লিটন বিশ্বের সেরা ১০ ব্যাটসম্যানের একজন হতে পারবে: প্রিন্স

ashwell prince
অ্যাশওয়েল প্রিন্স। ফাইল ছবি: ফিরোজ আহমেদ

বিশ্বকাপের আগে দল জয়ের ধারায় থাকলেও সংশয়ের বড় জায়গা তৈরি করেছে বাংলাদেশের ব্যাটিং। টানা মন্থর উইকেটে খেলার আড়ষ্টতা কাটিয়ে বিশ্বকাপে স্পোর্টিং উইকেটে কতটা জ্বলে উঠবেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা, এই প্রশ্নই এখন বড়। বাংলাদেশের ব্যাটিং কোচ অ্যাশওয়েল প্রিন্সের কাছে সেই উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছে দ্য ডেইলি স্টার। একান্ত সাক্ষাতকারে লিটন দাস, সৌম্য সরকার, নাঈম শেখ, আফিফ হোসেনদের নিয়ে পর্যালোচনা জানিয়েছেন তিনি।

গত দুই সিরিজে বাংলাদেশ জিতেছে কিন্তু ব্যাটসম্যানরা রান পেতে সংগ্রাম করেছেন। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে এটা একটা উদ্বেগের জায়গা কিনা?

অ্যাশওয়েল প্রিন্স: অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, বাংলাদেশের বিশ্বমানের ব্যাটসম্যানরা, যাদের কিনা অনেকেরই ফ্রেঞ্চাইজি ক্রিকেটের অভিজ্ঞতা আছে তারা সকলেই ভুগেছে। আসলেই উইকেটটাই এমন ছিল। সবার জন্যই এখানে ব্যাট করা কঠিন ছিল।

উইকেট নিয়ে তো অনেক কথাবার্তা। আপনার কি মনে হয় বিশ্বকাপের প্রস্তুতির জন্য মিরপুরের এই উইকেট আদর্শ ছিলো? বিশ্বকাপে তো উইকেট অনেক ব্যাটিং বান্ধব থাকার কথা।

প্রিন্স: মিরপুরের পিচ সত্যি খুবই কঠিন ছিল। খুবই মন্থর আর ঘুরছিলও অনেক। অবশ্য বৃষ্টি মৌসুমের কারণে মাঠকর্মীদের আদর্শ উইকেট বানানো কঠিন ছিল। কিন্তু একইসঙ্গে আরেকটি দিক দেখুন, ইএইতে কিন্তু আইপিএলের বাকি অংশ শুরু হচ্ছে, এরপরই বিশ্বকাপ শুরু হবে। ওই উইকেটগুলোও কিছুটা ক্লান্ত হয়ে পড়তে পারে, মন্থরতা দেখা দিতে পারে সেখানেও, স্পিন কার্যকর হতে পারে। ব্যাপারগুলো যদি সেদিকে যায় তাহলে কেউ বলতেই পারে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলাটা উলটো ভালোই কাজের হলো। কিন্তু তা না হয়ে যদি উইকেট বেশ ভাল থাকে আমার মনে হয় ব্যাটসম্যানদের জন্য মানিয়ে নেওয়া সহজ হবে। কারণ মন্থরতা না থাকলে বল তো ভালভাবেই ব্যাটসম্যানের কাছে আসবে।

ওমানে একটা ক্যাম্প করবে বাংলাদেশ দল। সেখানে ব্যাটসম্যানদের মূল ফোকাস তাহলে কি হবে?

প্রিন্স: মূল ফোকাস হবে ছন্দ খুঁজে পাওয়া। এবং নিজেদের খেলা সম্পর্কে পরিষ্কার একটা ধারণা তৈরি করা। বাংলাদেশে ব্যাটসম্যানদের ছন্দ বের করা খুব কঠিন ছিল।

ওপেনারদের ধারাবাহিকতার ঘাটতি নিয়ে অনেক কথা আছে, বিশেষ করে টি-টোয়েন্টিতে। আপনি বিশ্বকাপে ওপেনারদের  কেমন অ্যাপ্রোচ আশা করেন?

প্রিন্স: কোচিং স্টাফ হিসেবে আমরা জানি ওপেনাররা কি করতে সমর্থ। তারা কঠিন কন্ডিশনেও ঝলক দেখিয়েছে। ভালো উইকেটে তাদের সেরাটা পাওয়ার ব্যাপারে আমি আত্মবিশ্বাসী।

Liton Das

ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই লিটন দাস ব্যাটিংয়ের ধরণে মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন কিন্তু ধারাবাহিকতার ঘাটতি তার একটা সমস্যা। বিশ্বকাপে লিটনের কাছ থেকে আপনার প্রত্যাশা কি?

প্রিন্স: যদি একটা বিষয়ও হয় আমি লিটনের কাছে চাইব সে যেন নিজের উপর আস্থা রাখে। আমি দেখেছি তার সহজাত সামর্থ্য কতটা বেশি। আমি মনে করি সে সব সংস্করণেই বিশ্বের সেরা ১০ ব্যাটসম্যানের একজন হতে পারবে। যদি সে এটা বিশ্বাস করে এবং সেভাবেই সব কিছুকে গ্রহণ করে তাহলে সে অনেক অনেক ধারাবাহিক হবে।

Soumya Sarkar & Ashwell Prince

জিম্বাবুয়েতে আমরা দেখলাম সৌম্য সরকার দারুণ খেললেন, ম্যান অব দ্যা সিরিজ হলেন। কিন্তু এরপরই তার মধ্যে আত্মবিশ্বাসই দেখা গেল না। সৌম্যে সমস্যা কি কিছু খুঁজে পেয়েছেন?

প্রিন্স: ওর সঙ্গে একাধিকবার এই নিয়ে কথা হয়েছে। আমরা দুই-একটা টেকনিক্যাল ইস্যু খুঁজে পেয়েছি ওর ব্যাটিংয়ে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সে যখন খেলছিল না তখন আমরা নিবিড়ভাবে এইগুলো নিয়ে কাজ করেছি। সে এখন অনেকটাই ভালো অনুভব করছে।

Mohammad Naim Sheikh

নাঈম শেখ কিছু রান করছেন কিন্তু প্রান্ত বদলে করতে ভুগছেন। গুরুত্বপূর্ণ পরিস্থিতিতে ডট বল দিয়ে চাপ বাড়িয়ে দিচ্ছেন। তার এসব সমস্যা কাটানোর জন্য কি করছেন?

প্রিন্স:  সব ব্যাটসম্যানেরই ডট বল অনেক বেশি হচ্ছে। যাইহোক যেকোনো তরুণ যখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট শুরু করে সেটা হোক ওয়ানডে বা টি-টোয়েন্টি। সে যদি ডট বল কমাতে পারে তার কাজ অনেক সহজ হয়ে যায়। খেলাটা সম্পর্কে তার (নাঈম) আরও কিছুটা পরিষ্কার হওয়া দরকার। তার জন্য সেরা বিকল্প হচ্ছে স্কোরবোর্ডের দিকে তাকানো, স্কোরবোর্ড এগিয়ে নেওয়া।

লোয়ার মিডর অর্ডারে গভীরতা বিশ্বকাপে বাংলাদেশ কীভাবে কাজে লাগানোর কথা ভাবছে?

প্রিন্স: আমি এতো গোপনীয়তা তো বাইরে বলব না (হাসি)।

টি-টোয়েন্টিতে তিন নম্বর পজিশনের গুরুত্ব কতটা? তিন নম্বরের উপর দলের চাহিদা কি থাকে?

প্রিন্স: ১ থেকে ৮ সব ব্যাটিং পজিশনই গুরুত্বপূর্ণ, এরাই তো রান এনে দেওয়ার জন্য ভরসা করার মতো। যদি ৯, ১০ , ১১ নম্বরের উপর ভর করতে হয় তাহলে তো বিপদ। ১ থেকে ৪ এই পজিশনের ব্যাটসম্যানদের বিভিন্ন রকমের পরিস্থিতিতে দ্রুত মানিয়ে নেওয়া জরুরি। এটাই থাকে চাহিদা। ৫ থেকে ৮ পর্যন্ত ব্যাটসম্যানদের কাছে চাওয়া ক্রিজে গিয়েই অনেক বেশি আগ্রাসী হওয়া।

Shakib Al Hasan

ওয়ানডেতে তিন নম্বরে সাকিবের একটা সাফল্য আছে কিন্তু টি-টোয়েন্টিতে তাকে সব সময় এখানে দেখা যায় না। আপনারা কি বিশ্বকাপে তার নির্দিষ্ট কোন ব্যাটিং পজিশন দিতে যাচ্ছেন?

প্রিন্স: অলরাউন্ড দক্ষতার জন্য সাকিব বরাবরই বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। আমি নিশ্চিত বিশ্বকাপেও সে ব্যাটে-বলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। কিন্তু আমার কাছে টি-টোয়েন্টিতে সব সময়ই ফেক্সিবিলিটির একটা ব্যাপার থাকে। ধরে নিয়ে বলি, আমাদের যদি ডান-বাম ওপেনিং জুটি থাকে তখন যদি ডানহাতি ব্যাটসম্যান আউট হয় তখন প্রথমে দেখতে হয় আমরা কি ক্রিজে দুজন বাঁহাতি দিব নাকি ডান-বাম সমন্বয়টা রাখতে চাইব। এইরকম ছোটখাটো ব্যাপারে আসলে পরিকল্পনা করতে হয়। সেজন্য ফেক্সিবিলিটিটা দরকার।

Afif Hossain
ফাইল ছবি: ফিরোজ আহমেদ

আফিফকে উপরের দিকে ব্যাট করতে পাঠালে কেমন হবে বলে মনে করেন। সাম্প্রতিক ছন্দ আর তার সামর্থ্য সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কি?

প্রিন্স: ঠিক সময়ে ঠিক মানুষটাকে ক্রিজে পাঠানো সব সময়ই ভারসাম্যপূর্ণ চিন্তা। বিশ্বকাপে আফিফ অনেক বড় ভূমিকা নেবে। সে এখনো অনেক তরুণ। কিন্তু আরেকটা ছেলের কথা বলব যে কিনা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অনেক বড় খেলোয়াড় হবে।

মিডল অর্ডার বা লোয়ার মিডল অর্ডারে কারো ক্রিজে এসেই দ্রুত রান করা কতটা কঠিন?

প্রিন্স: এটা কখনই সহজ না। পিচ যখন ভালো হয় তখন কাজটা সহজ হয়। কিন্তু ক্রিজে গিয়ে বল পেটানো কোন ব্যাটসম্যানের জন্যই সহজ না।

Comments

The Daily Star  | English
Anti-Discrimination Students Movement

Students to launch political party by next February

Anti-Discrimination Student Movement and Jatiya Nagorik Committee will jointly lead the process

10h ago