যে ভাবনায় বদলে যায় বাংলাদেশ

টেস্টের বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন তারা। নিজেদের মাটিতে শেষ ১৭ টেস্টে অপরাজিত। সবচেয়ে বড় কথা, টেস্ট তো দূরের কথা, নিউজিল্যান্ডের মাটিতে কোনো সংস্করণেই সাফল্য ছিল না বাংলাদেশের। সেই অজেয় দুর্গে ১৫ সেশনের ১৩ সেশনেই দাপট দেখিয়ে জিতল বাংলাদেশ। নিঃসন্দেহে অবিশ্বাস্য এক জয়। নতুন এক ইতিহাস।

কিন্তু এক সপ্তাহ আগেও কি কেউ ভেবেছিল এমন কোনো ফলাফল আসতে পারে মাউন্ট মঙ্গানুইতে। রীতিমতো ভঙ্গুর একটি দল নিয়ে এ সফরে গিয়েছিল বাংলাদেশ। ব্যক্তিগত কারণে যাননি দলের সেরা তারকা সাকিব আল হাসান। আরেক অভিজ্ঞ তারকা তামিম ইকবাল যেতে পারেননি ইনজুরির কারণে। এক ঝাঁক তরুণদের উপরই আস্থা রাখে টাইগাররা।

তার উপর সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বাইরে তো দূরের কথা নিজের মাঠেই টেস্টে আশানুরূপ ফলাফল করতে পারছিল না বাংলাদেশ। পাকিস্তানের বিপক্ষে রীতিমতো বিধ্বস্তই হয় তারা। বৃষ্টিতে প্রায় আড়াই দিন পণ্ড হওয়ার পরও হেরেছিল টাইগাররা। আর দেশের বাইরে জয় বলতে গেলে কেবল শ্রীলঙ্কা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও জিম্বাবুয়েতে। তাও দলগুলোর সেরা তারকাদের হারিয়ে খর্বশক্তির হওয়ার পর।

সেখানে প্রথম টেস্টের প্রথম দিন থেকেই দাপট বাংলাদেশের। শেষ পর্যন্ত জয়। বিশ্বাস করতে পারছেন না খোদ অধিনায়ক মুমিনুল হকও। এ জয়ের কথা যদি ম্যাচের আগে বলতেন তাহলে তাকে পাগল বলেই আখ্যা পেতেন বলে জানান তিনি, "যে নিউজিল্যান্ডের মতো জায়গায় টেস্ট ম্যাচ জিতব, আমি হয়তো বলতে পারি, তবে সবাই বলবে, 'পাগল হয়ে গেছে লোকটা।'"

তাহলে কোন প্রক্রিয়ায় হঠাৎ বদলে গেল বাংলাদেশ? ভাবনাটাই বা কী ছিল?

মুমিনুল উত্তর দিলেন দারুণভাবেই, 'কোথাও খেলতে হলে আগে চিন্তা-ভাবনা পরিষ্কার রাখতে হবে। যদি আমরা ভাবি যে নিউজিল্যান্ড বা ইংল্যান্ডে খেলছি বা উপমহাদেশের বাইরে গেলেই কাজটা কঠিন, তাহলে কঠিনই হবে। সত্যি বলতে, আমরা ফলাফলে নজর দেইনি। মনোযোগ ছিল প্রক্রিয়ায়। দল হিসেবে পাঁচদিন কীভাবে খেলব, এসব নিয়েই ছিল ভাবনা ও লক্ষ্য।'

তাই ম্যাচ জয়ের সম্ভাবনা তৈরি হলেও তা নিয়ে ভাবেননি টাইগাররা। মুমিনুলের ভাষায়, 'আসলে আমরা কখনোই ফল নিয়ে চিন্তা করিনি। আগেই যদি চিন্তা করেন যে নিউজিল্যান্ডের মতো জায়গায় টেস্ট ম্যাচ জিতব... আমাদের দলের সবার ভেতর ছিল যে আমরা ভালো প্রস্তুতি নেই, প্রক্রিয়া অনুযায়ী খেলি। যেমন ব্যাটিংয়ে লক্ষ্য ছিল লম্বা সময় ব্যাট করব। বোলিংয়ে লক্ষ্য ছিল একটা জায়গায় বল করব।'

'আমরা অনেক বেশি মনোযোগী ছিলাম প্রক্রিয়া, ফলাফলে নয়। আমি সবসময় প্রক্রিয়ায় বিশ্বাস করি। আমার প্রক্রিয়া ও শরীরী ভাষা ঠিক থাকলে ৭০ থেকে ৮০ ভাগ সমস্যা সমাধান হয়ে যায়।' - যোগ করেন মুমিনুল।

ইতিহাস বলে টাইগাররা যখন দল হিসেবে খেলতে পেরেছে, তখন উড়ে গেছে প্রতিপক্ষ সব দলই। তা সে যতই শক্তিশালী দলই হোক না কেন। ম্যাচ জয়ের নায়ক ইবাদত হোসেন হলেও জয়ে অবদান রয়েছে সবারই। সতীর্থ সবারই জয়গান গাইলেন অধিনায়ক, 'আর আমরা যখন সম্মিলিতভাবে সবাই ভালো খেলি, তখন ফল আমাদের পক্ষে আসে। এটাই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সবাই সবদিক থেকে কিছু না কিছু অবদান রেখেছে। যে ব্যাটিংয়ে পায়নি সে বোলিং, যে বোলিংয়ে পারেনি সে ফিল্ডিংয়ে করেছে।'

এছাড়া দলের কোচিং স্টাফসহ সবার অবদানকেও তুলে ধরেন মুমিনুল, 'আমরা আসার পরে, বিশেষ করে পাকিস্তান সিরিজ হারার পর সবার ভেতর… টেস্ট ক্রিকেটে উন্নতির জন্য ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং সব বিভাগে উন্নতির জন্য সবাই সাপোর্ট করেছে। কেউ যখন খারাপ করছে, ক্যাচ মিস করছে, তখনও সবাই তাকে সাপোর্ট করছে। সেই সঙ্গে আমাদের কোচিং স্টাফ থেকে শুরু করে সবাই, সুজন ভাই থেকে শুরু করে সবাই অনেক উজ্জীবিত করার চেষ্টা করেছেন।'

Comments

The Daily Star  | English

7 colleges to continue operating under UGC until new university formed

Prof AKM Elias, principal of Dhaka College, to be appointed as the administrator

6h ago