'ইবাদত যতো জোরে বল করছিল ততো হেল্প পাচ্ছিল'
ইনিংসের ১৩তম ওভারে বল হাতে নিলেন ইবাদত হোসেন। শুরুর দিকে কিছুটা এলোমেলো থাকলেও মানিয়ে নিলেন খুব দ্রুতই। ধীরে গতি বাড়াতে লাগলেন। তাতে উইকেট থেকে সুবিধাও পেলেন পর্যাপ্ত। মিলল সফলতাও। শেষ পর্যন্ত তার এই অসাধারণ বোলিংয়েই জয় যেন হাতের নাগালে।
মঙ্গলবার মাউন্ট মাঙ্গানুই টেস্টের চতুর্থ দিন শেষে ১৪৭ রানে নিউজিল্যান্ডের ৫ উইকেট তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ। ১৭ রানের লিড পেয়েছে কিউইরা। এর আগে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ৪৫৮ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। তাতে এ টেস্টের দাপট বাংলাদেশেই।
প্রথম ইনিংসে ১৩০ রান লিড নিয়ে বোলিংয়ে নেমে বেশ নিয়ন্ত্রিত বোলিংই করে টাইগাররা। নবম ওভারেই ব্রেক থ্রু এনে দেন তাসকিন আহমেদ। এরপর শুরু হয় ইবাদতের জাদু। ২৫তম ওভারে কিউই শিবিরে দ্বিতীয় ধাক্কাটা দেন এ পেসার। এরপর দ্বিতীয় স্পেলে হাতে ফেরেন ৪৮তম ওভারে। এবার শুরু থেকেই আগ্রাসী এ পেসার। ৫৪তম ওভারে এক বলের ব্যবধানে পেলে জোড়া উইকেট। তাতেই ম্যাচ হেলে পড়ে বাংলাদেশের দিকে। এক ওভার পর ফিরে পেলে আরও এক উইকেট।
ধীরে ধীরে বলের গতি বাড়িয়ে এমন সফলতা পেয়েছেন ইবাদত। তাই শুরু থেকেই তার সতীর্থ নাজমুল হোসেন শান্ত তাকে পরামর্শ দিচ্ছিলেন বলের গতি বাড়াতে। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে সে বিষয়টিই জানালেন বাংলাদেশ দলের উইকেটরক্ষক ব্যাটার লিটন কুমার দাস, 'নরমালি আপনি যদি দেখেন আজকের উইকেটে বলটা কিছুটা নিচে এবং কিছু বল স্কিড করছিল। আমরা নরমালি যেভাবে জানি, যে জায়গাটাতে বল করলে বলের গতি ১৩৮-১৪০ এভারেজ থাকে বোলিং।'
'প্ল্যান ছিল যে একটা জিনিস ইবাদতকে রান বাই রান বল করা, যদি সেখান থেকে আপ এন্ড ডাউন করে তাহলে লেগ বিফোর বা বোল্ডের চান্স থাকবে। আর এই জিনিসটা আমরা বুস্ট আপ করছিলাম পেছন থেকে, যেমন শান্ত বারবার বলছিল যে জোরে জোরে, কারণ ও যত জোরে বল করছিল, উইকেট থেকে তত হেল্প পাচ্ছিল।'-যোগ করেন লিটন।
ইবাদতের উচ্ছ্বসিত প্রশংসাই করেন লিটন, 'আমাদের যতগুলা বোলার বল করেছে সবাই একই লেন্থে, আমাদের যেই পরিকল্পনা ছিল যে অনুযায়ী বল করেছে। ইবাদত আজকে দুর্দান্ত ছিল। ওর দুটো স্পেলই চমৎকার ছিল। আমার মনে সে একই জায়গায় বল করার কারণে অনেক হেল্প পেয়েছে। তার ব্রেক থ্রু আমাদের দলকে অনেক বুস্ট আপ করেছে। আমরা এখন যে অবস্থায় আছি আমরা ওভার এক্সাইটেড না, আমাদের এখনও পাঁচ উইকেট নিতে হবে, যত কম রান দেয়া যায়, এই রানটা আমাদের চেইজ করতে হবে।'
অথচ এ ম্যাচের আগে ইবাদতের বোলিং গড় ছিল ৮১.৫৪। তাই আবু জায়েদ রাহীকে বাদ দিয়ে তাকে দলে রাখার সমালোচনাও কম হয়নি। তারও জবাব দিয়েছেন লিটন, 'সে (ইবাদত) একটা ফরম্যাটেই খেলে, অনেক সময় বাংলাদেশে খেলা হলে খেলে আবার খেলে না। সো এই জিনিসগুলা মাথায় রাখতে হবে যে একজন পেস বোলারের জন্য সবসময় সব কিছু অনুকূলে থাকে না। হ্যাঁ তার হয়তো এভারেজটা একটু বেশি, ইকোনোমি একটু বেশি ছিল, কিন্তু তার যে যোগ্যতা আছে, সে যে ভালো বোলার সেটি সে আজ প্রমাণ করেছে। সামনেও সে প্রমাণ করবে, এই বিষয়ে আমি বেশ আশাবাদী। আমার মনে হয় তাকে একটু সময় দেয়া উচিত। আমার মনে হয় আমি যা দেখলাম, ওর ম্যাচ ১১টা কি ১২টা। আমার মনে হয় একটা টেস্ট খেলোয়াড়ের ১৫-১৭ ম্যাচ লাগে তার অভিজ্ঞতাটা আনতে, ক্রিকেটটাকে বুঝতে। তাই আমার মনে হয় ওই সময়টা তাকে দেয়া উচিত।'
এমনকি নিজেকে উদাহরণ হিসেবে টেনে আনেন এ উইকেটরক্ষক ব্যাটার, 'আমি যখন প্রথম প্রথম ক্রিকেট শুরু করেছিলাম, আমার পারফরম্যান্স কিন্তু ততোটা ভাল ছিল না। ইনফ্যাক্ট বাংলাদেশে এখন যেই দলটা খেলছে, সবারই যে পারফরম্যান্স খুব একটা ভাল তা কিন্তু না। তাই প্লেয়ারদেরকে সুযোগ দিতে হবে। একটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে আমরা যখন টেস্ট খেলি, কতদিন পরপর খেলি।'
Comments