প্রবাস চোখে স্বদেশ: শিল্পী সংঘের নির্বাচন এবং আমাদের আড্ডা
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীতে অনুষ্ঠিত অভিনয় শিল্পী সমিতির কার্যকরী পরিষদের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বসেছিল তারকাদের মিলন মেলা। ভোট দেওয়ার আগে ও পরে একাডেমীর মাঠে মুখরিত আড্ডায় মেতেছিলেন শিল্পীরা। সেই আলোকিত আড্ডায় আমিও ছিলাম একজন।
পুরো সন্ধ্যা জুড়ে আড্ডাকে প্রাণবন্ত করে রেখেছিলেন টেলিভিশনের জনপ্রিয় অভিনেতা আফজাল হোসেন এবং বাংলা একাডেমী পদকপ্রাপ্ত নাট্যকার মাসুম রেজা। বিভিন্ন সময়ে সেখানে যোগ দিচ্ছিলেন মনোজ সেন গুপ্ত, ফজলুর রহমান বাবু, আজিজুল হাকিম, আনিসুর রহমান মিলন, তারিন, চঞ্চল চৌধুরী, সৈয়দ বাবু, চয়নিকা চৌধুরী, সকাল আহমেদ, পান্থ আফজাল, শতাব্দী ওয়াদুদ, কাজী রাজু, শাহনাজ খুশি, প্রাণ রায়, মাজনুন মিজান, লিটু করিম প্রমুখ। তাদের প্রায় সবার সঙ্গেই আমি টেলিভিশনকেন্দ্রিক নানান ধরনের কাজ করেছি। মাঝে মধ্যে সাজু খাদেম এসে হাসির গল্প বলে আড্ডাকে দুলিয়ে দিচ্ছিলেন নদীর ঢেউয়ের মতো।
মাসুম রেজার সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব আশির দশক থেকে। আমরা এক সঙ্গে লিটলম্যাগ আন্দোলন করেছি। তার সম্পাদিত কাগজে আমি লিখেছি। তিনি লিখেছেন আমার সম্পাদিত সংকলনে। আমাদের একজনের প্রতি আরেকজনের প্রিয়তা এখনো অটুট। আফজাল হোসেনের সঙ্গেও আমার পরিচয় ও ঘনিষ্ঠতা অনেক দিনের। তাই খুব সহজেই জমে উঠেছিল আমাদের আড্ডা।
অনেকে নির্বাচনের সর্বশেষ খবর নিয়ে এসে আড্ডায় ছড়িয়ে দিচ্ছিলেন উত্তেজনা।
আমি আফজাল হোসেনের কাছে জানতে চাইলাম, আপনাদের সময়ে কী অসামান্য নাটক-ধারাবাহিক নির্মিত হতো, এখন হয় না কেন? আগের মতো নাট্যকার নেই, নাকি শিল্পী নেই, নাকি মেধাবী নির্মাতা নেই?
আফজাল বললেন, 'সবই আছে আগের মতো, শুধু নেই ডেডিকেশন, একাগ্রতা। সবাই অল্পতেই জনপ্রিয় হতে চায়। ফেসবুকের লাইক-কমেন্ট পেয়ে মনে করে তারকা হয়ে গেছে। এখন বাংলাদেশে এতো এতো তারকা! তারা নিজেরা যেমন নষ্ট হচ্ছে তেমনি নষ্ট করছে তাদের চারপাশ।'
মাসুম রেজা একমত পোষণ করে বললেন, 'আমরা আমাদের কলেজ-ইউনিভার্সিটি জীবনে কুষ্টিয়া থেকে একটি সংকলন বের করে কুমারখালি, পাংশাতে বিক্রি করতে যেতাম। তেমনি আকিদুল ইসলামরা পাংশা থেকে আসতেন আমাদের কুষ্টিয়াতে। এমন মমতা আর একাগ্রতা নিয়ে কাজ করতাম আমরা। এখনকার কারো মধ্যেই কাজের প্রতি সেই ভালোবাসাটা দেখতে পাই না।'
আমার প্রশ্ন, এই দায় আপনারা কি এড়াতে পারেন? দুজনই তো এখনো সক্রিয় এবং এই ক্ষেত্রের প্রতিভূ।
জবাবে আফজাল হোসেন বললেন, 'এটি একটি সম্মিলিত কাজ। এককভাবে কাউকে দায়ী করা যাবে না। কেউই কারো জায়গায় সৎ নেই। একটি উদাহরণ দিলে বুঝতে পারবে। দেশের বাইরে যে ছবিগুলো পুরস্কারের জন্য পাঠানো হয় তার কয়টি মান সম্মত, বলো? বাজে ছবিগুলো কেন পাঠানো হয়? কারা পাঠান? এসব প্রশ্নে উত্তর সবাই জানি। কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারছেন না। কারণ যারা নিয়ন্ত্রক তাদের বিপক্ষে কেউ কথা বলতে চাইছেন না।'
আড্ডার মাঝেই পরিচালক সকাল আহমেদ বললেন, 'আকিদ ভাইয়ের দুটো স্ক্রিপ্ট নিয়ে কাজ করেছি। দুটোই প্রচারিত হয়েছে এনটিভিতে। অনেকবার বলার পরও আর কোনো স্ক্রিপ্ট পাইনি।'
আমি বললাম, 'আফজাল ভাইকে মাথায় রেখে একটা স্ক্রিপ্ট লিখেছি। সঙ্গেই আছে।'
সকাল সঙ্গে সঙ্গে আফজাল হোসেনের শিডিউল চাইলেন। আফজাল বললেন, 'এপ্রিলের আগে দিতে পারবো না। শিশু একাডেমীর যে ছবিটা বানাচ্ছি তার আরেকটু কাজ বাকি আছে।'
পড়ন্ত বিকেলে জমজমাট নির্বাচনী হাওয়া। ভোটার, প্রার্থী আর পর্যবেক্ষক মিলিয়ে ১ হাজার জন হলেও সেখানে উপস্থিত হয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। আফজাল হেসে বললেন, 'অন্যরা এসেছেন "তারকা" দেখতে।'
প্রায় ৩ ঘণ্টার আড্ডার পরও মন ভরেনি মাসুম রেজার। তার বাসায় আরেকটি আড্ডার আমন্ত্রণ জানালেন আমাদের।
আকিদুল ইসলাম: অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী লেখক, সাংবাদিক
Comments