মতামত

কলেজ শিক্ষার্থীদের জন্য জাতীয় পাঠ্যক্রম পুনর্বিবেচনার দাবি রাখে

জাতীয় পাঠ্যক্রমের আওতাধীন সব শিক্ষার্থীকেই দিতে হয় বোর্ড পরীক্ষা। তবে তাদের কাছে কলেজ জীবনটা একটু ভিন্ন, কিছুটা বেদনা-বিধুর।

কারণ এই পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের একই সঙ্গে এইচএসসি পরীক্ষা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত হতে হয়। এর জন্য সময় সাকুল্যে ২ বছর।

এমন পরিস্থিতিতে কলেজ শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করার কথা শিক্ষকদের। তবে এই ক্ষেত্রে প্রায়শই তারা ব্যর্থ হন।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার আগে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ এইচএসসি পরীক্ষা। এইচএসসি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার খানিকটা ভিন্ন। কেননা, ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে সিলেবাসের পরিসর থাকে বিস্তৃত। কলেজ জীবনের শুরু থেকেই এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের সজাগ থাকতে হয়।

অনেক কলেজে শিক্ষকরা এমন বিষয় বা চ্যাপ্টার পড়ান না যেগুলো থেকে বোর্ড পরীক্ষায় প্রশ্ন আসার সম্ভাবনা কম। এমনকি যদি সেগুলো ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রাসঙ্গিকও হয় তবুও এড়িয়ে যাওয়া হয়। কারণ শিক্ষকরা মনে করেন শিক্ষার্থীরা ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার সময় সেগুলো শিখে নেবে। অথচ, ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতির সময় নতুন নতুন নানান বিষয় পড়েই শিক্ষার্থীরা সময় পায় না। এমন অবস্থায় কলেজের ২ বছরে যেসব বিষয় বা চ্যাপ্টার পড়া হয়নি সেগুলো নতুন করে পড়া বা এর জন্য মনোযোগ দেওয়া কঠিন হয়ে যায়।

কলেজের কিছু শিক্ষক জোর দেন, প্রশ্নের উত্তর যেন বিস্তারিত ও বড় হয় তার উপর। সেটা প্রবন্ধ হোক আর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর। অথচ, প্রবন্ধের জন্য বেশি লিখতে হলেও সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর সুন্দর ও সঠিকভাবে ৪ লাইনেও লেখা সম্ভব হতে পারে। আমরা সবাই এটাই করছি। ক্লাসে এমন অবস্থার কারণে শিক্ষার্থীরা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় ভালো কিছু প্রত্যাশা করতে পারে না।

ভর্তি পরীক্ষায় একজন শিক্ষার্থীকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সমস্যার সমাধান করার ও চাপের মধ্যে ভালো কিছু করার সক্ষমতার প্রমাণ দিতে হয়। সেখানে বিস্তারিত ও বড় করে উত্তর লেখার প্রতিযোগিতায় নামতে হয় না।

সত্যি বলতে, শিক্ষকরা সাধারণত ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করার কৌশল নিয়ে শ্রেণীকক্ষে পরামর্শ দেন না। ফলে, এর জন্য বাধ্য হয়ে শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট টিউশন বা কোচিংয়ে যেতে হয়। শুধুমাত্র বোর্ড পরীক্ষার জন্য পড়ানোর পরিবর্তে শিক্ষকদের উচিত কম সময়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর বের করতে সময় সাশ্রয়ী ও কার্যকর কৌশলগুলো শিক্ষার্থীদের শিখিয়ে দেওয়া। সেইসঙ্গে বোর্ডের উচিত, মূল্যায়নের মানদণ্ড পুনর্বিবেচনা করা।

টেস্ট পেপার বোর্ড পরীক্ষার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। টেস্ট পেপার থেকে পরীক্ষার প্রশ্ন সম্পর্কে ধারণা পাওয়ার কথা শিক্ষার্থীদের। সেই সঙ্গে তাদের একটি প্রস্তুতিও সম্পন্ন হয়। কিন্তু টেস্ট পেপারে প্রকাশিত উত্তরে প্রায়শই ভুল থাকার কারণে দেখা দেয় সমস্যা।

এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে ব্যস্ত হয়ে পরে শিক্ষার্থীরা। গত ২ বছরে যে পদ্ধতিতে পড়ে এসেছে সেগুলো ফেলে মাত্র ৩ থেকে ৪ মাসের মধ্যে নতুন নতুন পদ্ধতি তাদের শিখতে হয়।

শিক্ষক যদি ক্লাসের সময়ই ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতির বিষয়ে পরামর্শ দেন এবং কলেজের শুরু থেকেই শিক্ষার্থীদের দিকনির্দেশনা দেন, তাহলে শেষ সময়ে গিয়ে শিক্ষার্থীদের আর অকুল পাথারে পড়তে হয় না। তাদের ওপর থেকে চাপ অনেক কমে যায়।

আহমেদ নুজহা ঐশি, [email protected]

Comments

The Daily Star  | English

In Sarishabari, para sandesh sweetens Eid celebrations

Behind each piece of this delicate dessert lies hard work and precision

1h ago