আজ থেকে বাংলাদেশে ৫জি চালু

বিশ্বের ৬০টিরও বেশি দেশের পাশাপাশি আজ বাংলাদেশও পঞ্চম প্রজন্মের মোবাইল ইন্টারনেট সেবা বা ৫জি চালু হতে যাচ্ছে।

রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল অপারেটর টেলিটক উচ্চ গতিসম্পন্ন এই প্রযুক্তি সবার আগে চালু করতে যাচ্ছে। বেসরকারি অপারেটররা আগামী বছরের মার্চে তরঙ্গ নিলামের পর ক্রমান্বয়ে এই সেবা চালু করতে পারবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

টেলিটক পরীক্ষামূলক ভাবে দেশের ৬টি জায়গায় এই সেবা দেবে। এর মধ্যে রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, জাতীয় সংসদ, সচিবালয়, ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু যাদুঘর, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মস্থান গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া এবং সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ।

টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাহাব উদ্দিন গতকাল শনিবার দ্য ডেইলি স্টারকে এ তথ্য জানান।

টেলিটকের ৬৫ লাখ গ্রাহককে এই সেবা পাওয়ার জন্য আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। কারণ অপারেটরটি এখনো ২০০টি জায়গায় প্রয়োজনীয় যন্ত্র স্থাপনের জন্য ২৩৫ কোটি টাকার প্রকল্পের অনুমোদন পায়নি। বেসরকারি অপারেটরদের গ্রাহকদের অপেক্ষা করতে হবে তরঙ্গ নিলাম শেষ না হওয়া পর্যন্ত।

৫জি প্রযুক্তি ৪জি প্রযুক্তির চেয়ে ২০ গুণ বেশি গতিতে মোবাইল ইন্টারনেট সেবা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৫জি সেবার মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালিত গাড়ি, অগমেন্টেড রিয়েলিটি, স্মার্ট শহর ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো আধুনিক প্রযুক্তি ও ধ্যান-ধারণাকে বাস্তবে রূপান্তর করা সম্ভব।

এই প্রযুক্তির মাধ্যমে আরও উন্নত মানের ভিডিও স্ট্রিমিং সেবা আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব।

সাহাব উদ্দিন বলেন, '৫জি হচ্ছে অটোমেশনের মহাসড়ক।'

টেলিযোগাযোগ বিভাগের একটি আমন্ত্রণপত্র অনুযায়ী, ঢাকার র‍্যাডিসন হোটেলে একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ৫জি সেবার পরীক্ষামূলক কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হবে।

পরীক্ষামূলকভাবে ৫জি চালু করা হলেও বাংলাদেশ এখনও ৩জি ও ৪জি প্রযুক্তি থেকে তেমন কোনো উপকার পায়নি।

মোবাইল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে দেশের ৯৫ শতাংশ মানুষ এখন ৪জি মোবাইল ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্কের আওতায় চলে এসেছে। তবে এখনও মাত্র ২৮ শতাংশ মোবাইল ৪জির সঙ্গে যুক্ত। বাকি ২৫ শতাংশ ৩জি ও ৪৭ শতাংশ গ্রাহক ২জি সেবা ব্যবহার করেন।

গত মার্চে জিএসএম অ্যাসোসিয়েশনের (জিএসএমএ) একটি প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

উল্লেখ্য, এই প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বজুড়ে মোবাইল ফোন অপারেটরদের স্বার্থ রক্ষার জন্য কাজ করে থাকে।

গত অক্টোবরের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে ১২ কোটি ৯২ লাখ ইন্টারনেট গ্রাহক রয়েছেন। এর মধ্যে ১১ কোটি ৯১ লাখ গ্রাহক মোবাইল ফোনে এবং বাকিরা ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই সেবা ব্যবহার করছেন।

বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনের (বিটিআরসি) ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত রায় মৈত্র বলেন, '২০২১ সালের মধ্যে ৫জি সেবা চালু করার বিষয়টি সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারে অন্তর্ভুক্ত ছিল।'

তিনি জানান, ৪জি ও ৫জি সেবা এক নয়। ৪জি সেবা কাজ করে সংযুক্তি নিয়ে, আর ৫জির ব্যবহার বেশি হয় শিল্পখাতে। 'তাই এ দুটির মধ্যে তুলনা করা উচিৎ নয়।'

২০১৯ সালের এপ্রিলে দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম ৫জি নেটওয়ার্ক চালু হয়। বর্তমানে বিশ্বের ৬১টি দেশের ১ হাজার ৩৩৬টি শহরে ৫জি সেবা বাণিজ্যিকভাবে চালু আছে বলে জানিয়েছে অ্যারিজোনাভিত্তিক ভায়াভি নামের একটি প্রতিষ্ঠান। গবেষণাগারে নেটওয়ার্কের সক্ষমতা ও অন্যান্য বিষয়ের পরীক্ষা সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানটির গত জুনে প্রকাশিত 'দ্য স্টেট অব ৫জি' নামের প্রতিবেদনে এই তথ্য দেওয়া হয়েছে।

কলম্বোভিত্তিক টেলিযোগাযোগ গবেষণা প্রতিষ্ঠান লার্ন এশিয়ার সিনিয়র পলিসি ফেলো আবু সাইদ খানের মতে, ৫জি সেবা চালুর সিদ্ধান্তটি বাজারের চাহিদার ওপর ভিত্তি করে নেওয়া হয়নি। এটি মূলত একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত।

তিনি বলেন, 'এর মাধ্যমে করদাতাদের টাকার অপচয় হচ্ছে। দুর্বল ৪জি সেবার উন্নয়ন না করে ৫জি নিয়ে কথা বলা একটি লোক দেখানো কাজ।'

তিনি আরও জানান, বাংলাদেশে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা এখনও ৩৫ শতাংশ ছাড়ায়নি। দেশে ৫জি সেবা সম্বলিত হ্যান্ডসেটের স্বল্পতা থাকায় অনেকেই এ সেবা পাবেন না।

'বাজারের চাহিদা অনুসারে আমাদের ৫জি সেবার প্রয়োজন নেই। আমাদের দরকার পূর্ণাঙ্গ ৪জি সেবা', যোগ করেন তিনি।

টেলিকম বিশেষজ্ঞ সাইদ জানান, অবকাঠামো ভাগ করে মানসম্পন্ন ৪জি সেবা প্রদানের জন্য একটি উপযুক্ত নীতিমালা খুবই প্রয়োজন।

'এ কারণে সরকারের উচিৎ অপটিকাল ফাইবার অবকাঠামো সংক্রান্ত ব্রডব্যান্ড পরিপন্থী নীতিমালার সংস্কার করা। অবকাঠামো ভাগের বিষয়টি সবার জন্য আবশ্যক হওয়া উচিৎ', বলেন তিনি।

আবু সাইদ খানের মতে, টেলিটক এখনো আগে নেওয়া তরঙ্গের মূল্য পরিশোধ করেনি। সম্পূর্ণ রাজনৈতিক কারণে এই প্রযুক্তির নামে প্রহসনের পেছনে করদাতাদের অর্থ ব্যয় করে এই অপারেটরকে অহেতুক গৌরবান্বিত করার বিষয়টি পুরোপুরি অনৈতিক।

টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাহাব জানান, যেহেতু তরঙ্গের মালিকানা সরকারের, তাই তারা অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুরোধ করেছে প্রদেয় অর্থকে সরকারি প্রতিষ্ঠান টেলিটকের শেয়ারের বিপরীতে ইকুইটি হিসেবে বিবেচনা করতে।

গ্রাহকের জন্য নিরবচ্ছিন্ন সেবার অভাবের বিষয়ে তিনি জানান, টেলিটকের টাওয়ার বা বেস ট্রান্সসিভার স্টেশনের (বিটিএস) সংখ্যা গ্রামীণফোনের এক-তৃতীয়াংশ। বিনিয়োগের অভাবে বিটিএসের সংখ্যা বাড়ানো যাচ্ছে না।

তিনি বলেন, 'বিনিয়োগ বাড়লে সেবার মান আরও উন্নত হবে।'

গত মার্চে জিএসএমএ উপযুক্ত নীতিমালা ও আইনের মাধ্যমে কর, ভর্তুকি ও ব্যবসায়িক উদ্ভাবনের ওপর নজর দিয়ে বাংলাদেশে মোবাইল ইন্টারনেটের ব্যবহার বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানায়।

প্রতিষ্ঠানটি সরকারকে অনুরোধ করেছে, মানুষের মধ্যে ডিজিটাল জ্ঞান বাড়াতে এবং স্থানীয়ভাবে কন্টেন্ট তৈরি করার জন্য একটি ইকোসিস্টেম তৈরি করতে।

অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments

The Daily Star  | English

Not for kidney patient, they tried to rob bank for iPhones

Police say three robbers fabricated a story claiming that the robbery was to save a kidney patient

35m ago