বাংলাদেশকে ম্যাচে ফেরালেন শরিফুল
বাংলাদেশের মাথাব্যথার কারণ হয়ে ক্রমেই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছিল দক্ষিণ আফ্রিকার চতুর্থ উইকেট জুটি। শুরুর ধাক্কা সামলে রাসি ভ্যান ডার ডুসেনের সঙ্গে জুটি বেঁধে প্রতিরোধ গড়েছিলেন অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা। তবে স্বস্তির খবর এ জুটি ভাঙতে পেরেছে টাইগাররা। বল হাতে নিয়ে প্রোটিয়া অধিনায়ককে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে ম্যাচে ফিরিয়েছেন শরিফুল ইসলাম।
শুক্রবার সেঞ্চুরিয়নের সুপারস্পোর্ট পার্কে লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ৩০ ওভারে ৪ উইকেটে ১৪১ রান তুলেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। রাসি ভ্যান ডার ডুসেন ৭০ ও ডেভিড মিলার ১১ রানে ব্যাটিং করছেন। জিততে হলে বাকি ২০ ওভারে এখনও ১৭৪ রান করতে হবে প্রোটিয়াদের।
দলীয় ৩৬ রানেই দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম সারীর তিন উইকেট তুলে নেওয়ার পর ডুসেনকে নিয়ে ইনিংস মেরামতের কাজে নামেন বাভুমা। এক প্রান্তে বাভুমা দেখে শুনে খেললেও অপর প্রান্তে রানির গতি সচল রাখার চেষ্টা চালান ডুসেন। স্কোরবোর্ডে ৮৫ রান যোগ করেন এ দুই ব্যাটার। তাতে বাভুমার অবদান ২০ রান।
২৭তম ওভারে ফের বল হাতে নিয়ে তৃতীয় বলেই এ জুটি ভাঙেন শরিফুল। তার এক্সট্রা বাউন্সের বলটি ঠিকভাবে খেলতে পারেননি বাভুমা। ব্যাটের কানায় লেগে চলে যায় উইকেটরক্ষকের হাতে। লাফুয়ে উঠে দারুণ ক্যাচ ধরেন মুশফিকুর রহিম। ৫৫ বলে ২টি চারের সাহায্যে ৩১ রান করেন স্বাগতিক অধিনায়ক।
তবে বাংলাদেশের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার শুরুটাও ছিল সাবধানী। দেখে শুনেই ব্যাট করছিলেন দুই ওপেনার কাইল ভেরেইনা ও ইয়ানেমান মালান। তবে বড় ক্ষতি করার আগে দলীয় ১৮ রানেই প্রোটিয়া শিবিরে প্রথম ধাক্কাটা দেন পেসার শরিফুল ইসলাম। তার বলে মালানের (৪) ব্যাটের কানায় চলে যায় উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিমের হাতে। সামনের দিকে ঝুঁকে দারুণ নিচু হওয়া ক্যাচ লুফে নেন তিনি।
মালানকে হারানোর পর অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা নিয়ে দলের হাল ধরেন ভেরেইনা। তবে তাকেও বেশি দূর যেতে দেননি তাসকিন আহমেদ। নবম ওভারের প্রথম বলেই ফেরান ভেরেইনাকে। তার বলে এলবিডাব্লিউর ফাঁদে পড়েন এ ওপেনার। ২৫ বলে ২টি চার ও ১টি ছক্কায় ২১ রান করেন তিনি।
দ্রুত দুই ওপেনারের বিদায়ের ধাক্কা প্রোটিয়ারা সামলাতে না সামলাতে ফের আঘাত করেন তাসকিন। সে ওভারের চতুর্থ বলে খালি হাতেই ফেরান এইডেন মার্করামকেও। তার বলে জায়গায় দাঁড়িয়ে ড্রাইভ করতে গিয়ে পয়েন্টে সহজ ক্যাচ তুলে দেন মেহেদী হাসান মিরাজের হাতে। ফলে শুরুতেই স্বাগতিকদের চেপে ধরেছে টাইগাররা। পাওয়ার প্লেতে ৩ উইকেটে ৪২ রান তুলতে পারে দলটি।
এর আগে সাবধানী শুরুতে বাংলাদেশকে ভালো সংগ্রহের ভিত দেন অধিনায়ক তামিম ইকবাল ও লিটন। সেটাকে কাজে লাগিয়ে রেকর্ড জুটি গড়ার পথে আগ্রাসী ফিফটি তুলে নেন সাকিব ও ইয়াসির। শেষদিকে ছোট ছোট গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন মাহমুদউল্লাহ ও মেহেদী হাসান মিরাজ। তাতে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে তাদের বিপক্ষে ওয়ানডেতে নিজেদের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহের রেকর্ড গড়ে বাংলাদেশ। নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেটে ৩১৪ রান করে টাইগাররা।
এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে তাদের বিপক্ষে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্কোর ছিল ৭ উইকেটে ২৭৮ রান। ২০১৭ সালে কিম্বার্লিতে ওই পুঁজি পেয়েছিল টাইগাররা। তবে কুইন্টন ডি কক ও হাশিম আমলার জোড়া সেঞ্চুরিতে ১০ উইকেটের বিশাল হারের তিক্ত স্বাদ নিতে হয়েছিল তাদেরকে।
সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাট হাতে দারুণ ছন্দে থাকা ওপেনার লিটন ৬৭ বলে করেন ৫০ রান। মারেন ৫ চার ও ১ ছক্কা। তিনে নেমে মাত্র ৭ চার ও ৩ ছক্কায় মাত্র ৬৪ বলে ৭৭ রানের ইনিংস খেলেন তারকা অলরাউন্ডার সাকিব। চতুর্থ ওয়ানডে খেলতে নামা তরুণ ইয়াসির স্বাদ নেন এই সংস্করণে প্রথম ফিফটির। ৪ চার ও ২ ছক্কায় ৪৪ বলে ৫০ রান করেন তিনি।
উদ্বোধনী জুটিতে তামিম ও লিটন ১৩০ বলে যোগ করেন ৯৫ রান। ওয়ানডেতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তাদের মাটিতে কোনো উইকেটে এত বড় জুটি আগে ছিল না বাংলাদেশের। তবে তাদের রেকর্ড ভাঙা পড়ে অল্প সময়ের ব্যবধানে। চতুর্থ উইকেটে কেবল ৮২ বলে ১১৫ রানের জুটি গড়েন সাকিব ও ইয়াসির।
প্রথম পাওয়ার প্লেতে ১০ ওভারে বিনা উইকেটে বাংলাদেশ তোলে মাত্র ৩৩ রান। দলীয় পঞ্চাশ আসে ১৬তম ওভারে। শুরুতে উইকেট ধরে রাখার কৌশলে সফল হয়ে সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে রানের চাকা দ্রুত ঘুরতে থাকে টাইগারদের। শেষ ১৪ ওভারে ৪ উইকেট খুইয়ে তারা স্কোরবোর্ডে জমা করে আরও ১৩৭ রান।
Comments