নতুনের কেতন কি তাহলে উড়া শুরু হলো?

Afif Hossain & Mehidy Hasan Miraz
আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের দুই নায়ক আফিফ হোসেন ও মেহেদী হাসান মিরাজ। ছবি: ফিরোজ আহমেদ

'আসলে আমরা ওভাবে কখনো চিন্তা করি না কে তরুণ, কে সিনিয়র...আমরা সবসময় দলের জন্য খেলি। আমরাও (তরুণরা) দলের সদস্য, দলের জন্য অবদান রাখার চেষ্টা করি।'- অবিস্মরণীয় ইনিংস খেলে দলকে জিতিয়ে বলছিলেন আফিফ হোসেন। তার এই কথা এমন এক দিনে এলো যেদিন অভিজ্ঞদের ছাপিয়ে দায়িত্বের ব্যাটল হাতে নিয়েছেন দুই তরুণ। 

অধিনায়ক তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ- এই চারজন মিলে আছে ৮৬৫ ওয়ানডের অভিজ্ঞতা। আফগানিস্তানের গোটা দলের সব ক্রিকেটারের সম্মিলিত ওয়ানডের থেকেও যা ৩২৪ ম্যাচ বেশি।

ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশ তুলনামূলক ভালো খেলে এই অভিজ্ঞতার পুঁজিতে ভর করেই। অভিজ্ঞ এই চার তারকার ক্যারিয়ার থেমে গেলে দলের কি হবে তা নিয়ে তাই হাহাকারের কমতি নেই। তরুণদের অধারাবাহিকতার আক্ষেপ ঝরে হর হামেশা, আগামী নিয়ে শঙ্কার স্রোত বয় প্রতিনিয়ত। সাব্বির রহমান, নাসির হোসেনদের প্রজন্মদের হারিয়ে যাওয়া, দেশকে একাধিক বড় বড় ম্যাচ জিতিয়ে সৌম্য সরকারদের মতো প্রতিভার আলো ছড়িয়ে হুট অন্ধকারে হাঁটা সেই শঙ্কা কমতে দিচ্ছিল না।  

তবে গত দুই মাসে টেস্ট ও ওয়ানডেতে পরিস্থিতি ও প্রেক্ষাপটে বিচারে দুই জয় এমন ভাবনাকে বদলে যাওয়ার কথা বলছে দৃঢ়ভাবে। বছরের শুরুতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মাউন্ট মাঙ্গানুই টেস্টে বাংলাদেশের ইতিহাসের স্মরণীয়তম জয় এসেছে দলের অপেক্ষাকৃত 'জুনিয়রদের' হাত ধরেই। সেই সিরিজে সবচেয়ে সিনিয়রদের মধ্যে মুশফিকুর রহিম ছাড়া কেউ ছিলেন না। মুশফিক খেললেও ওই টেস্টে রান পাননি।

টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল হককে অবশ্য 'জুনিয়র' বলার উপায় নেই। তিনি সিনিয়রই। তবে কথিত 'চার পাণ্ডবের' বাইরের একজন। মাউন্ট মাঙ্গানুইতে ব্যাট হাতে অবদান আছে মুমিনুলের। ব্যাট হাতে অবদান থাকা মাহমুদুল হাসান জয় একদমই তরুণ।  নাজমুল হোসেন শান্ত, লিটন দাস, মেহেদী হাসান মিরাজরাও অপেক্ষাকৃত তরুণদের কাতারে। দলের জয়ের সবচেয়ে বড় নায়ক পেসার ইবাদত হোসেন তো অনভিজ্ঞদের মধ্যেই একজন।

বুধবার আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে ২১৬ রান তাড়ায় যখন ৪৫ রানে ৬ উইকেট পড়ে গেছে। তখন জেতার কোন বিশ্বাস ছিল না খোদ অধিনায়ক তামিমেরও। তারা চার সিনিয়র মিলে করেছেন কেবল ২৯ রান। দলের প্রথম ছয়জনের রান কেবল ৩০। তামিমের বিশ্বাস না থাকলেও বিশ্বাস ছিল মিরাজের। সেই বিশ্বাসের নির্যাস তিনি ছড়িয়ে দিয়েছেন আফিফের মাঝেও। ১৭৪ রানের অবিচ্ছিন্ন রেকর্ড জুটিতে বাকিটা সেরেছেন এই দুজন। দলের মোট রানের ৭৯.৪৫ শতাংশই এসেছে তাদের ব্যাটে। প্রথম ছয় ব্যাটসম্যানের বাইরে ওয়ানডেতে যা একটি রেকর্ড।

আফগানিস্তানের বিপক্ষে একটি জয়ের পর দলের তরুণদের নিয়ে কোন একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছা হয়ত বাড়াবাড়ি লাগতে পারে। কিন্তু প্রতিপক্ষের বাইরে গিয়েও দেখতে হবে ম্যাচের প্রেক্ষাপট, পরিস্থিতি। আফগানদের পেস আক্রমণ আনকোরা হলেও স্পিনররা যে ছিলেন বিশ্বমানের। সামগ্রিক চাপ সামলে আফিফ-মিরাজের দায়িত্ব নেওয়াটা নিশ্চিতভাবেই উজ্জ্বল আগামীরই বার্তা দেয়।

নিউজিল্যান্ডে স্মরণীয় টেস্ট জয়ের তুল্য দেশের ক্রিকেটেই আর নেই। নিউজিল্যান্ডের মাঠে গিয়ে বাংলাদেশের কোন দল যে কোন সংস্করণেই দ্বি-পাক্ষিক সিরিজের কোন ম্যাচ জেতেনি। টেস্টে ম্যাচে তো তিনদিন পার করাই হতো কঠিন। ওই একটা জয়ের পর বাংলাদেশের টেস্ট দলের শক্তি এক লাফে অনেকখানি বেড়ে যায়নি। তবে সাকিব-তামিমদের প্রজন্মের বিদায়ের পরও বাংলাদেশের ক্রিকেটে আলোর রোশনারই দেখা মিলতে পারে, সেই আভাস স্পষ্ট।

কিন্তু আভাসেই মিলিয়ে গেলে ফের ডুবতে হবে হতাশায়। আভাসকে ধারাবাহিকতা দিয়ে বাস্তব করার দায়টাও আফিফ-মিরাজদেরই।

Comments

The Daily Star  | English

Dhaka sends diplomatic note to Delhi to send back Hasina: foreign adviser

The Ministry of Foreign Affairs has sent a diplomatic note to the Indian government to send back ousted former prime minister Sheikh Hasina to Dhaka.

4h ago