সাকিবের বিগ হিটিং স্কিল এখনও শতভাগ নয়: ফাহিম
সব ধরনের টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে হাফসেঞ্চুরির জন্য সাকিব আল হাসানের প্রায় আড়াই বছরের অপেক্ষার ইতি ঘটেছে সম্প্রতি। গত ১ ফেব্রুয়ারি বিপিএলে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষে ফরচুন বরিশালের অধিনায়ক খেলেন ঠিক ৫০ রানের ইনিংস। ফিফটির খরা কাটলেও তার বিগ হিটিং স্কিলে এখনও কিছুটা ঘাটতি দেখতে পাচ্ছেন দলটির ব্যাটিং পরামর্শক নাজমুল আবেদিন ফাহিম। টি-টোয়েন্টি সংস্করণের অবিচ্ছেদ্য এই অনুষঙ্গের জন্য সাকিবকে আরও স্কিলসম্পন্ন করে তোলার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
চলতি বিপিএলে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকদের তালিকায় এখন নয়ে আছেন সাকিব। এই বাঁহাতির ব্যাট থেকে ছয় ইনিংসে এসেছে মোট ১৩৭ রান। তার স্ট্রাইক রেট বেশ ভালো, ১৩৩। বরিশালের সবশেষ দুই ম্যাচে যথাক্রমে ২৭ বলে ৪১ ও ৩১ বলে ৫০ রান করেন বাংলাদেশের এই তারকা অলরাউন্ডার। এর আগে আসরে রান ও স্ট্রাইক রেট নিয়ে বেকায়দায় ছিলেন তিনি। গত বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও তার স্ট্রাইক রেট ছিল মলিন, মাত্র ১০৯.১৭।
অনেকদিন ধরেই বিগ হিটিংয়ে সাকিবের কমতি দেখতে পাচ্ছেন তার গুরু ফাহিম। তাই শিষ্যকে নিয়ে বাড়তি কাজ করছেন তিনি। ইতোমধ্যে সেটার ফলও মিলতে শুরু করেছে বলে রোববার গণমাধ্যমকে জানান তিনি, 'যেটা হয় যে আমরা জানি, রানের চাকাটা চালিয়ে যাওয়াটা খুব জরুরি এবং সেটা ১২০/১৩০ স্ট্রাইক রেটে যদি না করা যায়, তাহলে দল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সাকিব নিজের ব্যাটিং থেকে বুঝতে পারে কখন ডট বল দিয়ে ওভার বাউন্ডারি না মেরে ইনিংস খেলতে হয়। অনেক সময় ১০০/১০৫/১১০-এর উপরে স্ট্রাইক রেট নিয়ে যাওয়াটা কঠিন হয়। কিন্তু একজন ব্যাটসম্যান যখন জানে যে "প্রয়োজন হলে আমি একটা ওভার বাউন্ডারি মারতে পারি এবং উদ্ভাবনী শট খেলতে পারি", তখন ইনিংস গোছানোটা তার সহজ হয়। এখন যদি ও প্রয়োজনে ২/৪টা ডট বলও দেয়, সমস্যা হবে না। ও জানবে, যখন প্রয়োজন হবে, একটা-দুটা ছয় মারতে পারব। আমরা শেষ দুটা ম্যাচে দেখেছি, হঠাৎ করে যখন প্রয়োজন হয়েছে, ও স্ট্রাইক রেটটা বাড়িয়ে নিয়েছে। সেই বিকল্পটা হাতে থাকলে ব্যাটিংয়ের পরিকল্পনা করাটা খুব সহজ হয়।'
বিকেএসপির ক্রিকেট উপদেষ্টার দায়িত্বে থাকা ফাহিম যোগ করেন, 'টি-টোয়েন্টিতে আমার মনে হয়, বিগ হিটিংয়ের যে ব্যাপারটা, ওই জায়গায় গিয়ে ও থমকে গিয়েছিল। অনেকদিন ধরে দেখছি, ওই জায়গাটায় গিয়ে আটকে গেছে। কিন্তু সাম্প্রতিক দুটা ম্যাচে দেখেছি, ওই জায়গাটা উতরে যেতে পারছে এবং সেটা নিয়ে কিন্তু আমরা কাজ করছি। ও নিজেও কাজ করছে মনোযোগ দিয়ে। আমার মনে হয়, ওই জায়গাটা যদি অতিক্রম করতে পারে... যখন প্রয়োজন তখন একটা আলগা বলে ছয় মেরে দেওয়ার যে ব্যাপারটা, সেটা যখন ওর আত্মস্থ হবে, আমার মনে হয়, খেলাটা ওর বদলে যাবে। ও খুব আরামে খেলবে, বড় ইনিংস খেলতে পারবে। ৭০/৮০/৯০ রানের ইনিংসও আমি আশা করছি ওর কাছ থেকে। দেখা যাক কী হয়।'
সাকিবের বিগ হিটিং স্কিল আগের চেয়ে ভালো হলেও এখনও পূর্ণমান পাচ্ছে না ফাহিমের কাছ থেকে। তবে সাকিব এই ব্যাপারে উন্নতি করতে ভীষণ মনোযোগী। তাই ফাহিমের প্রত্যাশা, শিগগিরই তাকে বিগ হিটিংয়ে আরও স্কিলসম্পন্ন দেখা যাবে, 'অনেকের স্কিলে সমস্যা থাকে। বিগ হিটিংয়ের জন্য যে স্কিলটা দরকার, সেটাতে সমস্যা থাকতে পারে এবং সেটা থেকে মানসিক একটা সমস্যা দেখা যায়, আত্মবিশ্বাসের একটা সমস্যা দেখা যায়। এই স্কিলটার ব্যাপারে আমরা ওর সঙ্গে কিছুটা কাজ করেছি। ওর স্কিল এখন আগের চেয়ে অনেকটা ভালো। এখনও যে ১০০ ভাগ হয়েছে তা না। খুব মনোযোগ দিয়ে ও কাজ করেছে। যে ইনিংসগুলো খেলে, সেখান থেকেও প্রচুর শিক্ষা নেয় ও। কেমন খেলেছে, কী করেছে। আমার মনে হয়, একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আছে এবং এটা যদি ও চালিয়ে যায়, হয়তো ৫/৭টা ম্যাচ খেললে আরও ১০/১২ দিন পর ওকে আরও স্কিলসম্পন্ন দেখতে পাব।'
এবারের বিপিএলে প্রথম তিন ম্যাচে তিন নম্বরে ব্যাট করেন সাকিব। চতুর্থ ম্যাচে অবশ্য ব্যাটিং অর্ডারের সাতে নেমে গিয়েছিলেন তিনি। এরপর আবার পজিশন পাল্টে শেষ দুই ম্যাচে তিনি নামেন চারে। এই পজিশনে ব্যাটিং উপভোগ করায় সাকিবকে আসরের বাকি অংশে উপরের দিকেই নামতে দেখা যাবে বলে জানান ফাহিম, 'একটা ম্যাচে সাতে (ব্যাটিং) করেছে। এখন বোধ হয় উপরেই করবে। ধারাবাহিকভাবে ও এখন তুলনামূলক একটু ভালো খেলছে। ওকে আত্মবিশ্বাসী মনে হচ্ছে এবং ও উপভোগ করছে ব্যাটিংটা। আমরা ওকে বোধ হয় উপরেই দেখতে পাব এখন। বেশ কিছু ওভার থাকতেই ও মাঠে নামবে।'
Comments