বাংলাদেশের অনেক উত্তর খুঁজে বেড়ানোর আরেকটি টেস্ট

Mominul Haque & Russell Domingo
অধিনায়ক মুমিনুল হক ও কোচ রাসেল ডমিঙ্গোর সামনে আরেকটি চ্যালেঞ্জ। ছবি: ফিরোজ আহমেদ

দুঃসময়টা যেন কোনভাবেই কাটাতে পারছে না বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে শুরু হওয়া হতাশার সময় বয়ে চলেছে ঘরের মাঠে পাকিস্তান সিরিজেও। ঘরের মাঠে শক্তিশালী দলের তকমা ম্লান করে এখন সব ম্যাচেই হেরে যাওয়ার শঙ্কা। ২০১১ সালের পর আর যা দেখেনি দেশের ক্রিকেট। ছন্দে থাকা পাকিস্তানের সামনে ফল নিজেদের দিকে নিয়ে আসার চ্যালেঞ্জ জানানোর অবস্থাও যেন নেই মুমিনুল হকের দলের। বরং নানাবিধ ঘাটতি কীভাবে দূর করা যায় সেই উত্তর খুঁজতেই হয়রান টিম ম্যানেজমেন্ট।

শনিবার সকাল ১০টায় মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রশ্নাতীতভাবেই ফেভারিট হিসেবে শুরু করবে পাকিস্তান। জয় বহু দূরের পথ, হোয়াইটওয়াশ এড়াতে ড্র করা বাংলাদেশের সামনে ভীষণ চ্যালেঞ্জের। এই ম্যাচ হেরে গেলে ২০১১ সালের পর কোন প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ঘরের মাঠে সবগুলো ম্যাচে হারের হতাশা যোগ হবে বাংলাদেশের।

Mushfiqur Rahim & Shakib Al hasan
মুশফিকুর রহিম ও সাকিব আল হাসান। ফাইল ছবি: ফিরোজ আহমেদ

সেবার পাকিস্তানের বিপক্ষে দুই টেস্ট, তিন ওয়ানডে ও একটি টি-টোয়েন্টি হারের স্বাদ পেতে হয়েছিল স্বাগতিকদের। এরপর ঘরের মাঠে কোন দলের বিপক্ষেই হয়নি তেমন বিস্বাদ অভিজ্ঞতা।  ২০১৫ সালে অবশ্য ঘরের মাঠে পাকিস্তানকে ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করে মাশরাফি মর্তুজার দল, জেতে একমাত্র টি-টোয়েন্টিতেও। টেস্টে বাংলাদেশ অবশ্য সিরিজ হেরেছিল ১-০ ব্যবধানে। এসব স্মৃতি ম্লান করে লম্বা সময় পর এবার তাই সব হারের শঙ্কা দিচ্ছে উঁকি।

অথচ প্রথম টেস্টের একটা পর্যায় পর্যন্ত দেখা মিলেছিল ভিন্ন কিছুর আভাস । খারাপ অবস্থা থেকেও ঘুরে দাঁড়িয়ে ম্যাচে ছিল বাংলাদেশ, প্রথম ইনিংসে নিতে পেরেছিল লিড। কিন্তু সেই নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখে ম্যাচ নিজেদের দিকে নিয়ে আসার পেশাদারি যে মুন্সিয়ানা তা দেখাতে আরেকবার ব্যর্থ হয়েছেন মুমিনুলরা। শেষে গিয়ে মিলেছে সেই হতাশার হারই।

Russell Doming & Shakib Al hasan
কোচের সঙ্গে সাকিব। ছবি: ফিরোজ আহমেদ

চট্টগ্রাম টেস্টে দুই ইনিংসেই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তার কারণ ছিল টপ অর্ডার। দুই ইনিংসে যথাক্রমে ৪৯ রান ও ২৫ রানে পড়েছিল ৪ উইকেট। টপ অর্ডার সংকট থেকে কীভাবে বের হওয়া যায় এই উত্তর খুঁজে বের করা হয় টিম ম্যানেজমেন্টের সবচেয়ে বড় চিন্তার জায়গা।

এই কারণে অস্থিরতায় ভুগে বিস্ময়করভাবে নাঈম শেখকে ডেকে নেওয়া হয় স্কোয়াডে। নাঈমের অবশ্য খেলার সম্ভাবনা নেই। তবে ওপেনিংয়ে একটি বদল অবধারিত। টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়ে ছিটকে পড়ায় নেই সাইফ হাসান।

তার ঘাটতি পূরণে ডান-বাম কম্বিনেশনেই বেশি গুরুত্ব দেওয়ার কথা জানান মুমিনুল। সেক্ষেত্রে মিরপুরে বাংলাদেশে ৯৯তম টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবে অভিষেক হতে পারে মাহমুদুল হাসান জয়ের। টপ অর্ডারে নাজমুল হোসেন শান্ত ও অধিনায়ক মুমিনুলের ব্যাটের দিকেও তাকিয়ে থাকবে দল।

স্বাগতিক অধিনায়কের জন্য সবচেয়ে স্বস্তির খবর সাকিব আল হাসানের যুক্ত হওয়া। সাকিব ফেরায় টিম কম্বিনেশনেও এসেছে ভারসাম্য।  এখন ব্যাটসম্যান না কমিয়ে পাঁচ বোলার নিয়ে খেলার পথও খোলা আছে। তবে সাকিব ফিরলেও বাংলাদেশের চার বোলার নিয়ে খেলার সম্ভাবনা আছে যথেষ্ট। সেক্ষেত্রে একজন পেসারের বদলে একাদশে আসবেন সাকিব। তিন স্পিনারের সঙ্গে থাকবেন এক পেসার। আট নম্বরে ব্যাট করবেন ইয়াসির আলি চৌধুরী। আট ব্যাটসম্যানের এমন কম্বিনেশন নিয়ে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে গত জুলাই মাসে টেস্ট খেলেছিল বাংলাদেশ।

সংবাদ সম্মেলনে তেমন আভাস মিলে মুমিনুলের কথাতেও,  'সাকিব ভাই দলে আসলে একটু সহজ হয়। এখন পর্যন্ত উনার সবকিছু ঠিকঠাক আছে, ঠিকঠাক দেখেছি। উনি আসায় আমরা ৪ বোলার, ৭ ব্যাটসম্যান নিয়ে চিন্তা ভাবনা করছি।'

৭ বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যানের বাইরে আছেন উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান লিটন দাস। আগের টেস্টে প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি, দ্বিতীয় ইনিংসে ফিফটি করা লিটন সাম্প্রতিক সময়ে টেস্টে দলের সেরা পারফর্মার। কাজেই বাংলাদেশের ব্যাটিং যে হতে যাচ্ছে অনেক লম্বা তা স্পষ্ট। এমন কম্বিনেশনে আরেক কারণ মানহীন পেস আক্রমণ। চট্টগ্রামে এক ইনিংসে ভাল করেছিলেন ইবাদত হোসেন। পরের ইনিংসে তিনি মলিন। দুই ইনিংসেই উইকেট নেওয়ার কোন পরিস্থিতিই তৈরি করতে পারেননি আবু জায়েদ রাহি।

তাসকিন আহমেদ স্কোয়াডে ফিরলেও সামনে নিউজিল্যান্ড সফর থাকায় তাকে নিয়ে ঝুঁকি নিতে চায় না দল। হাতের সেলাই এখনো কাঁচা থাকায় তাকে একাদশের বাইরে রাখারই আভাস দেন অধিনায়ক। পেস আক্রমণের সংকটের সমাধান কি? এই উত্তরও তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে দলকে।

Gamini De Silva & Mominul Haque
মিরপুরের প্রধান কিউরেটর গামিনি ডি সিলভার কাছ থেকে কি জেনে নিচ্ছেন অধিনায়ক মুমিনুল হক? ছবি: ফিরোজ আহমেদ

এই টেস্টের কৌতূহল জাগানিয়ে আরেকটি বিষয় হচ্ছে উইকেট। মুমিনুল মনে করছেন উপমহাদেশের দল বলে পাকিস্তানের বিপক্ষে হবে না তেমন টার্নিং উইকেট। অনেকটা ফ্লাট উইকেটই প্রত্যাশা তাদের। যদিও মিরপুরের উইকেট যে খুব বেশি ব্যাটিং স্বর্গ হয় না ইতিহাসই সাক্ষ্য দেয়। বৃষ্টি ছাড়া এখানে টেস্ট ড্রয়ের নজিরই নেই। 

বাংলাদেশ যেখানে পেসার কমিয়ে স্পিন শক্তিই বাড়াবে, পাকিস্তানের আস্থা থাকছে পেস আক্রমণেই। মূলত শাহীন শাহ আফ্রিদি, হাসান আলিদের কেমন খেলেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা তার উপরই নির্ভর করছে ম্যাচের গতিপথ।

Comments

The Daily Star  | English

Mindless mayhem

The clashes between students of three colleges continued yesterday, leaving over 100 injured in the capital’s Jatrabari.

5h ago