বন্যায় উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ৫ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত

ছবি: শেখ নাসির

সিলেট, সুনামগঞ্জসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আরও সাত জেলায় সাম্প্রতিক বন্যায় প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ সাময়িকভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। সরকারি-বেসরকারি সহায়তা সংস্থার একটি প্ল্যাটফর্মের প্রতিবেদনে এ তথ্য বলা হয়েছে।

নিডস অ্যাসেসমেন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ (এনএডব্লিউজি) জানিয়েছে, আকস্মিক এই বন্যায় প্রায় ৭২ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। পাশাপাশি পানিতে ভেসে গেছে খামারে থাকা ৪ হাজার ৫৬টি প্রাণী ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৮৩ হাজার হেক্টর জমির ফসল।

'উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আকস্মিক বন্যা: তাৎক্ষণিক প্রয়োজন ও পরিস্থিতি বিশ্লেষণ' শীর্ষক প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, বাস্তুচ্যুত জনসংখ্যার তাৎক্ষণিক খাদ্য, পানি ও নগদ অর্থ সহায়তার প্রয়োজন ছিল।

এতে আরও বলা হয়, এখন যারা আয় করতে পারছেন না, তাদের জন্য পশুখাদ্য ও জরুরি জীবন-জীবিকার সহায়তা প্রয়োজন।

এ ছাড়াও, পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব এড়াতে নিরাপদ খাবার পানি নিশ্চিত, পানির উৎস জীবাণুমুক্ত করা ও জরুরি ভিত্তিতে ল্যাট্রিন-নলকূপ মেরামত বা প্রতিস্থাপন করা প্রয়োজন।

প্রতিবেদনে সিলেট ও সুনামগঞ্জ ছাড়াও হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কিশোরগঞ্জ, শেরপুর, ময়মনসিংহ ও নেত্রকোণা জেলার কথা উল্লেখ করা হয়।

গত ১৮ মে আকস্মিক বন্যায় বেশিরভাগ ফসল ও খাদ্যের মজুদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ১৭ জুন ও পরের দিনগুলোতে বন্যায় ঘরবাড়ি, গবাদি পশু ও অবশিষ্ট খাদ্যভাণ্ডারও ভেসে যায়।

দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অঞ্চলসহ ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসাম ও মেঘালয়ে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে সৃষ্ট সাম্প্রতিক বন্যায় সিলেট বিভাগের ৭২ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে, যার মধ্যে সুনামগঞ্জের ৮৯ শতাংশ রয়েছে।

সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের ডাকখিন বারদাল গ্রামের কৃষক আব্দুস সালাম বলেন, 'মে মাসে আমার খেতের ফসল কাটার জন্য প্রস্তুত ছিল। কিন্তু, সে সময় বন্যায় সব পানির নিচে চলে যায় এবং সর্বশেষ বন্যায় সবকিছু নষ্ট হয়ে যায়।'

'এই পরিস্থিতি আমাকে গৃহহীন ও অসহায় করে তুলেছে। আমার বাড়ি ও গবাদি পশু ভেসে গেছে। আমি আমার জীবনে এমন বিধ্বংসী বন্যা দেখিনি', বলেন ৬৫ বছর বয়সী এই কৃষক।

সিলেটের গোয়াইনঘাটের লাকি গ্রামের ৫৫ বছর বয়সী আব্দুল মানান বলেন, 'এবারের বন্যায় আমি সব হারিয়েছি। জানি না কীভাবে বাঁচব।'

এনএডব্লিউজির সহ-সভাপতি কায়সার রেজভে বলেন, সর্বশেষ বন্যায় যে ক্ষতি হয়েছে, তা অনেক বেশি। আমরা এখন যা অনুমান করছি, তা হলো প্রাথমিক মূল্যায়ন। ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমাণ জানতে আরও কয়েকদিন সময় লাগবে। বন্যার দীর্ঘমেয়াদি পরিণতি আরও ভয়াবহ হবে।'

বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পানিবাহিত রোগগুলো ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে মানুষের আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

এনএডব্লিউজি তাদের আগের প্রতিবেদনে বলেছে, মে'তে বন্যার ফলে এই অঞ্চলের প্রায় ১২ লাখ মানুষ প্রভাবিত হয়েছিল এবং খাদ্য মজুতের ৭৮ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।

এ বিষয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আতিকুল হক বলেন, 'চলতি মাসের বন্যায় যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তা ব্যাপক আকার ধারণ করতে পারে। জীবন-জীবিকার ওপর বন্যার কতটা নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, সেটা ঠিক এখনই বলতে পারব না। কারণ সব জায়গায় পানি পুরোপুরি নামেনি। আমরা তথ্য সংগ্রহ করছি এবং এতে কিছুটা সময় লাগবে।'

'বন্যা-কবলিত এলাকা, বিশেষ করে সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোণার এলাকাগুলোর প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে। বন্যা-কবলিত ১৭টি জেলার মূল্যায়ন শেষ করে আমরা স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি গ্রহণ করব', বলেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Killing of trader in old Dhaka: Protests erupt on campuses

Protests were held on campuses and in some districts last night demanding swift trial and exemplary punishment for those involved in the brutal murder of Lal Chand, alias Sohag, in Old Dhaka’s Mitford area.

3h ago