কুয়াকাটায় ১৩ বছরে ২ হাজার একর বনভূমি সাগরে বিলীন

ভয়াবহ ভাঙনের কবলে পড়েছে কুয়াকাটা সৈকত। প্রতিবছর ঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস আঘাত হানায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মণ্ডিত এ সৈকত আকর্ষণ হারাতে বসেছে। ২০০৭ সালের সিডরের পর থেকে প্রতি বছর ছোটবড় বিভিন্ন দুর্যোগের আঘাতে এ সৈকতে প্রায় দুই হাজার একর বনভূমি সাগরে বিলীন হয়েছে বলে পটুয়াখালী বন বিভাগ জানিয়েছে।
সিডরের পর থেকে প্রতি বছর বিভিন্ন দুর্যোগের আঘাতে কুয়াকাটা সৈকতে প্রায় দুই হাজার একর বনভূমি সাগরে বিলীন হয়েছে। ছবি: সোহরাব হোসেন/স্টার

ভয়াবহ ভাঙনের কবলে পড়েছে কুয়াকাটা সৈকত। প্রতিবছর ঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস আঘাত হানায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মণ্ডিত এ সৈকত আকর্ষণ হারাতে বসেছে। ২০০৭ সালের সিডরের পর থেকে প্রতি বছর ছোটবড় বিভিন্ন দুর্যোগের আঘাতে এ সৈকতে প্রায় দুই হাজার একর বনভূমি সাগরে বিলীন হয়েছে বলে পটুয়াখালী বন বিভাগ জানিয়েছে।

পটুয়াখালী উপকূলীয় বন বিভাগ ২০০৫-২০০৬ অর্থবছরে কুয়াকাটা সৈকতের গঙ্গামতি, লতাচপলী, খাজুরা ও ফাতরার বন এলাকায় ১৩ হাজার ৯৮৪ হেক্টর জমিতে ২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ইকোপার্ক গড়ে তোলে। পরে, এটিকে জাতীয় উদ্যানে রূপান্তর করা হয়।

এ পার্কে স্থাপন করা হয় পাঁচটি পিকনিক শেড, একটি দৃষ্টিনন্দন কাঠের ব্রিজ, কয়েকটি কালভার্ট, অভ্যন্তরীণ পায়ে হাটার মাটির রাস্তা, অফিস ভবন, টিকিট কাউন্টারসহ বিভিন্ন স্থাপনা। রোপণ করা হয় বিভিন্ন প্রজাতির ৪২ হাজার গাছ। সাগরের ঢেউ থেকে রক্ষার জন্য পার্কটির দক্ষিণ পাশে সৃজন করা হয় একটি ঝাউ বাগান।

ভাঙনের কারণে অসংখ্য গাছ উপড়ে সৈকতে পড়ে আছে। ছবি: সোহরাব হোসেন/স্টার

ঘূর্ণিঝড় সিডরের পর থেকে আইলা, মহাসেন, আম্পানসহ ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসে এ পার্কটি অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। এখন পার্কটির মাত্র এক চতুর্থাংশ অবশিষ্ট আছে।

গত সোমবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পার্কের অসংখ্য গাছ উপড়ে সৈকতে পড়ে আছে। পার্কের পিকনিক শেড. বাউন্ডারি দেয়ালের ধ্বংসাবশেষ বিক্ষিপ্তভাবে সৈকতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে।

এ পার্কটির দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা বন বিভাগের বন প্রহরী মনিরুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, ঘূর্ণিঝড়, বন্যাসহ স্ফীত জোয়ারের তাণ্ডবে সাগরে প্রচণ্ড ঢেউয়ের আঘাতে প্রতিবছর এখানকার বনভূমি সাগরে বিলীন হচ্ছে। সর্বশেষ এ বছরের ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাত প্রায় এক হাজার গাছপালা উপড়ে সৈকতে পড়ে আছে।

এক সময় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত পর্যটকগণ এ পার্কে আসতেন এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতেন। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা শিক্ষা সফরে এখানে এসে বনজ সম্পদ ও প্রাণী সম্পদের সঙ্গে পরিচিত হতেন। কিন্তু, পার্কটি সাগরের অব্যাহত ভাঙনে বিলীন হওয়ায়, পর্যটকরা এখানে আসার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।

কুয়াকাটা ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিশেনের সভাপতি রুম্মান ইমতিয়াজ তুষার দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, ইকোপার্কসহ সাগর তীরে ব্যাপক এলাকায় বনভূমি কুয়াকাটার সৌন্দর্য বহু গুণে বাড়িয়েছিল। কিন্তু, অব্যাহত ভাঙনে এসব বনভূমি সাগরে বিলীন হওয়ায় সৈকতটি ক্রমশ সৌন্দর্য হারাচ্ছে। পর্যটকরাও এখানে আসার আগ্রহ হারাচ্ছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র আনোয়ার হোসেন বলেন, 'কার্যকরী কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় কুয়াকাটা সৈকতটি ক্রমশ সাগরে বিলীন হচ্ছে, হারাচ্ছে সৌন্দর্য। এটিকে বাঁচাতে প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণের বিকল্প নেই।'

এ ব্যাপারে জানতে পটুয়াখালীর বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, 'ঘূর্ণিঝড় সিডরের পর থেকেই মূলত ব্যাপকভাবে সৈকতে ভাঙন দেখা দেয়। এখানে একসময় তিন হাজার ৩৮৭ একর বনভূমি থাকলেও, এখন মাত্র এক হাজার ৩০০ একর বনভূমি অবশিষ্ট আছে।'

'বাকি প্রায় দুই হাজার একর সাগরে বিলীন হয়ে গেছে,' বলেন তিনি।

এ বিষয়ে পটুয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকেশৗলী আ. হালিম সালেহী দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, কুয়াকাটা সৈকত রক্ষায় একটি স্থায়ী বাধ নির্মাণের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাবটি অনুমোদন পেলে কুয়াকাটা সৈকতকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে।

Comments

The Daily Star  | English

Bangladeshi students likely to fly home from Kyrgyzstan on chartered flights

There have been no major attacks in hostels of international students since last night

35m ago