হার্মারের ঘূর্ণিতে ৪ উইকেট হারিয়ে বড় চাপে বাংলাদেশ
ছয় বছর টেস্টে দলে ফের সুযোগ পেলেন সাইমন হার্মার। আর ফিরেই অসাধারণ পারফর্ম করে চলেছেন তিনি। প্রথমে ব্যাট হাতে প্রোটিয়াদের পুঁজি বড় করতে রেখেছেন কার্যকরী ভূমিকা। এরপর বল হাতে বেছান ঘূর্ণির মায়াজাল। টাইগারদের হারানো চারটি উইকেটই পেয়েছেন তিনি। তাতে বড় চাপেই পড়েছে বাংলাদেশ।
শুক্রবার ডারবান টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষে ৪ উইকেটে ৯৮ রান তুলেছে বাংলাদেশ। মাহমুদুল হাসান জয় ৪৪ ও তাসকিন আহমেদ ০ রানে উইকেটে আছেন। এর আগে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ৩৬৭ রানে অলআউট হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা।
তামিম ইকবাল না থাকায় মাহমুদুল হাসান জয়কে নিয়ে বাংলাদেশের ইনিংসের সূচনা করতে আসেন সাদমান। ইসলাম। শুরুটাও খারাপ ছিল না। দেখেশুনেই ব্যাট করে পেসারদের সামলেছেন দারুণভাবেই। ফলে নবম ওভারেই স্পিনার আনেন প্রোটিয়া অধিনায়ক ডিন এলগার। তখনই কিছুটা অস্বস্তিতে পড়ে টাইগাররা।
দলীয় ২৫ রানে সাদমানকে ফিরিয়ে টাইগার শিবিরে প্রথম আঘাত হানেন হার্মার। কিছুটা জোরের উপর ছাড়া বলটা অবশ্য কিছুটা নিচু হয়েছিল। স্কিড করে ভেতরে ঢোকার মুহূর্তে ডিফেন্স করতে চেয়েছিলেন সাদমান। কিন্তু শেষ শেষরক্ষা করতে পারেননি। ৩৩ বল ৯ রান করেন এ ওপেনার।
এরপর নাজমুল হোসেন শান্তকে নিয়ে দলের হাল ধরেন জয়। শুরুতে কিছুটা আগ্রাসী ছিলেন শান্ত। তবে পরে সাবধানী ব্যাটিংয়ে দলকে এগিয়ে নিয়ে যান এ দুই ব্যাটার। তবে মাঝেমধ্যে বাউন্ডারি মেরে রানের গতিও সচল রাখেন তারা। হার্মারকে ছক্কা মেরেই জুটির ফিফটি পূরণ করেন শান্ত।
দারুণ সেট হয়ে যাওয়া এ দুই ব্যাটারকে ফেরাতে জাদুকরী কিছুই করতে হতো প্রোটিয়াদের। হার্মার যেন সেটাই করলেন। অসাধারণ এক ডেলিভারিতে শান্তকে বোল্ড করে দেন তিনি। মিডল স্টাম্পে পরে বাঁক খেয়ে কেবল অফস্টাম্প চুমু খেয়ে বেরিয়ে যায় বলটি। পা বাড়িয়ে ডিফেন্স করেও বল আটকাতে পারেননি শান্ত। ৩৮ রানে শেষ হয় শান্তর সম্ভাবনাময় ইনিংস। ৮৭ বলে ২টি করে চার ও ছক্কায় এ রান করেন তিনি।
জাদুকরী সে ডেলিভারিতে শান্তকে তুলে নিয়েই যেন উজ্জীবিত হয়ে ওঠেন হার্মার। পরের ওভারে ফেরান অধিনায়ক মুমিনুল হককেও। একটু আগেই রানআউট থেকে বেঁচে যাওয়া টাইগার অধিনায়ক আউট হন হার্মারের কুইকারে। পা বাড়িয়ে ডিফেন্স করেছিলেন। বল ব্যাটের কানায় লেগে প্যাডে লেগে চলে যায় সামনের দিকে। সিলি মিড অফ থেকে বাঁদিকে ঝাঁপিয়ে দারুণ দক্ষতায় ক্যাচ লুফে নেন কিগান পিটারসেন।
রানের খাতা খুলতে পারেননি মুমিনুল। তাতে বিব্রতকর একটি রেকর্ড গড়েন অধিনায়ক। অধিনায়ক হিসেবে পাঁচবার শূন্য রানে বিদায় নিয়ে মোহাম্মদ আশরাফুলকে স্পর্শ করেন তিনি। দুইজনই ২৫ ইনিংসে পাঁচবার শূন্য রানে ফিরেছেন। সব মিলিয়ে ১৬ বার শূন্যতে ফেরার রেকর্ডও আশরাফুলের। ১১ বার মুমিনুলের।
হার্মার টাইগারদের আরও বিপদে ফেলে দেন মুশফিকুর রহিমকে ফিরিয়ে। এর আগে রিভিউ নিয়ে বাঁচা মুশফিক পা দেন হার্মারের ফাঁদে। লেগস্টাম্পে বল রেখে তাকে খেলতে প্রলুব্ধ করছিলেন তিনি। গ্লান্স করতে যান মুশফিক। ব্যাটের কানায় ছুঁয়ে চলে যায় উইকেটরক্ষক ভেরেইনার হাতে। আম্পায়ার আঙুল না তুললেও রিভিউ নিয়ে তাকে ফেরান হার্মার। ১৯ বলে ৭ রান করে আউট হলেন মুশফিক। চার উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে যায় বাংলাদেশ।
এরপর নাইটওয়াচম্যান হিসেবে উইকেটে নামেন তাসকিন। ছয়টি দারুণভাবে মোকাবেলা করে কোনো বিপদ হতে দেননি। অপর প্রান্ত আগলে রেখে বাংলাদেশের আশা বাঁচিয়ে রেখে টিকে আছেন জয়। ৪৪ রানে ব্যাট করছেন তিনি। ১৪১ বলে ৪টি চারের সাহায্যে এ রান করেছেন এ তরুণ।
এর আগে প্রথম দিনের ৪ উইকেটে ২৩৩ নিয়ে এদিন ব্যাটিংয়ে নামে দক্ষিণ আফ্রিকা। এদিন স্কোরবোর্ডে আর ১২ রান যোগ হতে কাইল ভেরেইনাকে হারায় দলটি। তাকে তাকে এলবিডাব্লিউর ফাঁদে ফেলেন সৈয়দ খালেদ আহমেদ। পরের বলে ফের আঘাত। এবার ভিয়ান মুল্ডারকে গ্যালিতে মাহমুদুল হাসান জয়ের দারুণ এক ক্যাচে পরিণত করেন এ পেসার।
এরপর কেশভ মহারাজকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেন দলটির সীমিত ওভারের অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা। ৫৩ রানের জুটি গড়েন তারা। বাভুমাকে ফিরিয়ে এ জুটি ভাঙেন মেহেদী হাসান মিরাজ। অসাধারণ এক ডেলিভারিতে তাকে বোল্ড করেন। অনেকটা বাঁক খেয়ে নিচু হওয়া বলটি শেষ মুহূর্তে আটকাতে চেষ্টা করেও পারেননি বাভুমা। ফলে ৭ রানের আক্ষেপ নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় তাকে।
পরের ওভারের প্রথম বলে মহারাজকে বোল্ড করে দেন ইবাদত হোসেন। তবে টাইগারদের জন্য ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ান হার্মার। তাকে সঙ্গ দেন লিজাড উইলিয়ামস ও ডুয়াইন অলিভার। নবম উইকেট জুটিতে উইলিয়ামসের সঙ্গে ৩৪ এবং দশম উইকেটে অলিভারের সঙ্গে ৩৫ রানের জুটি গড়েন হার্মার। শেষ দুই উইকেটে ১৩৭ বল মোকাবেলা করেন তারা। তাতেই প্রথম ইনিংসে ৩৬৭ রানের পুঁজি পেয়ে যায় স্বাগতিকরা।
তবে দেশের মাঠে বাংলাদেশের বিপক্ষে এটাই সর্বনিম্ন রান দক্ষিণ আফ্রিকার। এর আগে দেশের মাঠে তারা দুইবার অলআউট হয়েছিল। তখনও তাদের ইনিংস দুটি ছিল ৪২৯ ও ৪৪১ রানের। এবার তাদের অপেক্ষাকৃত কম রানে আটকে দেওয়ার কৃতিত্ব খালেদের। তাকে দারুণ সহায়তা করেছেন মিরাজ ও ইবাদত হোসেন।
দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৯৩ রানের ইনিংস খেলেন বাভুমা। ১৯০ বলে ১২টি চারের সাহায্যে এ রান করেন তিনি। ভেরেইনার ব্যাট থেকে আসে ২৮ রান। হার্মারকে তাকে অবশ্য থামানো যায়নি। অপরাজিত থেকেই মাঠ ছেড়েছেন। খেলেছেন ৩৮ রানের ইনিংস। ৭৩ বলে ৪টি চার ও ১টি ছক্কায় এ রান করেন তিনি।
বাংলাদেশের পক্ষে ৯২ রানের খরচায় খালেদ পেয়েছেন ৪ উইকেট। দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশি পেস বোলারদের সেরা রেকর্ডও এটি। অথচ এর আগের তিন টেস্টে পেয়েছেন কেবল ১টি উইকেট। এদিন শরিফুল ইসলাম ফিট থাকলে একাদশে জায়গাই হতো না তার। ৯৪ রানের বিনিময়ে মিরাজ পান ৩টি উইকেট। ২টি শিকার ইবাদতের।
Comments