ধলেশ্বরীতে ভাঙন, সাটুরিয়ায় ঝুঁকিতে শতাধিক পরিবার

নদীর পাড়ে ভগ্নপ্রায় ঘরে রান্না করছেন জবেদা খাতুন। ছবি: জাহাঙ্গীর শাহ্/স্টার

ধলেশ্বরী নদীতে ভাঙন দেখা দেওয়ায় ঝুঁকিতে আছেন মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার পাতিলাপাড়া এলাকার শতাধিক পরিবার। গত কয়েকদিনে এ এলাকার ৬টি বাড়িসহ বিস্তীর্ণ ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।

ভাঙনের মুখে পড়েছে আব্দুর রহমান খান উচ্চ বিদ্যালয়সহ শতাধিক বসতঘর ও আবাদী জমি।

পদ্মা, যমুনা, কালীগঙ্গা, ধলেশ্বরী, ইছামতি, কান্তাবতীসহ ১১টি নদী মানিকগঞ্জ জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত। নদীতে যখন পানি বাড়ে এবং কমে তখন নদী তীরবর্তী এলাকায় দেখা দেয় ভাঙন।

এ বছর নদীতে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ধলেশ্বরী নদীতে ভাঙন দেখা দিয়েছে।

সরেজমিনে ভাঙনকবলিত এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পাতিলাপাড়া গ্রামে শতাধিক বিঘা আবাদি জমিসহ ৬টি বসতঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।

ইতোমধ্যে শতাধিক বিঘা আবাদি জমিসহ ৬টি বসতঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ছবি: জাহাঙ্গীর শাহ্‌/স্টার

ওই গ্রামের কৃষক আব্দুর রশিদের বসতবাড়ির অধিকাংশই নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। রান্নাঘরও নদীতে যাওয়ার পথে।

তার স্ত্রী জবেদা খাতুনকে দেখা গেল নদীর পাড়ে ভগ্নপ্রায় একটি ঘরে রান্না করছেন। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এবার ভাঙন শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমাদের ঘর ভেঙে পাশে আব্দুর রহমান খান উচ্চ বিদ্যালয়ের জায়গায় রেখেছি। রান্নাঘরটিও সেখানে নিয়ে যাব।'

'যেভাবে ভাঙছে মনে হচ্ছে বিদ্যালয়ও ভেঙে যাবে। এরপর কোথায় যাব জানি না। আমাদের সব নদীতে চলে যাচ্ছে,' বলেন তিনি।

কৃষক আব্দুর রশিদ কান্নায় ভেঙে পড়েন।

নদী পাড়ের বাড়ির উঠানে গাছ কাটতে দেখা যায় সামসুল হককে।

প্রশ্ন করতেই তিনি বলেন, 'শখ করে ফলের গাছ লাগিয়েছিলাম। কিন্তু নদী ভাঙনের কারণে গাছগুলো কেটে ফেলতে হচ্ছে।'

'বেচবার চাইছিলাম। ৫টা গাছের দাম কয় ৩ হাজার। এজন্য বেচি নাই। শুকাইয়া চুলায় জাল দিবার পারুম। এজন্য কাটতাছি। ঘর খুইলা আগেই অন্য জায়গায় তুলছি। এছাড়া তো আর উপায় নাই,' বলেন তিনি।

গৃহবধু আলেয়া বেগম বলেন, 'এর আগে দুইবার নদীতে ঘর ভাঙছে। এবারও অর্ধেকটা ভাঙছে। এখন কোন জায়গায় যামু, তা নিয়া চিন্তায় আছি।'

নদী পাড়ের স্থানীয়রা জানান, নদী ভাঙনের কবলে পড়েছে আলীম, রশিদ, ইউনুস, মনু, হাসুন, খুইশা, আছান, ছইদা ও রহমের বসত-বাড়িসহ শতাধিক গ্রামবাসীর আবাদি জমি। তাদের বাড়ির অধিকাংশই নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। বাকিটুকু বিলীন হওয়াটা সময়ের ব্যাপার মাত্র।

জানতে চাইলে মানিকগঞ্জ–সাটুরিয়া নির্বাচনী এলাকার সাবেক সংসদ সদস্য (১৯৭৩) এবং আব্দুর রহমান খান উচ্চ বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মফিজুল ইসলাম খান কামাল ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রতিবছর একটু একটু করে ভাঙতে ভাঙতে এবার নদী ভাঙন মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এবার নদী ভাঙনের কবলে গৃহহীন হয়েছে পাতিলাপাড়াসহ আশেপাশের এলাকার মানুষ।'

তিনি বলেন, 'ভাঙনের মুখে পড়েছে উপজেলার সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আব্দুর রহমান খান উচ্চ বিদ্যালয়, শতাধিক বাড়ি-ঘর ও আবাদি জমি। ভাঙনরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। কিন্তু এসব কোন কাজে আসছে না। স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা জরুরি।'

যোগাযোগ করা হলে মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাইন উদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ভাঙনরোধে ওই এলাকায় সাড়ে ৭ হাজার জিও ব্যাগ ফেলার কাজ শুরু হয়েছে। এখন কিছু ফেলা হবে। পানি কমলে বাকিগুলো নদীর পাড়ে স্লোপ তৈরি করে ফেলা হবে, যেন পরবর্তীতে সেখানে আর ভাঙন না হয়।'

'পানি উন্নয়ন বোর্ডর পক্ষ থেকে কালীগঙ্গা নদীর ১২টি পয়েন্টে সাড়ে ১০ কিলোমিটার এলাকায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের অনুমোদন ও অর্থ বরাদ্দ হয়েছে। পর্যায়ক্রমে ধলেশ্বরী নদীর বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হবে,' বলেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English
Tariffs

Economic lessons from the tariff war

Our understanding of tariffs might not be complete.

7h ago