ভয়াবহ বন্যায় সিলেট-সুনামগঞ্জে পানিবন্দি ৪০ লাখ মানুষ
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলায় ভয়াবহ বন্যায় অন্তত ৪০ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। পানি বাড়তে থাকায় এখনো নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। আর বন্যাকবলিত এলাকায় দ্রুত উদ্ধার ও ত্রাণের জন্য হাহাকারও বাড়ছে।
বিভিন্ন উপজেলা ছাড়াও বন্যা পরিস্থিতিতে সুনামগঞ্জ শহরের প্রায় শতভাগ প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়াও সিলেট মহানগরীর সুরমা নদী-তীরবর্তী সবকটি এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকায় বিদ্যুৎ-পানিসহ সব ধরনের নাগরিক সুবিধা বন্ধ থাকায় দুর্ভোগ বাড়ছে।
সিলেট জেলায় গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, কানাইঘাট, জৈন্তাপুর, সিলেট সদর, জকিগঞ্জ, বিশ্বনাথ, গোলাপগঞ্জ, বিয়ানীবাজার ও মহানগরী বন্যাকবলিত হয়েছে। সুনামগঞ্জে পৌর শহর, সদর উপজেলা, ছাতক, দোয়ারাবাজার, বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর, মধ্যনগর, ধর্মপাশা, জামালগঞ্জ, জগন্নাথপুর, দিরাই বন্যাকবলিত হয়েছে।
এ ছাড়াও গতকাল শুক্রবার থেকে হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ, নবীগঞ্জ ও হবিগঞ্জ শহরসহ সদর উপজেলা বন্যায় প্লাবিত হতে শুরু করেছে। তবে বিভাগের মৌলভীবাজারে ব্যাপক বর্ষণ নিম্নাঞ্চলে জলমগ্নতা বাড়ালেও বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি।
বন্যা পরিস্থিতিতে গত বৃহস্পতিবার থেকে সুনামগঞ্জের সঙ্গে সারাদেশের যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। সিলেটের ৩টি উপজেলা বিভাগীয় শহর থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। একইসঙ্গে বন্যাকবলিত সবকটি এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকায় দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে।
বিদ্যুৎ না থাকায় মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্কে দুর্যোগ দেখা দিয়েছে। এ ছাড়াও ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন চার্জ না থাকায় অনেকেই তাদের স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না। এমনকি বন্যায় আটকে পড়ারাও কাউকে উদ্ধারের কথা জানাতে পারছেন না।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বন্যায় আক্রান্ত অনেকেই তাদের স্বজনদের খোঁজ জানতে সহযোগিতা চেয়ে পোস্ট দিচ্ছেন। অনেকেই স্বজনদের মাধ্যমে জানাচ্ছেন উদ্ধারের আকুতি।
তাবাসসুম তালুকদার নামে একজন সিলেট শহর থেকে লিখেছেন, 'গতকাল থেকে আমাদের বাসা পুরো ডুবে গেছে। আব্বু আশ্রয় নিয়েছেন ষোলঘর (সুনামগঞ্জ শহর) মাদ্রাসার পাশে পানি উন্নয়ন বোর্ডে। গতকাল থেকে আর কোনো খবর পাচ্ছি না।'
রহমান রাহি নামে আরেকজন লিখেন, 'সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার বাংলাবাজার ছামারুননেছা উচ্চ বিদ্যালয়ের কাছে অসংখ্য মানুষ গৃহবন্দি। আশেপাশে কোনো নৌকা পাওয়া যাচ্ছে না, তাই পার্শ্ববর্তী আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে পারছে না।'
সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার ড. মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সিলেট বিভাগে বন্যা পরিস্থিতি প্রতিনিয়ত আরও ভয়াবহ হচ্ছে। প্রবল বৃষ্টিপাতে নতুন নতুন উপজেলা প্লাবিত হচ্ছে। এ অবস্থায় আমরা উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম বাড়াচ্ছি।'
এখন পর্যন্ত অন্তত ৪০ লাখ মানুষ বন্যাকবলিত হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, 'বন্যা কবলিত এলাকায় প্রচুর মানুষ উদ্ধারের অপেক্ষায় আছেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের মাধ্যমে সমন্বয় করে তাদের উদ্ধার করে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসা হচ্ছে। গতকাল বাংলাদেশ সেনাবাহিনী উদ্ধারকাজে যোগ দিয়েছে। আজ থেকে বাংলাদেশ নৌবাহিনীও উদ্ধার অভিযান শুরু করবে।'
'হঠাৎ করে বন্যা দেখা দেওয়ায় গতকাল পর্যন্ত ত্রাণ বিতরণে একটু সমস্যা হয়েছে। গতকাল আমরা নতুন করে ত্রাণ বরাদ্দ পেয়েছি। আজ সকালের মধ্যে উপজেলা পর্যন্ত পর্যাপ্ত ত্রাণ পাঠানো হয়েছে। দিনের মধ্যে সব স্তরে ত্রাণ বিতরণ শুরু হবে', যোগ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, 'যেসব আশ্রয়কেন্দ্রে রান্নার ব্যবস্থা করা যাবে, সেখানে রান্না করা খাবার আর যেখানে যাবে না সেখানে শুকনো খাবার দেওয়া হবে। প্রশাসনের সব পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী বন্যা ব্যবস্থাপনায় কাজ করছেন।'
Comments