রানে ভরা উইকেট কেন এখন মন্থর?
এক সময় দেশের সবচেয়ে রানপ্রসবা মাঠগুলোর একটি ছিল সিলেট। বিপিএল কিংবা আন্তর্জাতিক ম্যাচগুলোতে সিলেটের মাঠে প্রায়ই বড় রানের দেখা পাওয়া গেছে। কিন্তু গত বছর দেড়েক ধরে বদলে গেছে উইকেটের আচরণ। এখন যেন মিরপুরের মন্থর বাইশ গজের আরেক ছবি মেলে এখানে। এবার বিপিএলেও সিলেটে বড় রান হবে কিনা তা থাকছে সংশয়।
অবকাঠামোর দিক থেকে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম সন্দেহাতীতভাবে দেশের সেরা ক্রিকেট ভেন্যু। একটি স্টেডিয়াম প্রাঙ্গণেই পাশাপাশি আছে দুই মাঠ। নতুন তৈরি হওয়া গ্রাউন্ড-২, যা একাডেমি গ্রাউন্ড নামেও ডাকা হয়। সেই মাঠে রানের দেখা পাওয়া গেলেও ঘরোয়া ক্রিকেটের আসরগুলোতে সম্প্রতি মূল মাঠে ছিল চরম রান খরা।
সর্বশেষে বিসিএলের ওয়ানডে আসরে বল উইকেটে পড়ে বেশ মন্থর গতিতে ব্যাটসম্যানদের কাছে আসতে দেখা গেছে। এ নিয়ে হতাশা জানিয়েছেন দেশের ক্রিকেটাররাও। আসন্ন আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজে দুটি টি-টোয়েন্টি হওয়ার কথা ছিল সিলেটের মাঠে। কিন্তু জানা গেছে, উইকেটের আচরণের কারণেই খেলাগুলো সরিয়ে নেওয়া হয়েছে মিরপুরে।
যেসব কারণে উইকেটের এই দশা
এক সময় যে মাঠে হতো রান উৎসব, সেখানে কেন ব্যাটসম্যানরা ধুঁকবেন? ঘনিষ্ঠ সূত্রের খবর, সিলেটের মাঠের কিউরেটর সঞ্জিব আগারওয়াল ও মাঠকর্মীদের মধ্যে সমন্বয়ের ঘাটতি, অতিরিক্ত কাজের চাপ এর পেছনে কাজ করেছে। করোনাভাইরাসের স্থবিরতার সময়টায় মাঠ পরিচর্যা করতে গিয়ে ঘটেছে কিছু বিপত্তিও। সিলেট স্টেডিয়ামের অবস্থান যেখানে তার কাছেই চা-বাগান। পাশে আছে ঘন গাছপালার একটি ছোটখাটো টিলা বনভূমি। এক ধরণের ঘাস খাওয়া পোকা তাই প্রায়ই হানা দেয় এই মাঠে। সেই পোকার জন্য স্প্রে ব্যবহার করা হয়। এক ধরণের স্প্রে ব্যবহার করা হয়েছিল উইকেটেও। এরপর থেকেই উইকেট হয়ে পড়েছে স্যাতস্যাতে। উইকেটের বাউন্সেও হয়েছে গড়বড়।
এছাড়াও বড় একটি কারণ জনবলের ঘাটতি। গত দেড় বছরের সময়টায় তৈরি করা হয়েছে গ্রাউন্ড-২। যেখানে সেন্টার উইকেট আছে আটটি। দুই পাশে অনুশীলনের জন্য করা হয়েছে চারটি করে আরও আটটি উইকেট। মূল মাঠের পাশাপাশি সঞ্জিব ও তার দল গ্রাউন্ড-২ এর উইকেট তৈরির জন্যও কাজ করেছেন। মূল মাঠের উইকেটগুলোর পরিচর্চা ও রক্ষণাবেক্ষনে যতটুকু সময় দেওয়া দরকার তা সঙ্গত কারণেই দেওয়া যায়নি। উইকেটের মন্থর ভাবও তাই কাটছে না।
তবু আশাবাদ
উইকেট নিয়ে অস্বস্তি আছে বিস্তর। বিসিবি পরিচালক ও স্থানীয় সংগঠক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল আশায় আছেন রান খরা কাটিয়ে বিপিএলেই ফিরবে স্বস্তি, 'আসলে উইকেটে হুট করে কেন মন্থরতা চলে এসেছে এর কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। উইকেট আগের অবস্থায় ফিরিয়ে রান বান্ধব করার ব্যাপারে আমরা কাজ করছি। আশা করছি এই সমস্যা কেটে যাবে।'
রাতের ম্যাচে রানের আশা, বেশি চিন্তা দুপুরের ম্যাচ নিয়ে
উইকেট মন্থর হলেও শিশির থাকলে বল স্কিড করে ব্যাটে আসবে ভালো গতিতে। মিরপুরেও দেখা গেছে দিনের ম্যাচে ব্যাটসম্যানরা ধুঁকলেও রাতেই মিলেছে বড় রান। সিলেটেও এমনটা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। ভৌগলিক অবস্থানের কারণে মিরপুর থেকে সিলেটের মাঠে বছরের এই সময়টায় শিশিরের প্রভাব থাকবে অনেক বেশি। রাতের ম্যাচগুলোতে বোলারদের বিশেষ করে স্পিনারদের বল গ্রিপ করতে বেশ সমস্যাই হওয়ার কথা। সেরকম হলে ব্যাটসম্যানদের জন্য বড় শট খেলায় থাকবে আদর্শ পরিস্থিতি। তবে দুপুরে উইকেটের নরম ভাব তৈরি করবে উল্টো পরিস্থিতি। রৌদ্রজ্জ্বল আবহাওয়া থাকলে ব্যাটসম্যানদের জন্য চ্যালেঞ্জ কিছুটা কম থাকতে পারে।
Comments