তিনটি রিভিউ নষ্ট হওয়ার ব্যাখায় যা বললেন লিটন
নিউজিল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসের ৩৭তম ওভারের মধ্যে তিনটি রিভিউয়ের সবগুলো হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। মাঝে অবশ্য রিভিউ নিয়েই তারা ফেরায় প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান ডেভন কনওয়েকে। তবে শেষ দুটি রিভিউ নষ্ট হওয়া নিঃসন্দেহে ছিল দৃষ্টিকটু। উইকেটরক্ষক লিটন দাস অবশ্য এতে দায় দেখছেন না কারও। তিনি জানান, বাড়তি উত্তেজনার কারণে রিভিউ নেওয়া হয়নি, বরং তারা সুযোগ নিয়েছেন যাতে উইকেট পড়ে।
মঙ্গলবার মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টের চতুর্থ দিনে নিজেরা প্রথম ইনিংসে ৪৫৮ রানে থামার পর পেসার ইবাদত হোসেনের তোপে নিউজিল্যান্ডের ৫ উইকেট তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ইনিংসে ১৪৭ রান করে স্বাগতিক কিউইরা মাত্র ১৭ রানে এগিয়ে থাকায় জয়ের হাতছানি রয়েছে টাইগারদের সামনে। কিন্তু আগামীকাল শেষদিনে যখন নিউজিল্যান্ডকে দ্রুত অলআউট করার লক্ষ্য থাকবে মুমিনুল হকের দলের, তখন তাদের হাতে নেই কোনো রিভিউ।
ইনিংসের ১৭তম ওভারে প্রথম রিভিউ হারায় বাংলাদেশ। উইল ইয়াংয়ের বিপক্ষে ক্যাচের আবেদন করেছিলেন লিটন ও ইবাদত। পরে দেখা যায়, বল লাগেনি ব্যাটে। ২৫তম ওভারে ইবাদতের বলেই কনওয়ের ব্যাটে-প্যাডে বল লেগে ক্যাচ যায় স্লিপে। ঝাঁপিয়ে পড়ে চোখ ধাঁধানো ক্যাচ নেন সাদমান ইসলাম। আম্পায়ার শুরুতে এলবিডব্লিউ বা ক্যাচ কোনো আউটই দেননি। পরে রিভিউ নিয়ে উল্লাসে মাতে বাংলাদেশ।
এরপর নিউজিল্যান্ডকে চেপে ধরার চেষ্টার উত্তেজনাতেই কিনা হতাশাজনকভাবে মূল্যবান দুটি রিভিউ নষ্ট হয়। ইবাদতের করা ২৯তম ওভারে লেগ স্টাম্পের বাইরের বল লেগেছিল রস টেইলরের থাই প্যাডে। কট বিহাইন্ডের আবেদন করলেও বোলার ও উইকেটরক্ষক ছিলেন না আত্মবিশ্বাসী। কিন্তু ফিল্ডার মেহেদী হাসান মিরাজের কথায় প্রভাবিত হন অধিনায়ক মুমিনুল। তবে রিভিউ নিলে দেখা যায়, ব্যাট ছিল না বলের আশেপাশে।
৩৭তম ওভারে তাসকিন আহমেদের বলে শেষ রিভিউটিও নষ্ট হয় মিরাজের ভুল পর্যবেক্ষণে। ইয়র্কার ডেলিভারি ডিফেন্স করেছিলেন টেইলর। বল পায়ের পাতায় লেগেছে ভেবে হালকা আবেদন করেন তাসকিন। আম্পায়ার সাড়া না দিলে মিরাজ আবারও মুমিনুলকে রিভিউ নিতে পরামর্শ দেন। কিন্তু বল মূলত লেগেছিল ব্যাটের একদম মাঝের অংশে।
দিনের খেলা শেষে ভিডিও বার্তায় লিটন বলেন, টেস্টে ভালো অবস্থানে থাকায় উত্তজনার বশে বারবার রিভিউ নিয়েছেন তারা, এমনটি নয়, 'না, আসলে অতিরিক্ত উত্তেজনা না। প্রথমটার কথাই বলি, আমি যখন রিভিউ নিলাম, আমি পেছনে ছিলাম, আমার মনে হয়েছে, নিশ্চিত আউট। কিন্তু নেওয়ার পর সেটি নষ্ট হল। দ্বিতীয়টা আমরা নেওয়ার পর সফল হয়েছিলাম। কনওয়ের উইকেট। ওটাতে কিন্তু সাদমান, মিরাজ, শান্ত, রাব্বি, যতগুলো খেলোয়াড় সামনে ছিল, তাদের সমর্থন ছিল। আমি পেছনে থাকায় বুঝতে পারিনি ব্যাটের ভেতরের দিকে এজ হয়েছিল। এটা হয় অনেক সময়।'
মূলত, উইকেট তুলে নিয়ে নিউজিল্যান্ডকে আরও চেপে ধরার লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশের, 'আপনি রিভিউতে সফল হবেন, কখনও হবেন না। পরেরটায় মিরাজ আত্মবিশ্বাসী ছিল বিষয়টা নিয়ে। আমরা তাকে সমর্থন করেছি। কারণ প্রতিটা খেলোয়াড়ের দায়িত্ব আরেকজনের প্রতিক্রিয়া নেওয়া। আমরা সেগুলো নেই। অনেক কিছু আমি পেছন থেকে বুঝতে পারি না। শেষ যেটা ছিল তাসকিনের, ও অনেকটা নিশ্চিত ছিল যে বুটে লেগেছে। আমি পেছন থেকে বুঝতে পারছিলাম না। আমরা তো চাচ্ছিলাম, একটা উইকেট পড়ুক। এই জন্যই আমরা সুযোগ নিয়েছি।'
সবগুলো রিভিউ হারানোর পর দিনের শেষ ঘণ্টায় আগুন ঝরা বোলিং করেন ইবাদত। একই ওভারে তিন বলের মধ্যে ইয়াং ও হেনরি নিকোলসকে বোল্ড করার পর টম ব্লান্ডেলকেও ফেরান তিনি। সব মিলিয়ে ১৭ ওভারে ৩৯ রানে তার শিকার ৪ উইকেট। টেস্টে এটি তার ক্যারিয়ারসেরা বোলিং। ১১ টেস্টের ক্যারিয়ারে আগে কখনোই ইনিংসে ৪ উইকেট পাননি তিনি। এদিন তার নৈপুণ্যের কারণে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে বাংলাদেশের প্রথম জয়ের স্বপ্ন শক্ত ভিত পেয়েছে।
Comments