চরম হতাশার দিনে প্রাপ্তি কেবল এক উইকেট
ঘাসে ভরা উইকেটে প্রত্যাশিত টস ভাগ্য পক্ষে এসেছিল বাংলাদেশের। কিন্তু সারাদিনে এরপর আর কিছুই পক্ষে এলো না। প্রথম টেস্টে দারুণ করলেও এবার সহায়ক কন্ডিশনের সুবিধা কাজে লাগাতে পারেননি ইবাদত হোসেন, তাসকিন আহমেদরা । মুমিনুল হকদের হতাশায় ডুবিয়ে দুর্বার হয়ে উঠে কিউই কাপ্তান টম ল্যাথামের ব্যাট। দলকে রানের পাহাড়ে নেওয়ার পথে অধিনায়ক ল্যাথাম আছেন ডাবল সেঞ্চুরির কাছে। তার সঙ্গে দুইশো রানের জুটি গড়া ডেভন কনওয়ে সেঞ্চুরির কিনারে।
রোববার ক্রাইস্টচার্চের হ্যাগলি ওভালে দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম দিনটি পুরোটাই নিউজিল্যান্ডের। ৯০ ওভার ব্যাট করা তারা ১ উইকেটে তুলেছে ৩৪৯ রান। ৩.৮৭ রানরেট বলে দিচ্ছে পুরো দিনে স্বাগতিক ব্যাটসম্যানদের দাপট। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ল্যাথাম-কনওয়ে তুলে গেলেছেন ২০১ রান।
২৭৮ বলে ২৮ চারের পসরায় ১৮৬ রানে অপরাজিত আছেন ল্যাথাম। ১৪৮ বল ১০ চার, ১ ছক্কায় ৯৯ রানে ব্যাট করছেন কনওয়ে। ৫৪ করা উইল ইয়ংকে ফিরিয়ে দিনে বাংলাদেশের একমাত্র সফল বোলার শরিফুল ইসলাম।
বাকিদের ছিলেন শরিফুলই ছিলেন কিছুটা আঁটসাঁট। ওভার প্রতি রান দিয়েছেন ২.৭৭ করে। তাসকিন রান দেন ৩.০৯ করে। বাংলাদেশকে আগের টেস্ট জেতানোর নায়ক ইবাদত ছিলেন ভীষণ খরুচে। কিছু সুযোগ তৈরি করার পাশাপাশি দিয়েছেন প্রচুর আলগা বল। মাঝে মাঝে কিছু বল জায়গায় ফেললেও থাকেনি ধারাবাহিকতা। তার ২১ ওভার থেকে এসে গেছে ১১৪ রান, ইবাদতের ইকোনমি ৫.৪১! অফ স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ ২৫ ওভার হাত ঘুরিয়ে দিয়েছেন ৯৫ রান।
মাউন্ট মাঙ্গানুইতে ঐতিহাসিক জয়ের পর আকাশে উড়তে থাকা বাংলাদেশ নামার আগেই পায় মুশফিকুর রহিমকে না পাওয়ার ধাক্কা। কুঁচকির চোটে শেষ মুহূর্তে ছিটকে যান অভিজ্ঞ এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান। চোট পাওয়ায় আগেই ছিটকে গিয়েছিলেন ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয়। তাদের বদলে একাদশে আনতে হয় দুই বদল।
জয়ের বদলে লাল বলে একেবারেই অনভিজ্ঞ ও বিবর্ণ পারফর্মার নাঈম শেখকে অভিষেক করিয়ে দেয় বাংলাদেশ। কিপার ব্যাটসম্যান নুরুল হাসান সোহানকে একাদশে রেখে লিটন দাসকে খেলানো হচ্ছে বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান হিসেবে।
হ্যাগলি ওভালের মাঠ থেকে উইকেট আলাদা করা যাচ্ছিল না। পেসারদের জিভে জল আসার মত এমন পরিস্থিতিতে তাসকিন-শরিফুল মিলে করেন সাদামাটা শুরু। খুব একটা মাউন্স-মুভমেন্ট আদায় করতে দেখা যায়নি তাদের।
নবম ওভারে বল করতে আসেন আগের টেস্টের নায়ক ইবাদত। প্রথম বলে বাউন্ডারি খাওয়ার পরের বলেই উইকেট পেয়ে গিয়েছিলেন তিনি। তার ভেতরে ঢোকা বলে পরাস্ত হয়েছিলেন ল্যাথাম। জোরালো এলবিডব্লিউর আবেদনে সাড়া দেন আম্পায়ারও। তবে ল্যাথাম রিভিউ নিলে দেখা যায় বল বেরিয়ে যাচ্ছে লেগ স্টাম্প মিস করে।
দুই বল পরই প্রায় একই রকম আরকে পরিস্থিতি। এবার হালকা ভেতরে ঢোকা আরেক বলে পেছনের পায়ে খেলতে গিয়ে মিস করেন ল্যাথাম। আবারও এলবিডব্লিউর আবেদনে সাড়া দেন আম্পায়ার। কিন্তু আবারও বাংলাদেশের উল্লাস থেমে যায় ল্যাথাম রিভিউ নেওয়ার পর। এবার দেখা যায় বল উইকেটের বাড়তি বাউন্সের প্রভাবে বেরিয়ে যাচ্ছে উপর দিয়ে।
ল্যাথামকে ফিরিয়েও ফেরাতে না পারার হতাশায় পুড়তে হয় বাকি দিন। পুরো দিনে আর একবারও পরাস্ত হননি নিউজিল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক। খেলতে থাকেন অনেকটা ওয়ানডে মেজাজে। এক পর্যায়ে তার স্ট্রাইকরেট ছিল আশির কাছাকাছি।
২৫ ওভারের প্রথম সেশনে বিনা উইকেটে নিউজিল্যান্ড তুলে ফেলে ৯২ রান। লাঞ্চের পর শুরুতেই ফিরতে পারতেন উইল ইয়ং। ইবাদতের বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়েছিলেন তিনি। বা দিকে অনেকটা ঝাঁপিয়ে ক্যাচটি মুঠোয় জমাতে পারেননি লিটন দাস। জীবন পেয়ে অবশ্য আর ২১ রান যোগ করেন তিনি। ৫৪ করে শরিফুলের বলে স্কয়ার কাটে ধরা পড়েন পয়েন্টে।
এরপর কনওয়ে এসে যোগ দেন অধিনায়কের সঙ্গে। ল্যাথাম কনওয়ের জুটি জমেও উঠে দ্রুত। পেসারদের দিয়ে কাজ না হওয়ায় মেহেদী হাসান মিরাজের অফ স্পিন দিয়ে দুই বাঁহাতিকে আলগা করতে চেয়েছিলেন মুমিনুল। মিরাজকে একের পর এক রিভার্স সুইপে থিতু হতে দেননি কনওয়ে। মাঝে মাঝে দু'একবার পরাস্ত হলেও আসেনি তেমন বলার মতো কোন সুযোগ।
উইকেটে নেই স্পিনারদের জন্য আহামরি কোন রসদ। তিন পেসারের বাইরে বিকল্প হিসেবে বাংলাদেশের হাতে নেই আর কোন পেসার। সব মিলিয়ে নিউজিল্যান্ডকে রানার পাহাড়ে চড়া আটকানোর সম্ভাবনা ক্ষীণ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
(প্রথম দিন শেষে)
নিউজিল্যান্ড প্রথম ইনিংস: ৯০ ওভারে ৩৪৯/১ (ল্যাথাম ১৮৬*, ইয়ং ৫৪, কনওয়ে ৯৯* ; তাসকিন ০/৬৮ , শরিফুল ১/৫০, ইবাদত ০/১১৪, মিরাজ ০/৯৫, শান্ত ০/১৫)
Comments