ঢাবি শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের অভিযোগ হল ছাত্রলীগ সভাপতির বিরুদ্ধে
ছাত্রলীগের রাজনৈতিক কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ না করায় এক শিক্ষার্থীকে মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতনের পর 'টর্চারসেল' বানিয়ে নির্যাতন করার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ছাত্রলীগের সভাপতি তানভীর সিকদারের বিরুদ্ধে।
গতকাল শনিবার ভোররাত ২টার দিকে তানভীর সিকদার তার কিছু অনুসারীকে দিয়ে ওই শিক্ষার্থীকে ডেকে নিয়ে নির্যাতন করেন এবং নির্যাতনের পর এমন হুমকি দেন বলে জানান ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী রাজিমুল হক রাকিব।
রাকিব ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগে পড়াশোনা করছেন।
আজ দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'শনিবার ভোররাত ২টার দিকে আমি ঘুমচ্ছিলাম। এমন সময় আমার ইয়ারমেট ৪ জন আমার কক্ষে আসে এবং আমাকে ডেকে তোলে। এরপর তারা আমাকে বলে, সভাপতি তানভীর তার রুমে আমাকে ডাকছেন। ঘুম থেকে হঠাৎ উঠে আমার খুব মাথাব্যথা করছিল। আমি যেতে অনীহা প্রকাশ করি। তারা সভাপতিকে গিয়ে বিষয়টি জানায়। পরে আবার সভাপতি তানভীর তাদেরকে আমার কক্ষে পাঠায় এবং তারা আমাকে জোর করে সভাপতির কক্ষে (২৭) নিয়ে যায়।'
সভাপতির কক্ষের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, 'কক্ষে যাওয়ার পর পরই তিনি (সভাপতি) আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং আমাকে বলেন, প্রোগ্রাম করিস না কেন? এ সময় তিনি পুরো শক্তি দিয়ে আমাকে আঘাত করেন। এ সময় তার কক্ষে আরও প্রায় ২০ জনের মতো ছিলেন। আমার ইমিডিয়েট সিনিয়ররা অনেকেই ছিলেন। তাদের মধ্যে অনেকেই আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। তাদের মধ্যে সামি ও সজীব আমাকে ব্যাপক গালিগালাজ করেছেন।'
'এরপর তানভীর আমাকে হল থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। আমি রুমে ফেরার পর আবার আমাকে ডেকে পাঠানো হয়। আমি সভাপতির রুমে গেলে হুমকি দিয়ে তিনি বলেন, "ভালোভাবে হলে থাকতে চাস? হলে থাকলে প্রোগ্রাম, গেস্টরুম করতে হবে। না হলে টর্চার (নির্যাতন) সেল গঠন করব।"'
এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, 'আগের দিন জসীম উদ্দিন হলের ছাত্রলীগের একটা প্রোগ্রাম ছিল। সেখানে আমি যেতে পারিনি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এসএম হল ছাত্রলীগের সভাপতি তানভীর সিকদার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ক্রিকেট খেলার ফাইনাল খেলায় উপস্থিত থাকতে বলেছি। রাকিবকেও প্রোগ্রামে থাকতে বলেছি। তাকে মারধর করা হয়নি। সে আমার স্নেহের ছোট ভাই। আর কেউ তাকে মারধর করে থাকলে আমি বিষয়টি দেখব।'
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এমন ঘটনা ঘটে থাকলে তা অনাকাঙ্ক্ষিত। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখবো।'
হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. মজিবুর রহমানের মন্তব্য জানতে ফোন দেওয়া হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী রাকিব জানান, হলের অফিস বন্ধ থাকায় তিনি এখনও কর্তৃপক্ষকে লিখিত অভিযোগ জানাননি। খুব দ্রুত কর্তৃপক্ষকে লিখিত অভিযোগ দেবেন তিনি।
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি কার্যালয়ে স্টুডেন্টস এগেইনিস্ট টর্চার (স্যাট) নামক একটি মানবাধিকার সংগঠন জানায়, করোনাকালে ক্যাম্পাস খোলার পর গত ৫ মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬টি আবাসিক হলে ১০টি পৃথক ঘটনায় মোট ১৮ জন শিক্ষার্থী শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন৷ নির্যাতনের বেশিরভাগ ঘটনায় ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জড়িত।
Comments