প্রয়োজনের তুলনায় সহায়তা ‘নগণ্য’

সিলেট-সুনামগঞ্জে কাছাকাছি সময়ে দ্বিতীয় দফার বন্যায় বাড়িঘর ডুবে আশ্রয়ের খোঁজে থাকা বানভাসিদের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। শুকনো স্থানে নিরাপদ আশ্রয়ই এখন তাদের প্রধান চিন্তা।

সিলেট-সুনামগঞ্জে কাছাকাছি সময়ে দ্বিতীয় দফার বন্যায় বাড়িঘর ডুবে আশ্রয়ের খোঁজে থাকা বানভাসিদের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। শুকনো স্থানে নিরাপদ আশ্রয়ই এখন তাদের প্রধান চিন্তা।

এদিকে দিনভর অঝোর বর্ষণ দুর্গতদের ভোগান্তি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। নিদারুণ কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে লাখ লাখ পানিবন্দি মানুষ।

কয়েকদিন পানিবন্দি থাকার পর এখনও নিরাপদ দূরত্বে সরে যেতে পারেননি অনেকে। সব ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় কাছে কিংবা দূর দূরান্তে আটকে পড়াদের উদ্ধারে সরকারি তৎপরতাও তেমন দৃশ্যমান না। এর সঙ্গে খাবারের কষ্ট যোগ হয়ে আটকে পড়াদের ভোগান্তি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।

কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ ছাড়া সরকারের অন্য কোনো মন্ত্রী কিংবা উচ্চপদস্থ কাউকে দুর্গত এলাকায় যেতে দেখা যায়নি।

বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্রের তথ্য অনুসারে, বৃষ্টির পানি বাড়ায় শনিবার পর্যন্ত সুনামগঞ্জের প্রায় ৯০ শতাংশ ও সিলেটের ৬৫ শতাংশের বেশি এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ডুবতে বসেছে সুনামগঞ্জের পাশের জেলা নেত্রকোণাও।

সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার মুহম্মদ মোশাররফ হোসেনের শুক্রবারের বক্তব্য অনুসারে, তখনই ২ জেলার অন্তত ৩৫ লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দি ছিল। প্লাবিত বিস্তীর্ণ এলাগুলোতে বিদ্যুৎ না থাকায় অন্ধকারের সঙ্গেও লড়তে হচ্ছে তাদের।

এ অবস্থায় ২ জেলার এই বিপুলসংখ্যক দুর্গত মানুষের জন্য সরকার থেকে যে পরিমাণ ত্রাণ পাঠানো হয়েছে, সেটাকে কেবল অপ্রতুল বললেও ভুল বলা হবে।

সুনামগঞ্জের জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম জানান, শনিবার পর্যন্ত এখানে ত্রাণ হিসেবে নগদ ২০ লাখ টাকা ও ৫ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার পাঠানো হয়েছে। পাশাপশি ১৫ হাজার মানুষকে রান্না করা খিচুড়ি খাওয়ানো হয়েছে।

এদিকে সিলেট জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার আহসানুল আলমের ভাষ্য, শনিবার পর্যন্ত সিলেটের জন্য নগদ ৪২ লাখ টাকা, ৭ হাজার ৯০০ প্যাকেট শুকনা খাবার ও ৬১২ টন চাল দেওয়া হয়েছে।

ত্রাণসহ সার্বিক বিষয়ে কথা বলার জন্য দ্য ডেইলি স্টারের পক্ষ থেকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমানের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

মন্ত্রীর দুর্গত এলাকায় যাওয়ার কোনো পরিকল্পনা আছে কিনা জানতে চাইলে মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা সেলিম হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মাননীয় মন্ত্রী সিলেট যাবেন কিনা, এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত আমার কিছু জানা নেই। তবে যেতে পারেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো প্রোগ্রাম শিডিউল তৈরি হয়নি।'

সেলিম হোসেন আরও বলেন, 'বন্যা তো শুরু হয়েছে গত মাসের ১৬ তারিখে। তখন আমরা সিলেটের গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর ও সদরে গিয়েছিলাম।'

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ গওহার নঈম ওয়ারার ভাষ্য, 'যদি তারা (মন্ত্রী ও উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা) পানিতে ভিজে যাওয়ার ভয়ে (দুর্গত এলাকায়) না গিয়ে থাকেন, তাহলে আমার দুটো কথা আছে। আর যদি বুঝেশুনে মানুষকে বিরক্ত না করার উদ্দেশ্য থেকে তারা সেখানে না গিয়ে থাকেন, তাহলে সেটা ভালো। এ জন্য তারা ধন্যবাদ পেতে পারেন।'

গওহার নঈম বলেন, 'এই মুহুর্তে সিলেটের ডিসির জন্য এক্সট্রা হ্যান্ডস দরকার। ঢাকা থেকে সেখানে হয়তো ওনার ওপরের পদমর্যাদার কাউকে পাঠানো যেতে পারে। সেখানে তার কথার একটা মূল্য থাকবে। অন্যান্য জেলাগুলোতেও তিনি পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন। যিনি ওখানে থাকবেন। এক মাস দুই মাসের জন্য '

পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধার করার বিষয়টি এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, 'যে সমস্ত জায়গায় রান্না করা যাবে, সেসব জায়গায় বিনামূল্যের খাবারের ঘর তৈরি করে দেওয়া উচিত। প্রতি ১০০ জনের জন্য একটি করে খাবারের ঘর হতে পারে, যেটা সম্ভব। মানুষ শুকনা খাবার কতদিন খাবে? শিশুরা কী খাবে? তাদের কথা কেউ ভাবছে না।'

এ ছাড়া ত্রাণ ও উদ্ধার কার্যক্রমে স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশাপাশি স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর সদস্যদের যুক্ত করার তাগিদ দেন গওহার।  বলেন, 'একজন ওয়ার্ড কাউন্সিলরই ভালো জানেন যে, তার ভোটাররটা কোথায়, কীভাবে আছেন। তাদের এই ব্যবস্থাপনায় যুক্ত করতে হবে।'

'গেরিলা রিলিফ ওয়ার্কে' তেমন কোনো ফল আসবে না মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, 'সমস্ত ইউনিয়ন, উপজেলায় সর্বদলীয় ত্রাণ কমিটি গঠন করতে হবে। এটা সময়ের দাবি। এটা না করলে এতগুলো মানুষকে বাঁচানো যাবে না।'

 

Comments

The Daily Star  | English

An economic corridor that quietly fuels growth

At the turn of the millennium, travelling by road between Sylhet and Dhaka felt akin to a trek across rugged terrain. One would have to awkwardly traverse bumps along narrow and winding paths for upwards of 10 hours to make the trip either way.

8h ago