দক্ষিণ আফ্রিকাকে উড়িয়ে বাংলাদেশের অবিস্মরণীয় সিরিজ জয় 

Bangladesh cricket team
ছবি: এএফপি

এই সফরের আগে দক্ষিণ আফ্রিকার মাঠে কোন সংস্করণেই জেতার অভিজ্ঞতা ছিল না বাংলাদেশের। প্রথম ওয়ানডে জেতার পর বাকি সিরিজে সেই প্রাপ্তিই হতে পারত সাফল্যের বিজ্ঞাপন। কিন্তু বাংলাদেশ দল এতেই তুষ্ট থাকেনি। পরভূমে দাপট দেখিয়ে দেশের ক্রিকেটে তারা এনে দিলেন অবিস্মরণীয় সিরিজ জেতার আনন্দ। তাসকিন আহমেদের দুর্দান্ত বোলিংয়ের তৈরি হওয়া মঞ্চে অনায়াসে কাজ সারেন তামিম ইকবাল-লিটন দাসরা। তাতে যেনতেন নয়, কঠিন কন্ডিশনের বাধা সরিয়ে প্রোটিয়াদের স্রেফ উড়িয়ে দিল বাংলাদেশ। 

বুধবার সেঞ্চুরিয়নের সুপার স্পোর্টস পার্কে বাংলাদেশ যেন আবির্ভূত হলো ক্রিকেট পরাশক্তিতে, আর স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকাকে দেখাল ছোট প্রতিপক্ষ! ম্যাচের ছবি যে বলছে এটাই। সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচ বাংলাদেশ যে জিতে নিল  ৯  উইকেটে। টেম্বা বাভুমাদের ১৫৪ রান   ১৪৭ বল  আগে পেরিয়ে  ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতল লাল সবুজের প্রতিনিধিরা। 

এদিন বাংলাদেশের জয়ের বড় নায়ক পেসার তাসকিন। প্রথম ম্যাচে দুর্দান্ত বল করেও ছিলেন পার্শ্ব নায়ক। এবার ৩৫ রানে ৫ উইকেট নিয়ে প্রোটিয়াদের বিধ্বস্ত করে উঠলেন যেন চূড়ায়। 

রান তাড়ায়  বলে  ৮২ বলে ৮৭ রানের আগ্রাসী ইনিংস আসে অধিনায়ক তামিমের ব্যাটে। লিটন দাস করে যান ৪৮ রান। 

ঘরের বাইরে টেস্ট খেলুড়ে দলগুলোর মধ্যে জিম্বাবুয়ে, আয়ারল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে আছে ওয়ানডে সিরিজ জেতার সাফল্য। দক্ষিণ আফ্রিকার মতো নামেভারে বড় প্রতিপক্ষের মতো দলের বিপক্ষে এমন অর্জন নিশ্চতভাবেই থাকবে সবার উপরে। 

১৫৫ রান তাড়ায় নেমে দুই ওপেনার তামিম-লিটন মিলে আনেন দারুণ শুরু। দুজনেই থিতু হতে নিয়েছিলেন সময়। তামিম খোলস ছেড়ে বের হন প্রথমে। চোখ ধাঁধানো কিছু বাউন্ডারি আসে তার ব্যাটে। কাগিসো রাবাদাকে এক ওভারেই মারেন ৪ বাউন্ডারি। ৫২ বলে ৫০ স্পর্শ করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। 

আরেক প্রান্তে রানের চাকা সচল দেখে লিটন আগলে রাখেন নিজেকে। তামিমের ফিফটির পর তিনিও রান সচল করতে থাকেন বাউন্ডারির হার বাড়িয়ে। লক্ষ্যটা হয়ে পড়ে একদম মামুলি। তামিম-লিটনের জুটিতে ক্রমশ নেতিয়ে পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকার শরীরী ভাষা। 

লিটন অবশ্য অল্পের জন্য ফিফটি পাননি। কেশব মহারাজের স্পিনে ইনসাইড আউট খেলতে গিয়ে মিড অফে ক্যাচ দিয়ে ৪৮ রানে থামেন তিনি। ৫৭ বলের ইনিংসে লিটন মেরেছেন ৮ চার। ১২৭ রানে প্রথম উইকেট পড়ার পর বাকিটা ছিল আনুষ্ঠানিকতা। তামিমের সঙ্গে মিলে তা সারেন সাকিব আল হাসান। 

সেঞ্চুরিয়নে প্রথম ম্যাচটা আগে ব্যাট করে বড় পুঁজি গড়ে জিতেছিল বাংলাদেশ। জোহানেসবার্গে গিয়ে অসমান বাউন্সে নাকাল হয়ে হারতে হয়েছিল। ফের সেঞ্চুরিয়ন বাংলাদেশকে দিল সেরা সাফল্য। 

অথচ টস জিতে ব্যাটিং বেছে নেওয়া স্বাগতিকদের শুরুটা দেয়নি এমন কোন আভাসই।  দুই ওপেনার কুইন্টন ডি কক আর ইয়ানেমান মালান শুরুটা এনেছিলেন ভালো। রান আসছিল সাবলীল গতিতে। গতি আরেকটু চড়া করতে গিয়ে প্রথম ভুল করেন ডি কক। লঙ অফ দেখেও মেহেদী হাসান মিরাজকে ওভার দ্য টপ খেলতে গিয়েছিলেন। ধরা দেন মাহমুদউল্লাহর হাতে। 

৪৬ রানে তারা হারায় প্রথম উইকেট। কে জানত এরপর আর কেবল ১০৮ রান জড়ো করা হবে তাদের। তাসকিনের দারুণ বোলিংয়ের সঙ্গে স্বাগতিকদের ভুল পরিকল্পনা, অস্থির হয়ে তালগোল পাকানো ম্যাচে রেখেছে ভূমিকা।  

তিনে নেমে কাইল ভেরেইনা থিতু হওয়ার দিকে ছিলেন। আরেক প্রান্তে একদম সাবলীল খেলতে থাকা মালানের সঙ্গে তার জুটি ছিল সম্ভাব্য ছবি। কিন্তু এই ব্যাটার ভুল করেন তাসকিনের বলে। তাসিকনকে পুল করে বাউন্ডারি মারার পর অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের বল আয়েশি ঢঙে টেনে আনেন স্টাম্পে। 

ক্যারিয়ারের সেরা সময় কাটানো তাসকিন খানিক পর বড় শিকার ধরেন। থিতু থাকা মালান তার বাড়তি বাউন্সের বল খেলতে পারেননি। লাফিয়ে ক্যাচ গ্লাভসে জমান মুশফিকুর রহিম। 

ইনিংস মেরামত করতে পারেননি টেম্বা বাভুমা। সাকিবের আর্ম বল বুঝতে না পেরে সুইপ করতে গিয়ে ব্যাটে নিতে পারেননি। এলবিডব্লিউতে শেষ হয় তার। শরিফুলের আচমকা লাফানো বলে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন বিপদজনক রাসি ফন ডার ডাসেন।

৮৩ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে চরম বিপর্যয়ে পড়া প্রোটিয়াদের বাঁচাতে চেষ্টা চালিয়েছিলেন ডোয়াইন প্রিটোরিয়াস। ২৯  বলে তার ২০ রানের ইনিংস শেষ হয়েছে ওই তাসকিনের বলে। ডেভিড মিলার ছিলেন একমাত্র চিন্তার কারণ। তাসকিনের লেগ স্টাম্পের অনেক বাইরের বল তাড়া করে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন তিনি। দুই বল পর কাগিসো রাবাদাকেও উইকেটের পেছনে ক্যাচ বানিয়ে ৫ শিকার ধরেন তাসকিন। কেশব মহারাজ পরে কিছু রান করে দলকে দেড়শো ছাড়িয়ে নেন। তাতে কেবল ম্যাচের আয়ুই বেড়েছে। 

তাদের পুঁজি যে একদম যথেষ্ট ছিল না বুঝিয়ে দেন তামিম-লিটনরা। পেশাদারিত্বের মোড়কে বাংলাদেশকে পাইয়ে দেন বড় জয়। 

সংক্ষিপ্ত স্কোর 

দক্ষিণ আফ্রিকা: ৩৭ ওভারে ১৫৪  (মালান ৩৯, ডি কক ১২, ভেরেইনা ৯, বাভুমা ২, ডাসেন ৪, মিলার ১৬ , প্রিটোরিয়াস ২০, মহারাজ ২৮ , রাবাদা ৪, এনগিদি ০, শামসি ৩*   ; শরিফুল ১/৩৭  , মোস্তাফিজ ০/২৩ , মিরাজ ১/২৭, তাসকিন ৫/৩৫, সাকিব ২/২৪) 

বাংলাদেশ:  ২৬.৩ ওভারে ১৫৬/১  (তামিম ৮৭* , লিটন ৪৮,   সাকিব ১৮*  ; রাবাদা ০/৩৭ , এনগিদি ০/২৪, মহারাজ ১/৩৬, শামসি ০/৪১, প্রিটোরিয়াস ০/১৮)

ফল: বাংলাদেশ  ৯  উইকেটে জয়ী। 

সিরিজ: বাংলাদেশ ২-১ ব্যবধানে জয়ী। 

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: তাসকিন আহমেদ। 

Comments

The Daily Star  | English

BNP proposes term limit for PM, reinstating caretaker government

The party presented 62 proposals to the Constitution Reform Commission

2h ago