সিরাজগঞ্জের চৌহালিতে অসময়ে যমুনার ভাঙন, শতাধিক বাড়ি বিলীন

আকস্মিক নদী ভাঙন রোধে কোনো পূর্বপ্রস্তুতি না থাকায় দুর্ভোগে পড়েছেন নদীপাড়ের মানুষ। ছবি: স্টার

নদী ভাঙনের সঙ্গে লড়াই করতে করতে হাঁপিয়ে উঠেছেন সিরাজগঞ্জের চৌহালির মানুষ। নদী ভাঙন এ অঞ্চলের মানুষের কাছে অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। তবে এ বছর বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার অনেক আগেই শুরু হয়েছে নদী ভাঙন। আকস্মিক নদী ভাঙন রোধে কোনো পূর্বপ্রস্তুতি না থাকায় দুর্ভোগে পড়েছেন নদীপাড়ের মানুষ।

স্থানীয়রা জানান, এ বছর এপ্রিলের আগে থেকেই যমুনা নদীতে পানি বাড়তে শুরু করে। এপ্রিলের প্রথম থেকে নদীতে পানির চাপ বাড়তে থাকায় চৌহালির বিভিন্ন এলাকায় নদীপাড় ভাঙতে শুরু করে।

গত ২ সপ্তাহের ভাঙনের তীব্রতায় নদীপাড়ের অনেকেই হারিয়েছেন বসতবাড়ি, আবাদি জমি। হুমকির মুখে রয়েছে চৌহালির অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় ও মসজিদসহ বিভিন্ন স্থাপনা।

ছবি: স্টার

বাঘুটিয়া ইউনিয়নের মিটুয়ানি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম মোস্তফা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মিটুয়ানিতে নদী ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। কয়েক সপ্তাহ আগেও যমুনা নদী স্কুল ভবন থেকে কয়েকশ গজ দূরে ছিল। নদী ভাঙতে ভাঙতে এখন স্কুলের দোরগোড়ায় এসে পৌঁছেছে। এখনই ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা না নিলে যেকোনো সময় স্কুল ভবনটি নদীগর্ভে চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।'

বাঘুটিয়া ইউনিয়নের বিনুনাই থেকে চর সলিমাবাদ পয়েন্ট পর্যন্ত নদীপাড় ভাঙনের ফলে গত ২ সপ্তাহে এ ইউনিয়নের প্রায় ২০টি বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।

স্থানীয় কৃষকরা জানান, ক্রমাগত নদী ভাঙনে চর এলাকার কৃষকদের শতাধিক বিঘা জমি নদীতে তলিয়ে গেছে।

চৌহালি উপজেলার উমরপুর ইউনিয়নের অবস্থা আরও নাজুক। উমরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত ২ সপ্তাহ ধরে নদী ভাঙন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ইতোমধ্যে ইউনিয়নের প্রায় ৫০টি বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। নদী ভাঙনের প্রকোপে ইতোমধ্যে ইউনিয়ন পরিষদের একটি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে উমরপুর ইউনিয়নের প্রায় ৪ শতাধিক, বাড়ি, স্কুল ও মসজিদসহ অনেক স্থাপনা।'

চেয়ারম্যানের নিজের বাড়িটিও ভাঙনের কবলে পড়ায় গত বুধবার তা সরিয়ে নেওয়া হয় বলে দাবি করেন তিনি।

ছবি: স্টার

আব্দুল মতিন আরও বলেন, 'চৌহালির মানুষ সবসময় নদী ভাঙনের হুমকিতে থাকেন। তবে এ বছর বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার অনেক আগে থেকে নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙন রোধে কোনো পূর্বপ্রস্তুতি না থাকায় সরিয়ে নেওয়ার আগেই অনেকের ঘর-বাড়ি ভাঙনের কবলে পড়েছে।'

চৌহালি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আফসানা ইয়াসমিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অসময়ে নদী ভাঙনে চৌহালির বাঘুটিইয়া ইউনিয়ন, খাসপুকুরিয়া ইউনিয়ন এবং উমরপুর ইউনিয়নে প্রায় শতাধিক বাড়ি নদী ভাঙনের কবলে পড়েছে। ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করতে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।'

তিনি আরও বলেন, 'ক্ষতিগ্রস্তদের ভিজিএফের তালিকায় এনে সহায়তা দেওয়া হবে। এ ছাড়া, ভাঙন প্রতিরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।'

সরেজমিনে চৌহালির বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ভাঙনের হাত থেকে রেহাই পেতে অনেকেই তাদের বসতবাড়ি নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিচ্ছেন। অসময়ে নদী ভাঙন শুরু হলেও এ পর্যন্ত ভাঙন রোধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন নদীপাড়ের মানুষ।

ভাঙন রোধে কাজ করছেন স্থানীয়রা। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. নাসির উদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সিরাজগঞ্জের ভাঙন কবলিত চৌহালির অংশ এতদিন টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে ছিল, খুব সম্প্রতি চৌহালি সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে এসেছে।'

ভাঙন শুরু হওয়ার পর পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা চৌহালির ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন বলে জানান তিনি।

নাসির উদ্দিন আরও বলেন, 'প্রতি বছর জুন-জুলাইয়ে নদী ভাঙন হলেও এ বছর মার্চের মাঝামাঝিতেই আকস্মিকভাবে নদীতে পানি বাড়তে শুরু করায় অসময়ে নদী ভাঙন শুরু হয়েছে।'

নদী ভাঙনের বিষয়ে ইতোমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই ভাঙন প্রতিরোধে কাজ শুরু করা হবে বলেও জানান তিনি।

Comments