অসহায় আত্মসমর্পণের প্রথম দিন
আগে ব্যাটিং পেয়ে মুখে যতই বলুন, খুব বেশি সমস্যা নেই আদতে টসটা খুব করে জিততে চেয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। একটু ঘাস, একটু ফাঁকা মিলিয়ে উইকেটের এবড়োখেবড়ো চেহারা আর ভয়াল স্যুয়িংয়ের কথা ভেবে যেকোনো অধিনায়কই তা চাইবেন। কঠিন কন্ডিশনের সঙ্গে বাংলাদেশের টপ অর্ডার রুগ্ন দশা মিলে যা হওয়ার তাই হলো। কেমার রোচ, আলজেরি জোসেফরা নিলেন অগ্নিমূর্তি। এমনকি কাইল মেয়ার্সকেও সামলানো গেল না। অন্ধকারে ডুবে যাওয়ার দিনে বোলিং থেকেও মিলল না খুব বেশি আশার ঝলক।
অ্যান্টিগা টেস্টের প্রথম দিনটি পরিষ্কারভাবেই বাংলাদেশ দলের জন্য অসহায় আত্মসমর্পণের। ১০৩ রানে গুটিয়ে যাওয়ার পর বাকি দিনে নেওয়া গেছে প্রতিপক্ষের স্রেফ ২ উইকেট। ৪৮ ওভার ব্যাট করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ তুলেছে ৯৫ রান। হাতে ৮ উইকেট নিয়ে মাত্র ৮ রানে পিছিয়ে তারা।
বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের যেখানে ডিফেন্সে আস্থা না থাকায় ছটফট করেন, তার বিপরীতে গিয়ে দৃঢ়তার ছবি হয়েছেন ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট। ১৪৯ বল খেলে ৪২ রানে অপরাজিত আছেন তিনি, হাতে সময় আছে। নিজের ডিফেন্সে আছে আস্থা। কেনই বা অস্থির হবেন। তার সঙ্গী এনক্রুমা বনারের রান ১২।
বাংলাদেশকে ১০৩ রানে আটকে ইনিংসের একদম শুরুতে তৃতীয় ওভারে উইকেট হারাতে পারত ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তৃতীয় ওভারে মোস্তাফিজুর রহমানের বলে ব্যাটের ভেতরের কানায় লেগ লেগ স্লিপে দাঁড়ানো মুমিনুল হকের হাতেই গিয়েছিল। ব্যাটিংয়ের মতো ফিল্ডিংয়েও ব্যর্থ হন বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক। জীবন পাওয়া ব্র্যাথওয়েট পরে দেখান চোয়ালবদ্ধ দৃঢ়তা।
বাংলাদেশ আরও কিছু হাফ চান্স পরেও পেয়েছে। তবে সেসব কাজে লাগানোর অবস্থায় যেতে পারেনি। লাঞ্চের পর বাংলাদেশকে গুটিয়ে চা-বিরতির আগ পর্যন্ত ১৫ ওভার ব্যাট করে ঠিক ১৫ রান তুলে ক্যারিবিয়ানরা।
উইকেটের পরিস্থিতি দেখে কোন রকম তাড়াহুড়োয় যাননি স্বাগতিক দুই ওপেনার। সময় নিয়ে এগুনোর পরিকল্পনা নেন, সেটা কাজেও দেয় বেশ। চা-বিরতির পর নেমে কিছুটা রানের চাকায় গতি এনেছিলেন তারা, তা করতে গিয়ে বিপদ বাড়ছিল না।
২৫ ওভার পর্যন্ত দুই ওপেনারই থেকে যান অবিচ্ছিন্ন। ২৬তম ওভারে নিজের দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে উইকেটের দেখা পান। থিতু থাকা জন ক্যাম্পবেল আউট হয়েছেন কিছুটা অদ্ভুতভাবে। মোস্তাফিজের ঠেকাতে গিয়ে ফলো থ্রোতে একটু এগিয়ে গিয়েছিলেন। বলের নিয়ন্ত্রণ নিজের কাছে রাখতে পারেননি। মাটিতে পড়ে তা গড়িয়ে গড়িয়ে গিয়ে ভেঙ্গে দেয় স্টাম্প। ৪৪ রানের উদ্বোধনী জুটির পর দ্বিতীয় উইকেটের রেমন্ড রেইফারকে নিয়ে এগুতে থাকেন ব্র্যাথওয়েট।
তিনে সুযোগ পেয়ে ব্র্যাথওয়েট থিতু হয়ে যাচ্ছিলেন দ্রুতই। জুটিতে ৩৮ আসার পর ব্রেক থ্রো দেন ইবাদত হোসেন। তার দারুণ এক ভেতরে ঢোকা বলে ব্যাট লাগিয়ে উইকেটের পেছনে ধরা দেন ১১ রান করা রেইফার। বনারকে নিয়ে অবিচ্ছিন্ন ২৩ রানে জুটিতে বাকি সময়টা অনায়াসে পার করে দেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক।
এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে গিয়ে বাংলাদেশের কেবল বিব্রত হওয়ার ছবি। উইকেট নিঃসন্দেহে ছিল কঠিন, এবড়োখেবড়ো ঘাসের পাশাপাশি কিছু বল উঁচু-নিচুও হয়েছে। সেই সঙ্গে বাতাসের মুভমেন্ট, ডিউক বলের চিরায়ত স্যুয়িং তো ছিলই। তবে এমন পরিস্থিতি চমকে যাওয়ার মতো কিছু না। এসব পরীক্ষা আসবে, জানত বাংলাদেশ দল। জেনেও উত্তরণের পথ মেলেনি।
টেস্টে এক ইনিংসে তৃতীয়বারের ছয়জনের শূন্য রানে আউট হওয়ার আরেকটি ঘটনা যুক্ত হয়েছে। প্রথম চার ব্যাটসম্যানের তিনজনই ফেরেন শূন্য রানে। পুরো ইনিংসে মাত্র তিনজন যেতে পারেন দুই অঙ্কে। ১০৩ রানের মধ্যে ৫১ রানই আসে অধিনায়ক সাকিবের ব্যাটে। সাবলীল শুরুর পর ২৯ করে উইকেট বিলিয়ে দেন তামিম ইকবাল। ছন্দে থাকা লিটন দাস ফেরেন ১২ রানে।
বাকিরা টেলিফোন ডিজিটের অংশ। বাড়তি বাউন্স আর স্যুইং মিলিয়ে কেউ পরাস্ত। কেউ টের পাননি বল পিচড করে কতখানি ভেতরে আসতে পারে। কারো আবার খোঁচা মারার পুরনো রোগ। অধিনায়কত্বর ভার সরিয়ে নামা মুমিনুল হক আর প্রতিশ্রুতিশীল তকমার নাজমুল হোসেন শান্ত বেরুতে পারেননি ব্যর্থতার চক্র থেকে।
সাকিব বলেছিলেন, উইকেটের পরিস্থিতি আগেরবারের চেয়ে ঢের ভাল। তা বৈকি! ২০১৮ সালে সর্বশেষ সফরে গিয়ে প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে স্রেফ ৪৩ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। এবার ১০৩ রান তো সেই তুলনায় অনেক বেশি। তবে বড় হারের জন্য পরিস্থিতির যে হেরফের হয়নি সেটার আভাস মিলছে প্রথম দিনেই।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
(প্রথম দিন শেষে)
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ৩২.৫ ওভারে ১০৩ (তামিম ২৯, জয় ০, শান্ত ০, মুমিনুল ০, লিটন ১২, সাকিব ৫১, সোহান ০, মিরাজ ২, মুস্তাফিজ ০, ইবাদত ৩*, খালেদ ০; রোচ ২/২১-২, সিলস ৩/৩৩-৩, জোসেফ ৩/৩৩, মেয়ার্স ২/১০, মোটি ০/১)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম ইনিংস: ৪৮ ওভারে ৯৫/২ (ব্র্যাথওয়েট ৪২*, ক্যাম্পবেল ২৪, রেইফার ১১, বনার ১২* ; মোস্তাফিজ ১/১০, খালেদ ০/১৫, ইবাদত ১/১৮, সাকিব ০/২০, মিরাজ ০/২৮)
Comments