চরম বিপর্যস্ত শুরুর পর আফিফের ব্যাটে বাংলাদেশের ১৯৪
জোহানেসবার্গের ওয়ান্ডারার্স মাঠ বরাবরই পেস বান্ধব। বাড়তি বাউন্স আর গতি দেয় ব্যাটারদের পরীক্ষা। সেখানে ব্যাট করতে নেমে কাগিসো রাবাদাদের পেসের ঝাঁজে রীতিমতো নাকাল হয়ে পড়েছিল বাংলাদেশের ব্যাটিং। ৩৪ রানেই পড়েছিল ৫ উইকেট। চরম বিপর্যস্ত পরিস্থিতি থেকে প্রথমে মাহমুদউল্লাহ ও পরে মেহেদী হাসান মিরাজকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়েন আফিফ হোসেন। এই তরুণের ব্যাটেই মিলেছে কিছুটা লড়াইয়ের পুঁজি।
রোববার দ্বিতীয় ওয়ানডেতে আগে ব্যাটিং বেছে বাংলাদেশ করতে পেরেছে ১৯৪ রান। যাতে আফিফের অবদান ১০৭ বলে ৭২।
সফরকারীদের কাঁপিয়ে ৩৯ রানে ৫ উইকেট নেন রাবাদা। এনিগিদি ৩৪ রানে নেন ১ উইকেট। ২.৫ ওভার বল করে মুশফিকুর রহিমের উইকেট নেওয়া ওয়েইন পারনেল চোটে মাঠ ছাড়লে বাংলাদেশ পায় স্বস্তি। তার ওভারগুলো করতে এসে টেম্বা বাভুমা মূলত ঠেকার কাজ চালিয়েছেন।
ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের শুরুটা হয় ভয়াবহ। আগের ম্যাচে ওপেনিংয়ে বড় জুটি এলেও এবার তামিম ইকবাল ফিরে যান প্রথমেই। এনগিদির লাফানো বল কি করবেন ভেবে না পেয়ে থতমত হয়ে গেলেন। বল ব্যাটে লেগে সহজ ক্যাচ গেল ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে।
আগের ম্যাচের সেরা সাকিব আল হাসানের বিদায় পরের ওভারেই। রাবাদার বল লেন্থ থেকে কিছুটা লাফিয়েছিল, ফ্লিক করতে গিয়ে আউটসাইড এজ হয়ে তার ক্যাচ যায় কাভারে। এবার কোন রানই করতে পারেননি তিনি।
লিটন দাসকে বাউন্সি উইকেটেও সাবলীল লাগছিল। এনগিদিকে কাট ও পুলে মেরেছিলেন দুই বাউন্ডারি। তার ব্যাটের দিকে যখন আশা খুঁজছিল বাংলাদেশ, তখনই সমাপ্তি লিটনেরও। রাবাদার বুক বরাবর বাউন্স টুকে দেওয়া বলে একটু সরে গিয়ে আপার কাট করতে গিয়েছিলেন। বল তার গ্লাভসে লেগে জমা পড়ে উইকেটকিপার কুইন্টন ডি ককের হাতে। ২১ বলে ১৫ রানে থামেন লিটন। বাংলাদেশ ২৩ রানে হারিয়ে বসে ৩ উইকেট।
ইয়াসির আলি ক্রিজে এসেই বিদায় নিতে পারতেন। রাবাদার দুই বল খেলার পরই স্লিপে ক্যাচ দিয়েছিলেন। তা ছেড়ে দেন ইয়ানেমান মালান। শূন্য রানে জীবন পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি ইয়াসির। ১৩ বল খেলে রাবাদার বলেই ইতি তার। শর্ট বলটা অ্যাঙ্গেলে যাচ্ছিল লেগ সাইডের দিকে। ইয়াসির হতম্ভব হয়ে ব্যাট লাগান হ্যান্ডলে। সহজ ক্যাচ যায় ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে। মাত্র ২ রান করে থামেন তিনি।
পরের ওভারেই বিদায় নড়বড়ে মুশফিকের। পারনেলের ভেতরে ঢোকা বল বুঝতেই পারেননি। ৩১ বলে ১২ রান করে তিনি থামেন এলবিডব্লিউতে। ৩৪ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ তখন কাঁপছে।
Afif Hossain's fighting fifty has kept Bangladesh in the game #SAvBAN pic.twitter.com/9SkoOlTmgF
— ICC (@ICC) March 20, 2022
এরপর আফিফ হোসেনকে নিয়ে একটা জুটি পেয়ে যান মাহমুদউল্লাহ। পারনেল চোটে বেরিয়ে গেলে বল হাতে নিতে হয় বাভুমাকে। মূল পেসাররা সরে যাওয়ায় কিছুটা যেন স্বস্তি পাচ্ছিল বাংলাদেশ।
আফিফ শুরু থেকেই ছিলেন আগ্রাসী। মাহমুদউল্লাহ সময় নিয়ে হন থিতু। ৬ষ্ঠ উইকেটে দুজনের জুটিতে আসে ৬০ রান। থিতু হয়ে তিনি ফেরেন ফাঁদে পা দিয়ে। চায়নাম্যান তাবরাইজ শামসি মাহমুদউল্লাহকে কঠিন সময় দিয়েও ফেরাতে পারছিলেন না। পরে লেগ স্লিপ রেখে ফাঁদ তৈরি করেন তিনি। লেগ স্টাম্পের বাইরে বল দিয়ে তাকে প্রলুব্ধ করেন ব্যাট লাগাতে। অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ সেটাই করে ক্যাচ দেন লেগ স্লিপেই। ৪৪ বলে ২৫ রানে থামে তার প্রতিরোধ।
সাবলীল খেলতে থাকা আফিফ পরে মিরাজকে নিয়েও পান আরেক জুটি। মনে করিয়ে দিতে থাকেন আফগানিস্তানের বিপক্ষে তাদের রেকর্ড জুটির কথা। ফিফটি পেরিয়ে যাওয়ার পর অবশ্য জুটি ভাঙার সুযোগ প্রোটিয়ারা পেয়েছিল দুবার। বাভুমার স্লো মিডিয়াম বলে ওয়াইড লঙ অনে ক্যাচ দিয়েছিলেন ২১ রানে থাকা মিরাজ। আবারও ক্যাচ হাতছাড়া করেন মালান। ৫৯ রানে আফিফের দেওয়ায় ফিরতি কঠিন ক্যাচ নিতে পারেননি বাভুমা নিজেও।
৭৯ বলে ফিফটি তুলে দলকে টানা আফিফ স্লগ ওভারে মারার চেষ্টায় ছিলেন। তা করতে গিয়ে থামতে হয় তাকে। আফিফকে থামান রাবাদাই। রাবাদার শেষ ওভারে তুলে মারতে গিয়ে সহজ ক্যাচে বিদায় তার। তবে তার আগে ৭২ রানের ইনিংস খেলে বাংলাদেশকে দিয়ে যান কিছুটা স্বস্তি। ওই ওভারে মিরাজকেও তুলে নিয়ে পঞ্চম শিকার ধরেন রাবাদা।
৪৯তম ওভার করতে এসে রাসি ফন ডার ডাসেন আউট করেন শরিফুল ইসলামকে। এটি তার প্রথম আন্তর্জাতিক উইকেট। তাসকিন আহমেদ-মোস্তাফিজুর রহমান মিলে দলীয় স্কোর আর দুইশো স্পর্শ করাতে পারেননি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ১৯৪/৯ (তামিম ১, লিটন ১৫ , সাকিব ০, মুশফিক ১২, ইয়াসির ২, মাহমুদউল্লাহ ২৫, আফিফ ৭২, মিরাজ ৩৮, তাসকিন ৯* , শরিফুল ২, মোস্তাফিজ ২*; এনগিদি ১/৩৪ , রাবাদা ৫/৩৯ , পারনেল ১/৬ , বাভুমা ০/২২, শামসি ১/২৬, মহারাজ ০/৫৭, ডাসেন ১/৩ )
Comments