল নিজেই সর্বোচ্চ গতিবেগ অর্জনকারী ফ্লাইটের দায়িত্বে ছিলেন।

তিনি বলেন, 'এটি আমার ক্যারিয়ারের হাইলাইট এবং পুরো দলের জন্য একটি অবিশ্বাস্য অর্জন।'

রোলস রয়েসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়ারেন ইস্ট বলেন, 'বিদ্যুৎচালিত উড়োজাহাজের মধ্যে দ্রুততম গতির রেকর্ড ভঙ্গ করা নিঃসন্দেহে অ্যাক্সেল দল এবং রোলস রয়েসের জন্য অসামান্য অর্জন।'

ইস্ট আরও জানান, কপ২৬ সম্মেলনে আলোচিত বিষয়গুলো এবং সারাবিশ্বের নজরে থাকা 'জেট জিরো' উদ্যোগকে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এটি আরেকটি মাইলফলক।

তিনি আরও বলেন, 'আকাশ, ভূমি ও সমুদ্রপথে কার্বনমুক্ত যাতায়াত নিশ্চিতের জন্য সমাজের যে প্রত্যাশা, তা পূরণের পথে এটি আমাদেরকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়েছে।'

উল্লেখ্য, জেট জিরো কাউন্সিল বিভিন্ন দেশের সরকার এবং শিল্পখাতের মধ্যে একটি অংশীদারিত্বমূলক চুক্তি, যার মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী এবং বিভিন্ন উড়োজাহাজ প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তারা একত্রে মিলে কার্বন নিঃসরণ কমানোর জন্য কাজ করছেন।

জেট জিরো কাউন্সিলের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনায় আছে নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও প্রচলনের উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা, যার মাধ্যমে এক প্রজন্মের মধ্যেই কার্বন নিঃসরণকে শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসা।

যুক্তরাজ্যের বাণিজ্য সচিব কোয়াসি কোয়ার্টেং বলেন, 'এই উড়োজাহাজ বিদ্যুৎচালিত ফ্লাইটের অপার সম্ভাবনাকে সবার সামনে উন্মোচন করবে।'

'আগামীতে আরও নতুন নতুন প্রযুক্তি এসে এ ধরনের ফ্লাইটকে দৈনন্দিন জীবনের অংশ করে তুলবে', যোগ করেন তিনি।

কোয়াসি কোয়ার্টেং জানান, বিভিন্ন দেশের সরকার এ ধরনের প্রকল্পে সমর্থন দিতে পেরে গর্বিত।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, মানুষ এখন তাদের যাতায়াতের প্রক্রিয়ায় কোনো ধরণের পরিবর্তন না এনেও, সম্পূর্ণ বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় আরও পরিবেশবান্ধব, কম কার্বন নিঃসরণকারী ফ্লাইট ব্যবহার করতে পারবে।

Comments

The Daily Star  | English

AL leaders' homes, businesses vandalised

Demolition work on Dhanmondi-32 was on going till filing of this report at 1:30am

59m ago