তিন নম্বরে ভোগান্তি ‘চিরকালীন’, চারে মুমিনুলের পরিসংখ্যানই সেরা

Habibul Bashar & Mominul Haque
তিন নম্বর ব্যাটিং পজিশনে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি রান হাবিবুল বাশার সুমনের, চারে সবচেয়ে বেশি মুমিনুল হকের। ফাইল ছবি

তিন ও চার নম্বর পজিশনে খেলা নাজমুল হোসেন শান্ত আর মুমিনুল হকের রান খরা এই মুহূর্তে টেস্ট দলের সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তা। এই দুজনকে কেন এত গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় খেলানো হয় তা নিয়েও সাম্প্রতিক সময়ে বিস্তর সমালোচনা চলমান। বাজে ফর্মের কারণে সেন্ট লুসিয়ায় তাদের একজন বাদ পড়তে যাচ্ছেন। কিন্তু বাংলাদেশের ইতিহাস বলে এই দুই পজিশনে সংকট ছিল চিরকালীন। তিনে সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার সুমন ছাড়া থিতু হতে পারেননি কেউ। চারে মুমিনুল ছাড়া একটির বেশি সেঞ্চুরি নেই আর কারোই। মুমিনুলের পর বাকিদের রেকর্ড এতটাই বিবর্ণ যে তা কোন আদর্শ টেস্ট দলের সঙ্গে মাননসই নয়।

najmul hossain shanto
নাজমুল হোসেন শান্ত। ফাইল ছবি: ফিরোজ আহমেদ

তিন নম্বরের ভোগান্তি

তিন নম্বর পজিশনে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি রান সাবেক অধিনায়ক হাবিবুলের। এই পজিশনে ক্যারিয়ারের ৫০ টেস্টের ৪৩টিই খেলেছেন হাবিবুল। ৮০ ইনিংসে ৩১.৯৩ গড়ে সর্বোচ্চ ২ হাজার ৫২৩ রান তার।  এই পজিশনে সর্বোচ্চ ১৯ ফিফটি আর তিন সেঞ্চুরি আছে টেস্টে বাংলাদেশের প্রথম দিকের ব্যাটিং ভরসার। 

এরপরেই আছেন মুমিনুল। এক সময় তাকে তিন নম্বরে থিতুই ধরা হচ্ছিল। ক্যারিয়ারে এই পজিশনে ২৮ ম্যাচ খেলেছেন মুমিনুল। ৫১ ইনিংসে ৩৪.২৪ গড়ে করেছেন ৩ হাজার ৮ রান। এই পজিশনে সর্বোচ্চ ৫ সেঞ্চুরি আছে মুমিনুলের। ফিফটি করেছেন ৭টি।

মজার কথা হলো যার দলে জায়গা নিয়ে বিস্তর সমালোচনা, তিন নম্বরের পজিশনের রেকর্ডে সেই শান্তর নাম আসে  এরপরেই। ১৬ টেস্টের ২৮ ইনিংস তিনে খেলে ২৮.২৫ গড়ে ১ হাজার ৬৭৮ রান করেছেন এই বাঁহাতি। এই পজিশনে তার আছে ২ সেঞ্চুরি আর দুই ফিফটি। হাবিবুল, মুমিনুল আর শান্ত  ছাড়া তিন নম্বরে একটির বেশি সেঞ্চুরি নেই কারোই।

তিনে একটি করে সেঞ্চুরি আছে জুনায়েদ সিদ্দিকি, মোহাম্মদ আশরাফুল ও ইমরুল কায়েসের। তবে তাদের পরিসংখ্যান বেশ আহামরি নয়।

তিনে সাতশোর বেশি রান আছে আর জুনায়েদের। ১২ টেস্টে ২৩ ইনিংসে ৩২.২৬ গড়ে ৭৪২ রান করেছেন। এক সেঞ্চুরির সঙ্গে ফিফটি পেরুনো ইনিংস পাঁচটি। এখানে ইমরুলের গড় ছিল ২৫.২২। ত্রিশের নিচে গড় ছিল শাহরিয়ার নাফীসেরও।

Mominul Haque
ছবি: এসএলসি

চারে মুমিনুলের ধারেকাছেও কেউ নেই

চরম রান খরায় থাকার পরও চার নম্বরে মুমিনুলের পরিসংখ্যান এখনো বেশ উজ্জ্বল।

চারে ২৭ টেস্টের ৪৬ ইনিংস ব্যাট করে ৪৩.২১ গড়ে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৮১৫ রান মুমিনুলের। এই পজিশনে সর্বোচ্চ ৬ সেঞ্চুরি করেছেন তিনি। বাকি আর কারো একটির বেশি সেঞ্চুরি নেই এখানে।

চার নম্বরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান মাহমুদউল্লাহর। অবসরে যাওয়া এই অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের রেকর্ডকেও উজ্জ্বল বলার উপায় নেই। ১৫ টেস্টের ২৫ ইনিংস ব্যাট কড়ে ৩১.৮০ গড়ে করতে পেরেছেন ৭৯৫ রান। নেই কোন সেঞ্চুরি।

চার নম্বরে ২৪ টেস্টের ৪৪ ইনিংস খেলেও সাবেক কাপ্তান মোহাম্মদ আশরাফুলের গড় ছিল স্রেফ ১৫.৭০, মোট রান ৬৯১। এতটা বাজে অবস্থা নিয়ে তিনি ৪৪ ইনিংস এই পজিশনে কীভাবে ব্যাট করার সুযোগ পেয়েছিলেন? কৌতূহলের ব্যাপার বটে!

যাকে মনে করা হয় টেস্টে বাংলাদেশের মিডল অর্ডারের সবচেয়ে বড় ভরসা। সেই মুশফিকুর রহিমও চারে সফল হতে পারেননি । ৯ টেস্টের ১৫ ইনিংস ব্যাট করে ২৬.৭০ গড়ে তিনি করেছেন কেবল ৩৭০ রান। তারও এখানে কোন সেঞ্চুরি নেই, ফিফটি আছে কেবল দুটি।

মুমিনুল ছাড়া চারে সেঞ্চুরি আছে আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও নাঈম ইসলামের। দেশের অভিষেক টেস্টে চারে নেমে  ইতিহাস গড়া ১৪৫ রান করেছিলেন আমিনুল।

নাঈমের কেবল ২ ম্যাচ খেলার সুযোগ হয়েছিল চারে। ৪ ইনিংসে ৩৮.২৫ গড়ে ১৫২ রান তার। ছন্দে থাকা অবস্থাতেই দল থেকে বাদ পড়ে আর জায়গা পাননি। এই পজিশনে তিনি ভালো করতে পারতেন কিনা সেই পরীক্ষাই তাই আর হয়নি।

পরিসংখ্যান আর ইতিহাস বলছে টপ অর্ডারে টপাটপ উইকেট হারানো টেস্টে বাংলাদেশের নিয়মিত ঘটনা ছিল বরাবরই। টেস্টে একটা দলের ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ পজিশন ধরা হয় তিন ও চার নম্বরকে। এসব জায়গায় বারবারই হোঁচট খেয়েছে লাল সবুজের প্রতিনিধিরা।

এই দুই জায়গায় অন্তত ৪৫ গড়ে কেউ রান করতে পারলে দলের পরিস্থিতি হয় অনেক উন্নত।  বাংলাদেশ  অবশ্য এই বাস্তবতার অনেক দূরে। তিন নম্বরে ৩৫ গড়েও রান করতে পারেননি কেউ। চারে এখনো পর্যন্ত মুমিনুলের গড়কে (৪৩.২১) বেশ ভদ্রস্থ বলা চলে। কিন্তু টানা ৯ ইনিংসে এক অঙ্কের ঘরে আউট হয়ে নিজের অবস্থান দুর্বল করে ফেলেছেন সদ্য সাবেক অধিনায়ক। তাকে বিশ্রামের আদলে বাদ দেওয়ার আলাপ হচ্ছে জোরেসোরে।

মুমিনুল কোন কারণে বাদ পড়লে চারের সংকট আরও ঘনীভূত হবে বাংলাদেশের। নতুন কাউকে এখানে প্রতিষ্ঠা করার চ্যালেঞ্জ নিতে হবে দলকে। ২২ বছর ধরে টেস্টে পথচলায় থিতু হওয়ার বদলে আবার শুরু করতে হবে নতুন করে। সমস্যা হলো মুমিনুলের জায়গায় চারের যোগ্য বিকল্প এখনো হাতে নেই নির্বাচকদের। এমনকি তিন নম্বরেও বিকল্পের অভাব।

এনামুল হক বিজয়কে আপাতত বাজিয়ে দেখা হতে পারে। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে তার পরিসংখ্যান উজ্জ্বল হলেও গত মৌসুমে আবার রান পাননি। মূলত ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে সাদা বলে রেকর্ড রান করে সীমিত ওভারের দলে এসেছিলেন তিনি। ইয়াসির আলি রাব্বির চোটে সুযোগ মিলেছে টেস্টেও। আট বছর আগে চার টেস্টের ক্যারিয়ারের সর্বশেষটিও সেন্ট লুসিয়াতে খেলেছিলেন বিজয়। তিন নম্বরে নেমে দুই ইনিংসে করেছিলেন কেবল ৯ ও ০ রান। ৪ টেস্টের ৮ ইনিংসে ৯.১২ গড় বলছে প্রমাণের অনেক বাকি এই ডানহাতির।

Comments

The Daily Star  | English

Mindless mayhem

The clashes between students of three colleges continued yesterday, leaving over 100 injured in the capital’s Jatrabari.

6h ago