মিরাজ-সাকিবের ঘূর্ণিতে ম্যাচে ফিরেছে বাংলাদেশ
তাসকিন আহমেদ ও শরিফুল ইসলামদের বল সহজেই সামলাচ্ছিলেন দুই প্রোটিয়া ওপেনার কুইন্টন ডি কক ও ইয়ানেমান মালান। তবে স্পিনাররা আসার পর কিছুটা অস্বস্তিতে পড়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ওপেনিং জুটি ভাঙার পাশাপাশি রানের গতিতেও কিছুটা লাগাম দিতে পেরেছে তারা।
জোহানেসবার্গের ওয়ান্ডারার্সে বাংলাদেশের দেওয়া ১৯৫ রানের লক্ষ্য তাড়ায় ২০ ওভারে ২ উইকেটে ১১৬ রান করেছে স্বাগতিকরা। জিততে হলে বাকি ৩০ ওভারে করতে হবে আরও ৭৯ রান। কাইল ভেরেইনা ১৫ ও অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা ১১ রানে ব্যাট করছেন।
ত্রয়োদশ ওভারে এসে প্রথম উইকেট পায় বাংলাদেশ। এক প্রান্তে কুইন্টন ডি কক ঝড় তুললেও অপর প্রান্তে অবশ্য দেখে শুনেই খেলছিলেন মালান। ডি ককের সঙ্গে যোগ দিতেই হয়তো মেহেদী হাসান মিরাজের বলে প্যাডল সুইপ করতে যান। লাইন মিস করেন। ফলে বোল্ড হয়ে যান এ ওপেনার। ৪০ বলে ২৬ রান করেন তিনি।
ষোড়শ ওভারে বল হাতে নিয়ে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা ডি কককে ফেরান সাকিব আল হাসান। অবশ্য মিড উইকেট সীমানায় অসাধারণ এক ক্যাচ ধরেছিলেন আফিফ হোসেন। প্রথম ওয়ানডে ম্যাচে তামিম ইকবালের ক্যাচের কথা মনে করিয়ে দেন তিনি। বল ধরে নিয়ন্ত্রণ রাখতে বাইরে সীমানায় বাইরে চলে যাওয়ার আগে শূন্যে বল ছোঁড়েন। পরে সীমানায় ঢুকে লাফিয়ে তালুবন্দি করেন আফিফ। তবে কাজের কাজটা ঠিকই করে গেছেন ডি কক। ৪১ বলে খেলেছেন ৬২ রানের ইনিংস। ৯টি চার ও ২টি ছক্কায় নিজের ইনিংস সাজান তিনি।
লক্ষ্য তাড়ায় প্রথমে কিছুটা দেখে খেললেও ধীরে ধীরে আগ্রাসী হন ডি কক ও মালান। মালান কিছুটা দেখে খেললেও স্বভাবসুলভ ঢঙ্গে ব্যাটিং করতে থাকেন ডি কক। চার ছক্কার ফুলঝুরিতে দ্রুত রান তোলায় মনোযোগী হন এ ওপেনার। ফিফটি তুলে নেন মাত্র ২৬ বলে। তার আগ্রাসনে প্রথম পাওয়ার প্লেতে ৭২ রান করে প্রোটিয়ারা। দলীয় ফিফটি আসে ৪৪ বলে।
এদিকে বাংলাদেশ তাদের দুটি রিভিউই নষ্ট করেছে। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে তাসকিন আহমেদ নেন ডি ককের বিরুদ্ধে। আর একাদশ ওভারে মালানের বিরুদ্ধে রিভিউ নেন মিরাজ। ইমপ্যাক্টও বাইরে থাকায় নষ্ট হয় রিভিউ।
এর আগে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে কাগিসো রাবাডার তোপে পড়ে বাংলাদেশ। যদিও টাইগার শিবিরে প্রথম ধাক্কাটা দেন লুঙ্গি এনগিডি। ফেরান অধিনায়ক তামিম ইকবালকে। এক্সট্রা বাউন্সের ফাঁদে ফেলে কেশভ মহারাজের ক্যাচে পরিণত করেন ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে।
এরপরই শুরুর হয় রাবাডার তোপ। সাকিব আল হাসান, লিটন দাস ও ইয়াসির আলীকে ফেলে ভেঙে দেন টাইগারদের ব্যাটিং লাইন আপ। সাকিব ও ইয়াসির দুইজনই তার বাড়তি বাউন্সে পরাস্ত হয়ে ব্যাটের কানায় লাগিয়ে আউট হন। লিটন আউট হন আপার কাট করতে গিয়ে।
শুরু থেকেই ধুঁকতে থাকা মুশফিকও টিকতে পারেননি বেশিক্ষণ। ওয়েন পারনেলের বলে পড়েছেন এলবিডাব্লিউর ফাঁদে। এরপর অভিজ্ঞ ব্যাটার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেন আফিফ হোসেন। ৬০ রানের জুটিও গড়েন তারা। এ জুটি ভাঙেন তাবরাইজ শামসি। ফাঁদে ফেলে বিদায় করেন মাহমুদউল্লাহকে। লেগ স্লিপে ক্যাচ তুলে দেন তিনি।
এরপর শুরু হয় মেহেদী হাসান মিরাজকে নিয়ে আফিফের লড়াই। মনে করিয়ে দেন আফগানিস্তানের বিপক্ষে অবিচ্ছিন্ন সেই জুটির কথা। সেদিনের মতো করতে না পারলেও দক্ষিণ আফ্রিকার মাঠে সপ্তম উইকেট জুটিতে গড়েন নতুন রেকর্ড। ৮৬ রান করেন এ দুই ব্যাটার। ভাঙেন ২০০২ সালে করা খালেদ মাহমুদ ও খালেদ মাসুদের ৩৭ রানের জুটি।
আফিফকে ফিরিয়ে এ জুটি ভাঙেন রাবাডা। এরপর স্কোরবোর্ডে আর ১ রান যোগ হতে ফিরে যান মিরাজও। তাকে ফিরিয়ে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ফাইফার তুলে নেন রাবাডা। তাতে সাদামাটা পুঁজি নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় সফরকারীদের।
বাংলাদেশের পুঁজিটা সম্মানজনক হয় আফিফের ব্যাটেই। ৭২ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। নিজের ইনিংসটি সাজান ৯টি চারের সাহায্যে। মিরাজের ব্যাট থেকে আসে ৩৮ রান। ৪৯ বলে ১টি চার ও ২টি ছক্কায় এ রান করেন তিনি। এছাড়া ২৫ রান করেন মাহমুদউল্লাহ।
দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে ৩৯ রানের খরচায় একাই ৫টি উইকেট তুলে নেন রাবাডা।
Comments