পুরনো রোগ সারাতে নতুন দাওয়াইয়ের খোঁজ
টি-টোয়েন্টি সংস্করণে ঢুকলেই বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা যেন হয়ে পড়েন কেমন আড়ষ্ট। পাওয়ার প্লেতে যথেষ্ট রান আসে না, শেষের ঝড়েও থাকে না তেজ। অল্প রান নিয়ে তো বোলারদের দায় দেওয়া চলে না। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ব্যর্থতার পর পুরো সেটআপ বদলেও কাজ হয়নি। এবার এসেছে আরও কিছু বদল। সমন্বয়েও আসছে বদল। অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ বলছেন, চিন্তার জগতেও নির্ভিক ভাব নিয়ে আসছেন তারা।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে পয়েন্টের কোন হিসেব নিকেশ নেই। কিন্তু আগামী বিশ্বকাপ সামনে রেখে দল গুছানো, ঠিক সমন্বয় খুঁজে পাওয়ার বড় চ্যালেঞ্জ সামনে। বৃহস্পতিবার বিকেল তিনটায় মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এই সংস্করণের ভাষাটা এবার বাংলাদেশ পড়ততে পারে কিনা তা দেখার বিষয়।
অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ ওয়ানডে সিরিজে ছিলেন জড়োসড়ো। ৭৯ বল খেলে কেবল একটি বাউন্ডারি মারতে পেরেছিলেন। টি-টোয়েন্টি সিরিজের আগের দিন তার দুরবস্থার কথা মনে করিয়ে দিতে কিছুটা যেন চটেই গেলেন। চোয়াল শক্ত করে জবাব, 'এবার প্রথম বল থেকেই মারব ইনশাল্লাহ, চার মারব, ছক্কা মারব।' দিনভর অনুশীলনে অবশ্য তাদের সেই চেষ্টাই করতে দেখা গেছে।
টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের রোগ কেবল চার-ছয় না মারাতেই সীমাবদ্ধ না। দুনিয়ার কোন দলের পক্ষেই প্রতিটি বলে বাউন্ডারি মারা সম্ভব না। এক বাউন্ডারি থেকে আরেক বাউন্ডারির মাঝে যে বলগুলো থাকে সেগুলো কীভাবে কাজে লাগানো হচ্ছে তা এক বড় বিষয়। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা একটি চার বা ছয় মারার পরের পাঁচটি বল খেলেন ডট। বাউন্ডারির গুণই তাই আর পরে থাকে না।
টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের বড় রান না পাওয়ার পেছনে কাজ করে দুর্বল পাওয়ার প্লের ব্যাবহার। ওপেনাররা যেন সবাই নামেন ইনিংস টেনে নেওয়ার মিশনে! ৬ ওভার কাজে লাগিয়ে দ্রুত রান আনার চাহিদার কথা ভুলেই যান তারা। গত এক বছর সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ পাওয়া ওপেনার হলেন নাঈম শেখ। তার গড় কেবল ১০০! পাকিস্তানের বিপক্ষে সর্বশেষ সিরিজে এক ম্যাচে তিনি করেছিলেন ৪৭ রান। কিন্তু এই রান করতে তিনি খেলে ফেলেন ৫০ বল! এবার বিপিএলে তার অবস্থা ছিল আরও কাহিল।
সেক্ষেত্রে নাঈমকে সরিয়ে মুনিম শাহরিয়ারের অভিষেকের আওয়াজ জোরালো। প্রথমবার জাতীয় দলে আসা এই তরুণ নেটে দেখিয়েছেন তার আগ্রাসী মনোভাব। বিপিএলে ফরচুন বরিশালের হয়ে ঝড় তোলা ব্যাটিংয়ে মন কেড়েছেন সবার। এর আগে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ টি-টোয়েন্টিতেও দেখা গেছে তার ঝলক।
মুনিমের মাঝে তাই পাওয়ার প্লের একটা সমাধান দেখছে দল। তিনি সেই সুযোগ কতটা কাজে লাগাতে পারেন এটাই এখন দেখার বিষয়। বিশ্বকাপে চরম ব্যর্থতার পর পাকিস্তানের বিপক্ষে সব শেষ টি-টোয়েন্টি সিরিজে বাদ পড়েছিলেন লিটন দাস। কিন্তু টেস্ট, ওয়ানডে ও বিপিএলেও দারুণ ছন্দে থাকা এই ব্যাটার ফিরেছেন।
এক সময় লিটন ছিলেন বাংলাদেশের সবচেয়ে আগ্রাসী ব্যাটসম্যান। টি-টোয়েন্টিতে তার স্ট্রাইকরেট ছিল ১৪০ এর বেশি। দপ করে সেটা নেমে যায়। তবে জড়তা কাটিয়ে বিপিএলে লিটন আবার দেখিয়েছেন পুরনো ঝাঁজ। সেই সঙ্গে ওয়ানডেতে দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে মাত করে তিনি এখন দলের বড় ভরসাই। লিটনের কাছে টি-টোয়েন্টিতেও চাহিদা বেড়েছে।
এই সিরিজ দিয়ে ফেরা মুশফিকুর রহিমেরও। বুধবার ফিল্ডিং ও ব্যাটিং অনুশীলনে ছিলেন মনোযোগী। তবে অনুশীলনেই ডান হাতের আঙুলে চোট পান। যদিও স্ক্যানে কোন চিড় ধরা পড়েনি। তবু সতর্কতার অংশ হিসেবে বাজে ফর্মে বাদ পড়া কিপার ব্যাটসম্যান নুরুল হাসান সোহানকে দলে যুক্ত করা হয়েছে।
প্রতিপক্ষ, উইকেট
টি-টোয়েন্টিতে আফগানিস্তান বাংলাদেশের জন্য বড় এক চিন্তার নাম। দলটির বিপক্ষে ৬ ম্যাচ খেলে কেবল দুটিতে জিততে পেরেছেন মাহমুদউল্লাহরা। চার বাকি চার ম্যাচেই। বাংলাদেশের চিন্তা বাড়িয়ে দেওয়ার মূল কারণ আফগানদের তিন স্পিনার। রশিদ খান, মুজিব উর রহমান ও মোহাম্মদ নবির ১২ ওভার কীভাবে সামলানো হবে এই চিন্তায় বেশিরভাগ সময়ই তালগোল লেগে গেছে।
এবার এই স্পিন ত্রয়ীকে ভোতা করে দিতে মিরপুরের মাঠেও ঘাসের উইকেটের ব্যবস্থা করেছে স্বাগতিকরা। উইকেটে ঘাস থাকায় সাহায্য হবে পেসারদের। রান পাবেন ব্যাটসম্যানরাও। দুই স্পিনার আর তিন পেসার নিয়ে একাদশ সাজানোর সম্ভাবনা জোরালো। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের থেকেও কিছুটা এগিয়ে আফগানরা। হযরতুল্লাহ জাজাই, রাহমানুল্লাহ গুরবাজরা তেড়েফুঁড়ে মারতে পছন্দ করেন। টি-টোয়ন্টির ভাষাটা অন্তত তাদের আয়ত্তে বেশি। ঘরের মাঠে অন্তত সেটা ভুল করে দেওয়ার সুযোগ থাকছে।
আফগানদের হটিয়ে দিতে গা ঝাড়া দিয়ে ইতিবাচক ক্রিকেটের আভাস দিয়েছেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। কেবল নতুন সমন্বয় নয়, চিন্তা ভাবনায় নতুন স্রোত এনে পুরনো রোগ সারাতে চান তারা, 'স্টাইলের বিষয়টা হয়তো আমি ঠিক সেভাবে বর্ণনা করতে পারব না। আমি সবসময় পছন্দ করি ইনটেন্ট নিয়ে ব্যাটিং করা। ইতিবাচক অ্যাপ্রোচে ব্যাটিং করা। নির্ভয়ে ব্যাটিং করা। একই সঙ্গে বোলারদেরও একই ধরনের মানসিকতা থাকা প্রয়োজন। যদি আমরা শুরুতে উইকেট নিতে পারি তাহলে আমরা ম্যাচে থাকব। সব সময় ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে খেলাই আমরা প্রেফার করব। চেষ্টা করব কালকে একই অ্যাটিটিউড নিয়ে যেন আমরা খেলতে পারি।'
বাংলাদেশের সম্ভাব্য একাদশ: লিটন দাস, মুনিম শাহরিয়ার, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম (*ফিট থাকা সাপেক্ষে), মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, ইয়াসির আলি, আফিফ হোসেন, শেখ মেহেদী হাসান, তাসকিন আহমেদ, শরিফুল ইসলাম, মোস্তাফিজুর রহমান।
আফগানিস্তান সম্ভাব্য একাদশ: হযরতুল্লাহ জাজাই, রাহমানুল্লাহ গুরবাজ দাওরিস রাসুলি, নাজিবুল্লাহ জাদরান, মোহাম্মদ নবি, আজমতুল্লাহ ওমরজাই, করিম জানাত, রশিদ খান, মুজিব উর রহমান, ফজলহক ফারুকি, ফরিদ আহমদ।
Comments