প্রজাপতিও টিকটিকির মতো লেজ খসিয়ে আত্মরক্ষা করতে পারে

ছবি: সায়েন্স নিউজ

প্রতিটি প্রাণী শিকারির কবল থেকে নিজেকে বাঁচাতে নানা ধরনের কৌশল অবলম্বন করে। বেঁচে থাকার জন্য কখনো বেঁছে নেয় শিকারিকে ধোঁকা দেওয়ার পথ। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রজাপতিও ঠিক টিকটিকির মতো শিকারিকে ধোঁকা দিয়ে আত্মরক্ষা করতে পারে। 

বেশিরভাগ প্রজাপতির ডানার দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, ডানার শেষভাগে লেজের মতো দুটি অংশ রয়েছে। সেগুলোতে আবার চোখের মতো বিন্দু কিংবা আকর্ষণীয় রঙের ছটা থাকে। যেটি শিকারির চোখ ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে যেতে সাহায্য করে।
 
ডানার এই অংশ সাধারণত দেহের অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ থেকে খানিকটা ভঙ্গুর হয়ে থাকে। যার ফলে বড় আকৃতির পোকামাকড়, পাখিসহ সব ধরনের শিকারীর সামান্য ঠোকরেই দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় লেজ। এর ফলে প্রাণনাশের আশঙ্কা কমে যায় প্রজাপতির। মূলত শিকারি থেকে বাঁচাই এই লেজের কার্যকারিতা।   

প্রসিডিংস অব দ্য রয়্যাল সোসাইটি বি'র প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, প্রজাপতির লেজের অংশটুকু শিকারীদের আকর্ষণের কেন্দ্রে থাকে বলে দেহের গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো ক্ষতি থেকে রক্ষা পায়। এ ছাড়া ডানার লেজ আকৃতির অংশগুলো বিভিন্ন প্রকার মথ এবং প্রজাপতির মধ্যে একাধিকবার স্বাধীনভাবে বিবর্তিত হওয়ার ঘটনাও ঘটে। 

ছবি: সংগৃহীত

প্যারিসের ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব ন্যাচারাল হিস্ট্রির বিবর্তনবাদী জীববিজ্ঞানী অ্যারিয়েন চোটার্ড সোয়ালোটেইল প্রজাপতির ডানা নিয়ে গবেষণা করে দেখতে পান, কিছু প্রজাপতির ডানার লেজে নকল মাথা এবং চোখের প্রতিচ্ছবি ফুটে ওঠায় শিকারিরা বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে। এমনকি বেশিরভাগ সময় কেবল লেজই তাদের শিকারের কেন্দ্র হয়ে ওঠে। 

চোটার্ড ও তার দল ফ্রান্সের অ্যারিজে বন থেকে ১৩৮টি পাল সোয়ালোটেইল জাতের প্রজাপতি সংগ্রহ করে দেখতে পান, এই প্রজাতিগুলোর দুটি লেজের রঙ থেকে শরীরের রঙের তেমন কোনো মিল নেই। সংগৃহীত প্রজাপতির প্রায় ৪১ শতাংশের লেজ ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। হয়তো কোনোটির একটি লেজের অংশ নেই আবার কোনোটির দুটি লেজই দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। অথচ প্রজাপতিগুলো দিব্যি বেঁচে আছে। 

এ সম্পর্কে আরও নিশ্চিত হওয়ার জন্য গবেষকরা আরেকটি পরীক্ষার ব্যবস্থা করেন। বন্য পাখি খাঁচায় রেখে কালো পিচবোর্ডের ছোট টুকরো দিয়ে তৈরি নকল প্রজাপতির দেহে সোয়ালোটেইল প্রজাপতির লেজের অংশ আঠা দিয়ে জুড়ে দেওয়া হয়। তারপর সেগুলো পাখির কাছে উন্মুক্ত করে দিলে দেখা যায়, পাখির ৫৯টি ঠোঁটের আঘাতের ৭৩ শতাংশই ছিল লেজের অংশে। আর ৩৯ শতাংশ ছিল দেহের অন্যান্য অংশের চেয়ে লেজ এবং ডানার উপরিভাগের রঙিন অংশে। 

গবেষকদের মতে, প্রজাপতির লেজ অনেকটা টিকটিকির লেজের মতো। শিকারির হাতে নিজের প্রাণ না দিয়ে লেজ বিসর্জনের সঙ্গে বেশ মিল পাওয়া যায়। তবে লেজ বিসর্জনের ফলে এসব প্রাণির কোনো অসুবিধায় পড়তে হয় কি না সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। 

    

Comments

The Daily Star  | English
political reform in Bangladesh

Pathways to a new political order

The prospects for change are not without hope in Bangladesh.

10h ago