২০১৮ ফিরিয়ে না আনার মিশন
কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য লিখেছিলেন, 'এদেশের বুকে আঠারো আসুক নেমে'। তবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশ টেস্ট দল চাইবে ২০২২ সালে যেন ২০১৮ আর না ফিরে আসে। কবি সুকান্ত অবশ্য যে আঠারোর কথা বলেছেন সেই তারুণ্য-দীপ্ত উদ্যম, ঝাঁজালো পারফরম্যান্স নিশ্চয়ই চাইবেন মুমিনুল হকরা। যেটা ২০১৮ সালে ঘরের মাঠে লঙ্কানদের বিপক্ষে ছিল না বাংলাদেশ দলের।
সেবারও দুই টেস্টের সিরিজের প্রথম টেস্ট চট্টগ্রামে হয়েছিল নিষ্প্রাণ ড্র। দুদল মিলিয়ে তিন ইনিংস শেষ না হতেই ফুরিয়ে গিয়েছিল পাঁচদিন। ১৫৩৩ রান হওয়ায় ডিমেরিট পেয়েছিল চট্টগ্রামের বাইশগজ। এবারও চট্টগ্রামে তিন ইনিংস শেষ হয়নি। ১১২২ রান হয়েছে, ফল হয়নি অনুমিতভাবে।
সেই সিরিজের বাদবাকি চিত্র ধরে যদি সব এবারো এগুতে থাকে তাহলে হতাশায় পুড়তে হবে স্বাগতিকদের। ২০১৮ সালে মিরপুরে দ্বিতীয় টেস্টের উইকেট ছিল অতি স্পিন বান্ধব। সেখানে লঙ্কানদের বিপক্ষে তিন দিনেই বিধ্বস্ত হয় বাংলাদেশ।
শ্রীলঙ্কাকে প্রথম ইনিংসে ২২২ রানে আটকাতে পারলেও বাংলাদেশ গুটিয়ে যায় কেবল ১১০ রানে। শ্রীলঙ্কা দ্বিতীয় ইনিংসে তুলে ২২৬ রান। ৩৩৯ রানের কঠিন লক্ষ্য তাড়ায় বাংলাদেশ আকিলা ধনঞ্জয়া, রঙ্গনা হেরাথদের ঘূর্ণিতে ১২৩ রানেই গুটিয়ে যায়।
চট্টগ্রামে ড্র টেস্টে কিছু ক্ষতিও হয়ে গেছে। নিয়মিত একাদশের দুজন চোটে ছিটকে গেছেন লম্বা সময়ের জন্য। পেসার শরিফুল ইসলামের অভাব সেভাবে টের পাওনা না গেলেও নাঈম ইসলামকে না পাওয়া নিশ্চিতভাবেই ভোগাবে।
ঘূর্ণি উইকেটে ফ্রন্ট লাইন তিন স্পিনার যে নামানো যাচ্ছে না! সাকিব আল হাসান আর তাইজুল ইসলামের সঙ্গী হচ্ছে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। যিনি মূলত ব্যাটসম্যান। অফ স্পিনের এই ঘাটতি দুই বাঁহাতি স্পিনারদের পূরণের আশায় মুমিনুল।
মুখে আশাবাদ শোনালেও গত দুদিন ধরে টিম ম্যানেজমেন্টের মধ্যে চলা 'টেনশন' টের পাওয়া গেছে ভালোই। সেই টেনশন খেলার মাঠে কীভাবে তারা সামলাতে পারেন দেখার বিষয়।
রোববার মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুশীলন সেরে সংবাদ সম্মেলনে এসে মুমিনুল জানান, পেছনের সব ভুলে সুযোগের অপেক্ষায় থাকবেন তারা, 'আমার কাছে মনে হয়, ভালো একটা সুযোগ আছে আমাদের। চট্টগ্রাম টেস্টে কী হয়েছে সেগুলো চিন্তা না করে, এখন আমাদের নতুন করে শুরু করতে হবে। কারণ আগেও অনেক সময় (প্রথম টেস্ট ড্র করে পরের ম্যাচে হেরে গেছি)… ওই জায়গা থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করছি। ঢাকা টেস্টেও যদি দল হিসেবে খেলতে পারি, তাহলে ফল আমাদের পক্ষে আসবে।'
ফল বান্ধব মিরপুর
টেস্টে বিশ্বের সবচেয়ে ফল বান্ধব মাঠগুলোর একটি মিরপুর। এই মাঠে হওয়া ২২ টেস্টের ১৯টিতেই হয়েছে ফল। যে তিন ম্যাচে ফলাফল হয়নি তাতে ছিল বৃষ্টির প্রবল প্রভাব। ২০০৮সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তিনদিন বৃষ্টিতে খেলা না হওয়ায় দেখা যায় প্রথম ড্র। ২০১৩ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেই আরেক টেস্ট ড্র হয় সেই বৃষ্টিতে। ২০১৫ সালে সর্বশেষ ড্র দেখা যায় মিরপুরে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সেই টেস্টেও ছিল তীব্র বৃষ্টির প্রভাব।
এবারও বৃষ্টি না হলে মিরপুরে সিরিজের মীমাংসা তাই হবেই ধরে নেওয়া যায়। বাংলাদেশ অধিনায়কও এখানে ফলই দেখছেন। সেই ফলটা যেন মিষ্ট হয়, হজমের জন্য যেন হয় উপাদেয় সেজন্য পরিকল্পনায় কোন খামতি রাখতে চান না তিনি, 'মিরপুরে ফলাফল ছাড়া ম্যাচ খুব কমই হয়। শেষ কবে ফল আসেনি বলা কঠিন। সবসময় ফল আসে। বোলিং খুব গুরুত্বপূর্ণ, সঙ্গে ব্যাটিংও। অবশ্যই আমরা পরিকল্পনা করি, কোন জিনিস নিয়ে কাজ করলে জেতার সম্ভাবনা বেশি থাকবে।'
মিরপুরে সোমবার সকাল ১০টায় শুরু হবে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার দ্বিতীয় টেস্ট। পুরোদিনে ছাড়াছাড়া বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকলেও আর্দ্রতার কারণে গরম অনুভূত হবে প্রচণ্ড।
খুব বড় কোন চমক না হলে বাংলাদেশ একাদশে বদল আসবে দুটি। অনেকটা বাধ্যতামূলক বদলই বলা চলে। চোটে পড়া শরিফুলের জায়গায় আসবেন ইবাদত হোসেন। নাঈমের জায়গা নেবেন মোসাদ্দেক।
শ্রীলঙ্কা তিন স্পিনার খেলালে আসিতা ফার্নান্দোর জায়গায় একাদশে আসতে পারেন বাঁহাতি স্পিনার প্রবিন জয়াবিক্রমা।
বাংলাদেশের সম্ভাব্য একাদশ: তামিম ইকবাল, মাহমুদুল হাসান জয়, মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম, লিটন দাস, সাকিব আল হাসান, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, তাইজুল ইসলাম, ইবাদত হোসেন ও খালেদ আহমদ।
শ্রীলঙ্কার সম্ভাব্য একাদশ: দিমুথ করুনারত্নে, ওসাদা ফার্নান্দো, কুশল মেন্ডিস, অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস, ধনঞ্জয়া ডি সিলভা, দীনেশ চান্দিমাল, রমেশ মেন্ডিস, নিরোশান ডিকভেলা, লাসিথ এম্বুলদেনিয়া, প্রবিন জয়বিক্রমা ও কাসুন রাজিতা।
Comments