নতুন তারিখে সেই পুরনো গল্পই

Najmul Hossain Shanto
কাইল মেয়ার্সের একটি বল ঠিকমতো খেলতে পারেননি শান্ত। ছবি- উইন্ডিজ ক্রিকেট

প্রতিপক্ষের বড় লিডের বোঝা নিয়ে নেমে উদ্দেশ্যহীন শট, অগোছালো পরিকল্পনা, আত্মবিশ্বাসহীন ব্যাটিংয়ের সেই পুরনো মহড়াই দেখা মিলল আবার। ক্যালেন্ডারের পাতায় তারিখ বদলালো কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের ভাষা বদলালো না। টেস্টে আরেকটি বড় হারের সব রকম শঙ্কা জাগিয়ে তৃতীয় দিন শেষ করেছে সাকিব আল হাসানের দল।

রোববার সেন্ট লুসিয়ায় দফায় দফায় বৃষ্টির বিড়ম্বনা না থাকলে খেলা হয়ত চতুর্থ দিনে যেতই না। বৃষ্টিতে ২৩ ওভার কম হওয়ার পরও যে ১৭৪ রানে পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশের স্কোর ৬ উইকেটে ১৩২। ইনিংস হার এড়াতেই এখনো দরকার ৪২ রান।

আগের দিনের ৫ উইকেটে ৩৪০ রানের সঙ্গে আরও ৬৮ রান যোগ করে ৪০৮ রানে থামে ক্যারিবিয়ানরা। তাতেই লিড হয়ে যায় ১৭৪ রানের। সেই লিডের পিছু ছুটতে গিয়ে বৃষ্টি প্রার্থনা ছাড়া বাংলাদেশের হাতে যেন কিছু নেই।

দিনের প্রথম ভাগে খালেদ আহমেদের প্রথমবার ৫ উইকেট নেওয়ার গল্প আছে। কিন্তু ম্যাচের প্রেক্ষিত সেটাকে আর বড় করতে দিচ্ছে না।  বরং বাংলাদেশের উইকেট পতনের দৃশ্যগুলোর বর্ণনা একবার দেখে নেওয়া যাক।

Kemar Roach
তামিমকে ফিরিয়ে রোচের উল্লাস

অভিজ্ঞতার দাম মিলল না তামিমের ব্যাটে

১৭৪ রানে পিছিয়ে ইনিংস শুরু করেছিল বাংলাদেশ। ম্যাচে ফিরতে ব্যাটসম্যানদের কাছ থেকে দরকার ছিল দারুণ নিবেদন। কিন্তু তার ছিটেফোঁটাও দেখা যায়নি। অভিজ্ঞ তামিম ইকবাল দলের ভীষণ প্রয়োজনে হাল ধরতে পারেননি। আরও একবার কেমার রোচের শিকার তিনি। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে রোচের অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের বল তাড়া করে ক্যাচ দেন উইকেটের পেছনে। ৮ বলে থামেন মাত্র ৪ রানে। টেস্টে তামিমকে এই নিয়ে পঞ্চমবারের মতো আউট করলেন রোচ। সব মিলিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১২তম বার। তবে এইবারের আউট বিশেষ হয়ে থাকছে কারণ এটি যে তার আড়াশতম শিকার।

দুর্বল টেকনিকে জয়ের মাশুল

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নবাগত মাহমুদুল হাসান জয় শুরুতে প্রতি ম্যাচেই থাকেন নড়বড়ে। থিতু হয়ে গেলে কিছু রান করেন তিনি। এবার থিতু হওয়ার আর সুযোগ মেলেনি। দুর্বল টেকনিকের মাশুল দিয়ে বিদায় ঘণ্টা তার। রোচের বলে খোঁচা মেরে ১৩ রান করে তার ক্যাচ যায় স্লিপে।

বিজয় বুঝলেন চ্যালেঞ্জ কত কঠিন

৮ বছর পর টেস্টে ফিরে প্রথম ইনিংসে ২৩ রান করে ভেতরে ঢোকা বলে কাবু হয়েছিল এনামুল হক বিজয়। দ্বিতীয় ইনিংসে করতে পারলেন কেবল ৪। আউটের ধরণ একই। আরও একটি ভেতরে ঢোকা বলে এলবিডব্লিউর শিকার এই ব্যাটার। রিভিউ নিয়েও রক্ষা পাননি। টেকনিকের এত ফাঁকফোকর রেখে টেস্টে সফল হওয়া যে কঠিন বোঝা গেছে তার বেলায়।

Litton Das
ফিরছেন লিটন দাস

লিটনের ছন্দপতন

লিটন দাস শুরু পেয়েছিলেন সাবলীলভাবে। মাঝ ব্যাটে লাগিয়ে বের করছিলেন রান। ভালো খেলতে খেলতে সেই ভেতরে ঢোকা বল হন্তারক তারও। জেডন সিলসের বলে আম্পায়ার এলবিডব্লিউর আউট না দিলে রিভিউ নিয়ে তাকে ফেরায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। প্রথম ইনিংসে ফিফটি করা লিটন এবার থামেন ১৯ রানে।

ফাঁদে শিকার শান্ত

নাজমুল হোসেন শান্ত খেলছিলেন সবচেয়ে ভালো। টিকে থাকার নিবেদন, রান বের করার তাগিদ মিলিয়ে সুন্দর সমন্বয় রাখতে পারছিলেন। নিজের রান খরাকে ভালো একটি ইনিংসে পূর্ণতার দেওয়ার আভাসও মিলছিল। তবে থিতু হয়ে ফিফটির কাছে গিয়ে তার বিদায় বড্ড দৃষ্টিকটু। আলজেরি জোসেফ লেগ স্লিপ রেখে তাকে কিছু বল লেগ স্টাম্পের দিকে দিয়ে বিভ্রান্ত করেন, হুট করে ড্রাইভে প্রলুব্ধ এক বল দিয়ে ফেলেন বিপদে। শান্ত ধরা দেন কিপারের গ্লাভসে।

Alzarri Joseph
তামিমকে ফিরিয়ে জোসেফের উল্লাস

বিবর্ণ অধিনায়ক

অধিনায়ক সাকিব আল হাসান থিতু হওয়ার চেষ্টায় ছিলেন। কিন্তু বরাবরের মতই তাকে লাগছিল নড়বড়ে। এই আউট হন-এরকম ব্যাপার। শেষ পর্যন্ত আউট হলেইনই। আলজেরির বল ব্যাট লাগিয়ে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ১৬ রান করে।

প্রকৃতির বিরূপ আচরণ অথবা অবিশ্বাস্য নাটকীয় কিছু না হলে চতুর্থ দিনের মধ্যে খেলা শেষ হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল, হয়ত অর্ধেক দিনেই হবে ফয়সালা। তাতে শেষ হাসিটা কারা হাসছে তা অনুমান করা পৃথিবীর সহজতম কাজই হবে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

(তৃতীয় দিন শেষে)

বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ২৩৪

ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম ইনিংস: (আগের দিন ৩৪০/৫) ১২৬.৩ ওভারে ৪০৮ (মেয়ার্স ১৪৬, জশুয়া ২৯, জোসেফ ৬, রোচ ১৮*, ফিলিপ ৯, সিলস ৫; শরিফুল ২/৭৬, খালেদ ৫/১০৬, সাকিব ০/৪৬, ইবাদত ০/৫৬, মিরাজ ৩/৯১)

বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস:  ৩৬ ওভারে ১৩২/৬ (তামিম ৪, জয় ১৩, শান্ত ৪২, বিজয় ৪, লিটন ১৯, সাকিব ১৬, সোহান ১৬*, মিরাজ ০* ; রোচ ৩/৩২, আলজেরি ২/৩১, ফিলিপ ০/২৩, সিলস ১/১৫, মেয়ার্স ০/২১)

Comments