চুলার ধোঁয়ায় বছরে ১৮ হাজার মানুষের মৃত্যু

২০১৭ সালে বাংলাদেশে রান্নার চুলার ধোঁয়ায় সৃষ্ট দূষণে ১৮ হাজার মানুষের মৃত্যু
cooking
রান্নার চুলার ধোঁয়ার কারণে প্রতিবছর হাজারো নারীর মৃত্যু হয়। ছবি: আনিসুর রহমান/স্টার

রান্নার চুলায় (স্টোভ) পোড়ানো কয়লা, কাঠ, গোবর ও শস্যের ফেলে দেওয়া অংশ থেকে সৃষ্টি হওয়া ধোঁয়া ২০১৭ সালে প্রায় ১৮ হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটিয়েছে বলে একটি বৈশ্বিক গবেষণা থেকে জানা গেছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, চুলার আগুনের দহন হৃদযন্ত্রের রোগ, স্ট্রোক, ফুসফুসের ক্যানসার ও শ্বাসযন্ত্রে সংক্রমণের কারণ হতে পারে।

গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, ২০১৭ সালে অ্যামবিয়েন্ট (আউটডোর) পিএম ২ দশমিক ৫ এর কারণে বাংলাদেশে মোট ৬৩ হাজার ৭১৮ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। বাংলাদেশে বায়ু দূষণের অন্যতম মূল উপকরণ পিএম ২.৫ এর সবচেয়ে বড় উৎস হচ্ছে ঘরে ব্যবহৃত জ্বালানি।

গবেষণা প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, পরিবেষ্টিত বায়ু দূষণের ২৮ দশমিক ২ শতাংশ আসে গৃহস্থালী জ্বালানি থেকে এবং বিদ্যুৎ থেকে আসে ১২ দশমিক ৪ শতাংশ।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক হেলথ ইফেক্টস ইনস্টিটিউটের (এইচইআই) গবেষণা প্রতিবেদনটির শিরোনাম 'রোগের বৈশ্বিক বোঝা-বায়ু দূষণের মূল উৎসগুলো'। আজকে প্রকাশিত এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের চুলাগুলো দীর্ঘদিন ধরে নারীদের জন্য গুরুতর ঝুঁকির কারণ হয়েছে, যাদের ওপর সাধারণত রান্নার দায়িত্ব থাকে।

এর আগে এইচইআই'র বৈশ্বিক বায়ু পরিস্থিতি সমীক্ষা থেকে জানা যায়, সারা বিশ্বে মানুষের জন্য মৃত্যুর ঝুঁকি সৃষ্টিকারী শীর্ষ উপকরণগুলোর মধ্যে পার্টিকুলেট ম্যাটার (পিএম) ২ দশমিক ৫ এর অবস্থান ৬ নং স্থানে। ২০১৯ সালে সারা বিশ্বে ৪০ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ ঘটায় পিএম ২ দশমিক ৫।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ঘরের আবহাওয়া গরম রাখতে এবং রান্না করতে কাঠ পোড়ানো পিএম ২ দশমিক ৫ এর আরেকটি বড় উৎস। এই উৎসগুলোর কারণে আরও অতিরিক্ত ৭৪ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে, বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়া ও আফ্রিকার সাব-সাহারা অঞ্চলে।

গবেষণায় আরও জানা গেছে, মানুষ যদি কয়লার মতো জীবাষ্ম জ্বালানি ব্যবহার বন্ধ করে দেয়, তাহলে আরও ৭৭ লাখ মানুষের জীবন বাঁচানো যাবে।

জীবাষ্ম জ্বালানির দহন বায়ু দূষণের অন্যতম প্রধান উৎস। প্রতিবেদন অনুযায়ী, এটি ২০১৭ সালে সারা বিশ্বে ১০ লাখ মানুষের মৃত্যু ঘটিয়েছে, যেটি আউটডোর পিএম ২ দশমিক ৫ এর কারণে হওয়া মৃত্যুর চেয়েও ২৭ শতাংশ বেশি।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, উল্লেখিত মৃত্যুর অর্ধেকের বেশির জন্য দায়ী শুধুমাত্র কয়লার দহন এবং বাকি অর্ধেকের জন্য দায়ী প্রাকৃতিক গ্যাস ও তেলের দহন।

গবেষণা দলটির নেতৃত্ব দেন যুক্তরাষ্ট্রের সেইন্ট লুইসে অবস্থিত ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের এরিন ম্যাকডাফি ও র‍্যান্ডাল মার্টিন এবং কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইকেল ব্রাউয়ার। তারা প্রথমবারের মতো বিশ্বের সব দেশকে বিবেচনা করে বায়ু দূষণের মূল কারণগুলোকে চিহ্নিত করার জন্য এ রকম স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি বিশ্লেষণী প্রতিবেদন প্রকাশ করছেন।

নতুন এই প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, পিএম ২ দশমিক ৫ এর মূল উৎসগুলো দেশ ও অঞ্চল ভেদে পরিবর্তিত হতে পারে এবং বিশ্বের বিভিন্ন অংশে বায়ু দূষণের প্রভাব ভিন্ন রকম হয়।

জীবাষ্ম জ্বালানির দহন বিভিন্ন শিল্পোন্নত দেশের পিএম ২ দশমিক ৫ এর মূল উৎস হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। অপরদিকে, বাতাসে বয়ে আনা ধূলাকে আফ্রিকার পিএম ২ দশনিক ৫ এর মূল উৎস হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।

এইচইআই এর জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী ড. পল্লবী পান্থ বলেন, 'দক্ষিণ এশিয়ায় বায়ুর গুণগত মান বাড়ানোর জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদন, গৃহস্থালী রান্না ও ঘর গরম রাখা, শিল্প কারখানা, পরিবহন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ যেসব খাত পিএম ২ দশমিক ৫ এর মূল উৎস হিসেবে কাজ করছে, সেগুলোকে আমলে নিয়ে সুনির্দিষ্ট উদ্যোগের মাধ্যমে উৎস থেকে নিঃসরণ কমাতে হবে।'

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ও বায়ুর গুণগত মান বিষয়ক বিশেষজ্ঞ আবদুস সালাম জানান, ইনডোর বায়ু দূষণের ক্ষেত্রে রান্না একটি বড় চিন্তার বিষয়, বিশেষ করে পল্লী অঞ্চলে, যেখানে জ্বালানি হিসেবে জৈব যৌগের বহুল ব্যবহার রয়েছে।

তিনি বলেন, 'বাংলাদেশে রান্নার জন্য কয়লা খুব বেশি পরিমাণে ব্যবহৃত হয় না।' তিনি যোগ করেন, রান্নার প্রক্রিয়া বদলে পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটাতে হবে।

আবদুস সালাম আরও বলেন, পিএম ২ দশমিক ৫ এর বৃদ্ধির পেছনে ধুলার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে, যেটি মূলত নির্মাণকাজ, রাস্তায় পরিবহন চলাচল ও বাতাসের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

এইচইআই একটি নিরপেক্ষ, অলাভজনক গবেষণা প্রতিষ্ঠান, যার অর্থায়নে আছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশগত সুরক্ষা সংস্থা (ইপিএ), বিভিন্ন শিল্প, ফাউন্ডেশন ও উন্নয়ন ব্যাংক। প্রতিষ্ঠানটি মূল লক্ষ্য হলো বায়ু দূষণ ও বায়ুর গুণগতমানের সঙ্গে মানুষের স্বাস্থ্যের সম্পর্ক নিয়ে বিশ্বাসযোগ্য ও উচ্চ মানসম্পন্ন বৈজ্ঞানিক তথ্য প্রকাশ করা।

অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments

The Daily Star  | English
Major trade bodies miss election deadline

Major trade bodies miss election deadline as reforms take centre stage

Elections at major trade bodies have missed the 90-day deadline as new administrators of the business organisations seek amendments to the governing rules.

18h ago