গিবসন থাকলে হয়ত আরও অনেক কিছু শিখতে পারতাম: ইবাদত
নিউজিল্যান্ড সফরে গিয়ে বাংলাদেশ কোনদিন যা করতে পারেনি। মাউন্ট মাঙ্গানুইতে সেটাই করে দেখিয়েছেন ইবাদত হোসেন। অবিশ্বাস্য এক স্পেলে বাংলাদেশকে এনে দিয়েছেন শ্রেষ্ঠ এক অর্জন। নিউজিল্যান্ডের মাঠে প্রথম টেস্ট জয়ের এই নায়ক দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে একান্ত আলাপে জানিয়েছেন তার সাফল্যের কথা, বোলিংয়ের উন্নতির খুঁটিনাটি। শুনিয়েছেন টিম সাউদি, ট্রেন্ট বোল্টদের সঙ্গে আলাপের গল্প। পেস বোলিং কোচ হিসেবে ওটিস গিবসনের না থাকার খবর শোনার পর হতাশা আর আক্ষেপ জানিয়েছেন তিনি। এক সময় তাকে নিয়ে হওয়া সমালোচনার কড়া জবাবও দিয়েছেন।
নিউজিল্যান্ড সফরে যাওয়ার আগে এবং পরে আপনার তো দুই বাস্তবতা। এই ভিন্নতা কি টের পাচ্ছেন?
ইবাদত: আমি কিন্তু অনেকদিন ধরেই চেষ্টা করছিলাম ভাল কিছু করতে। পাকিস্তান সিরিজ ছিল দেশের উইকেটে, অনেক ভাল উইকেট ছিল (চট্টগ্রাম টেস্টে ব্যাটিং উইকেট), ওখানেও চেষ্টা করেছি কীভাবে নিজেকে মেলে ধরা যায়। প্রথম টেস্টে এরকম ফল হওয়ার পর তো দারুণ লাগছিল, নিউজিল্যান্ডের মাঠে এরকম একটা ম্যাচ জেতানো। অনেক ভাল লাগছিল।
ঘোরের মতো লাগছিল কি? স্বপ্ন স্বপ্ন মনে হচ্ছিল না?
ইবাদত: আসলে ঘোর না ঠিক, মনের ভেতর একটা তাড়না ছিল কিছু একটা করব। সবার ভেতর একটা তীব্র প্রচেষ্টা ছিল। আপনারা বলছেন যে এখানে এসে কেউ খুব বেশি জিতে না, আমরাও জিতিনি কখনো। তার মানে কি জিতব না? এটাই সবচেয়ে বড় জিনিস হচ্ছে যে আমরাই সেই দল যারা জেতা শুরু করেছি। আমাদের পরবর্তী যে দল আসবে তারাও এখান থেকে প্রেরণা নিবে। সেই প্রেরণা থেকে তারাও জিতবে। পুরো দলের চেষ্টা ছিল অন্য মাত্রার। প্রথম বল থেকে শেষ বল পর্যন্ত সবার একটা বিশ্বাস ছিল।
এরকম প্রেরণা হঠাৎ করে কীভাবে এলো?
ইবাদত: সুজন স্যারের একটা মোটিভেশনাল বক্তব্য ছিল যেটা আমার একদম বুকের মধ্যে গিয়ে লেগেছে। তিনি বলেছিলেন - আমরা এখানে আসব আর চলে যাব এটা তো হতে পারে না। কাউকে না কাউকে তো ঘুরে দাঁড়াতে হবে। তখন চিন্তা করলাম যে আমরা যে দলটা আছি আমরা তো সামর্থ্যবান। আমরা পারব। আপনি ব্যাটসম্যান দেখেন মুমিনুল ভাই, লিটন, মুশফিক ভাই ছিলেন। সবারই অভিজ্ঞতা অনেক। পেস বোলারদের মধ্যে তাসকিন ছিল। সবার মনের ভেতরে ছিল আমি আমার শতভাগ দিব।
ক্যারিয়ারের শুরুতে অনেক রান দিতেন, পাকিস্তান সিরিজ থেকে দেখছিলাম ইকোনমিতে উন্নতি করছিলেন
ইবাদত: এলোমেলো ছিলাম আগে। এলোমেলো থাকলে তো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সাফল্য পাওয়া মুশকিল। আমি চেষ্টা করেছিলাম যে কীভাবে নিজেকে মেলে ধরব। আমি যে ম্যাচগুলো খেলেছি সবই বড় বড় ম্যাচ। নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে অভিষেক হয়েছে, ভারতের সঙ্গে খেলেছি, পাকিস্তানের সঙ্গে খেলেছি। এরকম দলের সঙ্গে খেলতে গেলে আপনাকে অনেক ভাল হতে হবে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভাল করতে হলে ওরকম প্রস্তুতি দরকার। অধিনায়কেরও পরিকল্পনা ছিল। অধিনায়ক বলছিলেন - উইকেট দরকার নেই, আগে রান আটকাও। এটা নিয়ে কোচের (ওটিস গিবসন) সঙ্গেও কাজ করেছি। আমাদের দেশের উইকেটে সাহায্য না থাকলেও ভাল জায়গায় বল করলে হয়ত সুযোগ আসবে। পাকিস্তান সিরিজ থেকেই চিন্তা করেছি উন্নতির ধাপটা উপরের দিকে নিব।
চম্পাকা রামানায়েকে আপনার একুরেসি নিয়ে বলছিলেন, শুরুতে আপনার যেটার ঘাটতি ছিল
ইবাদত: চম্পাকার সঙ্গে কাজ করেছি আমি যখন এইচপিতে ছিলাম। টেস্ট ক্রিকেটটা আসলেই ধৈর্য্যের ব্যাপার। ব্যাটসম্যানের যেমন ধৈর্য রাখতে হয়, আমাদেরও রাখতে হয়। আমার সব কিছুই ঠিক ছিল কিন্তু একুরেসি কম ছিল। চম্পাকা আমাকে আগেই বলেছে- 'তুমি যখন একুরেট হয়ে যাবে তখন তোমার সাফল্য এমনিতেই চলে আসবে।' যেদিন টেস্ট জিতলাম ওইদিন রাতেই উনি আমাকে কল করেছিলেন। বলছিলেন- 'মনে আছে কী বলেছিলাম, দেখেছ কেবল একুরেসির কারণে এই সাফল্য পেলে। আর দেখ তুমি অনেক বড় ম্যাচ জিতেছে, সবাই তোমাকে নিয়ে মাতামাতি করবে। পুরো বিশ্ব তোমাদের করতালি দিচ্ছে। এটা তোমার ধরে রাখতে হবে। এই জায়গা থেকে গ্রাফটা আরও উপরে নিতে হবে।'
রিভার্স স্যুইংও করালেন আপনারা। কবে থেকে কাজ করছেন এসব নিয়ে
ইবাদত: রিভার্স নিয়ে তো কাজ হচ্ছিলই কোচের সঙ্গে। ওইদিন আসলে সবই খুব সুন্দরভাবে হয়েছে। ম্যাচের প্রথম বল থেকে তাসকিন ও শরিফুল যেভাবে শুরু করেছে সেটা অবিশ্বাস্য। রিভার্সের ব্যাপার বলব বলটা মেন্টেইন (বল বানানো) করার একটা ব্যাপার থাকে। সেটা মুশফিক ভাই ও মুমিনুল ভাই দারুণ করেছেন। তাসকিন সাউদিকে একটা বলে বোল্ড করল কি সুন্দর রিভার্স করল। চট্টগ্রামে পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্টের সময়ই ওটিসের সঙ্গে রিভার্স নিয়ে কাজ করেছি। উন্নতি হচ্ছে। আরও শিখতে হবে। শেখার অনেক বাকি। যদিও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট শেখার জায়গা না।
শুনলেন তো ওটিস গিবসন আর থাকছেন না, উনাকে কতটা মিস করবেন, উনার দুই বছরে কতটা উন্নতি হলো?
ইবাদত : উনার সঙ্গে তো সেই পাকিস্তান সফর (২০২০ সালের পাকিস্তান সফর) থেকেই কাজ করছিলাম। জানার, শেখার চেষ্টা করেছি। উনার সঙ্গে কাজ করে খুবই ভাল লেগেছে, উপকার পেয়েছি। আমার মনে হচ্ছে আমরা পেস বোলার যারা ছিলাম সবারই উন্নতি হয়েছে। যে জিনিসটা তাসকিনকে জিজ্ঞেস করেন বা শরিফুলকে জিজ্ঞেস করেন, রাহিকে জিজ্ঞেস করেন বা যাকেই জিজ্ঞেস করেন। উন্নতির কথাই বলবে। এখন যদি উনি না থাকেন সেটা তো…(হতাশার প্রতিক্রিয়া) আমাদের কাজ করে ভাল লাগছে। কাজ করে শিখতেও পেরেছি অনেক কিছু। উনি শেখানোর চেষ্টা করেছে, আমরাও শেখার চেষ্টা করছি। দুই দিক থেকে একটা ভালো রসায়ন ছিল। থাকলে ভালো হতো। আমরাও অনেক কিছু শিখতাম। কারণ সামনে দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ আছে। ওইসব দেশে উনি কোচিং করিয়েছেন। ওখানকার পরিবেশ ও ওখানকার সব কিছু উনি আরও ভাল জানে। হয়তবা উনি শেয়ার করতেন ওসব উইকেটে কীভাবে বল করতে হবে। মরনে মরকেল, ডেল স্টেইনদের সঙ্গে কাজ করেছেন। উনি থাকলে আমরা আরেকটু শিখতে পারতাম।
আপনি জানালেন যে উনি থাকবেন না। উনি কিন্তু ভালো ভালো খেলোয়াড়দের কোচ ছিলেন।(জেমস) অ্যান্ডারসন, স্টুয়ার্ট ব্রড, মার্ক উডদের সঙ্গে এখনো উনার কথা হয়। ওরা উনাকে ফোন দেন, পরামর্শ নেয়। তাছাড়া (কাগিসো) রাবাদার সঙ্গে কাজ করেছেন উনি। ওদের সঙ্গে উনার যোগাযোগ আছে। উনি থাকলে ভাল হতো কারণ উন্নতির গ্রাফটা তো উপরের দিকে।
গতি ঠিক রেখেও আপনাকে লম্বা স্পেলে বল করতে দেখা গেছে। এতে গিবসনের কেমন ভূমিকা ছিল?
ইবাদত: আমি গিবসনের পরামর্শে অ্যাকশনে সামান্য বদল এনেছি। আমার এই অ্যাকশনে এখন- 'লেস এফোর্ট, মোর পেস'। মানে কম এফোর্ট দিয়েও জোরে বল করতে পারছি। এই অ্যাকশন আমাকে একটানা জোরে বল করতে সাহায্য করেছে।
কি বদল এনেছেন?
ইবাদত: অ্যাকশনে আমি লোডিং এবং গেদারে চেঞ্জ করেছি। আগের যেটা ছিল সেটা অনেকটা ব্রেট লির মতো ছিল। একটু আর্লি লোড করতাম। করতে পারতাম ঠিকই। কিন্তু যখন শরীর ক্লান্ত হয়ে যেত তখন জায়গাটা ঠিক থাকত না। এই জিনিসটা থেকে যেটা হয়েছে লম্বা সময় ধরে বল করতে পারি, এবং গতিটাও ঠিক রাখতে পারি।
এতে ফিটনেসের তো ভূমিকা আছে। আপনি তো অনেক ফিট
ইবাদত: ফিটনেসের ব্যাপারে কোন ছাড় নেই আমার। বিরাট কোহলির একটা কথা আমার মনে ধরেছিল। সে একবার কোথাও একটা বলেছিল- তুমি যদি ফিট থাক তাহলে সব কিছুই করতে পারবে। এখানে আসার পর আমি, তাসকিন, শরিফুল, খালেদ, শহীদুল সবাই একটা চেষ্টা করছিলাম। কেউ হয়ত দেখে না আমাদের (পেসারদের) কষ্টগুলো। আমরা অনেক কষ্ট করি। অনেকেরটা আপনি দেখতে পাবেন, অনেকেরটা দেখতে পাবেন না। সব সময় চেষ্টা করি ফ্লেক্সিবল থাকতে, চোটমুক্ত থাকতে। সিলেটে বাড়িতে গেলেও গা ছাড়া দেই না। ২০১৬ সাল থেকে দেখেন আলহামদুল্লিলাহ ইনজুরি মুক্ত আছি।
এই বছর সাউথ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজে টেস্ট সিরিজ আছে। পেসারদের জন্য অনূকুল পরিবেশ। নিশ্চয়ই মুখিয়ে থাকবেন
ইবাদত: সেদিন সাউদির সঙ্গে কথা বলছিলাম। ও জিজ্ঞেস করছিল- নেক্সট ট্যুর কোথায়? বললাম সাউথ আফ্রিকা। ও বলল, 'সাউথ আফ্রিকা যাওয়ার আগে ওখানকার উইকেটের বর্তমান অবস্থা কম্পিউটার এনালিস্টের কাছ থেকে দেখে নিবে। জায়গাটা, লেন্থটা তাড়াতাড়ি পিক করে যাতে ওখানে গিয়ে বল করতে পার। ওখানে যে বাড়তি বাউন্স থাকে একটু উপরে বল করলে সাহায্য পাবে ওখান থেকে।' সবচেয়ে বড় কথা ফিট থাকতে হবে। যে কদিন সময় পাব লেন্থটা পিক করতে হবে তাড়াতাড়ি।
নিউজিল্যান্ডের আর কার কার সঙ্গে কথা হলো?
ইবাদত: টিম সাউদির সঙ্গে কথা হয়েছে বললামই, ট্রেন্ট বোল্টের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা সবাই খুব বিনয়ী। ওয়েগনার প্রথম টেস্ট জেতার পর এসে বলেছিল- 'ইউ ডিজার্ভ ইট।' আসলে অনেক ভাল লেগেছে। বোল্ট দ্বিতীয় টেস্টের বোলিংয়ের পর যখন ওয়ার্মআপে নেমেছি তখন বলেছে- 'ইয়েস্টারডে গন, টুডে ইজ দ্য নিউ ডে সো ইনজয় ইউর বোলিং। সাউদির সঙ্গে কথা বললাম ক্রাইস্টচার্চে প্রথম দিনের পর। জিজ্ঞেস যে ওখানে (মাউন্ট মাঙ্গানুইতে) তো আমাদের মতো উইকেট ছিল। আর এখানে লেন্থটা কীভাবে পিক করব। ও বলল ওখানে যে উইকেট ছিল ফ্লাট ছিল তোমাদের দেশের মতো। বল রিভার্সও করছিল। ব্যাটসম্যানরা সংগ্রাম করছিল। এখানে (ক্রাইস্টচার্চে) উইকেটে বাউন্স আছে। ওখানে যে লেন্থে বল করেছ সেটা এখানে করলে ব্যাটসম্যান সহজে ছেড়ে দেবে। এখানে লেন্থ বদলাতে হবে।
প্রথম টেস্টে ওরকম জয়ের পর দ্বিতীয় টেস্ট তো ভাল হলো না। সব মিলিয়ে নিউজিল্যান্ড সফরে নিজেকে কত মার্ক দেবেন?
ইবাদত: দুই ম্যাচে ৯ উইকেট পেয়েছি। কিন্তু দ্বিতীয় ম্যাচটা ভাল হলে ভাল লাগত। কারণ দ্বিতীয় ম্যাচে ৩০ ওভারে ১৪৩ দিয়ে ২ উইকেট পেয়েছি। এখানে আসলে লেন্থটা পিক করা কঠিন হয়ে যাচ্ছিল। সাধারণত আমি বাঁহাতিকে ভাল বল করি। এখানে (ক্রাইস্টচার্চে) যে জিনিসটা হয়েছে ডানহাতিকে ভাল বল করছি, বাঁহাতির বেলায় কঠিন হয়ে গেছে। ওখানে (মাউন্ট মাঙ্গানুইতে) বল করার কারণে আমার বডি মেকানিজমে অবচেতনে ওই লেন্থের বল করে গেছি। এখানে একটু কঠিন হয়ে গিয়েছিল। প্রথম দুইটা বল করে যখন এলবিডব্লিউর সুযোগ এসেছিল, মনে হয়েছিল আরেকটু উপরে করলে হয়ত সুযোগ আসবে। কিন্তু ওই বলগুলো টম ল্যাথাম খুব সুন্দর করে ড্রাইভ করছিল। আর আরেকটু পেছনে করলে বলগুলো ছেড়ে দিচ্ছিল। আসলে সবদিন সমান যায় না। প্রত্যেকটা ম্যাচেই আপনি ম্যাচ সেরা হবেন এটা আশা করা বোকামি। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে সব ম্যাচে আপনি দাপট দেখাবেন এটা কঠিন।
প্রথম ১১ টেস্টে আপনার পারফরম্যান্স তো বিবর্ণ। আপনি কেন দলে এমন প্রশ্ন অনেক জায়গায় উঠত। এসব কথা কানে নিতেন?
ইবাদত: নাহ। আপনি ক্রিকেট খেলেন? আপনার কলিগরা কেউ খেলে? খেলা উচিত। শখের বসে খেলা আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার তফাৎ আছে। আমাকে বুঝতে হবে যে সমালোচনা করছে সে ক্রিকেট কতটা বোঝে। এইগুলা নিয়ে মাথা ঘামাই না। আমার কাজ হচ্ছে দেশের হয়ে খেলা, কে কি বলল, কে ট্রল করল এসব মাথায় নেওয়া কাজ না। যখন ১৬ কোটি মানুষ বিশ্বাস করবে আমাদের দেশ ভাল খেলবে, জিতবে সেদিন থেকে আমরা ভাল খেলা শুরু করব। প্রথম ম্যাচ জেতার পর সবাই এপ্রিয়েশিয়েট করেছে যে এরকম একটা ম্যাচ জিতছ! কিন্তু এটা ফ্লুক ছিল না। আমরা সবাই চেষ্টা করছি। প্রত্যেকটা খেলোয়াড়, টিম বয় থেকে সবাই মিলে বিশ্বাস করেছি আমরা জিতব, এজন্য জিতেছি।
আপনি আপনার দেশকে, দেশের খেলোয়াড়দের যদি খারাপভাবে উপস্থাপন করেন সেটা একান্ত আপনার বিবেচনার ব্যাপার। কেউ যদি খারাপও খেলে তাকে নিয়ে ইতিবাচক কিছু করতে পারেন, চাইলেই পারেন। আবার কেউ ভাল করলেও তাকে নিয়ে নেগেটিভ স্টোরি করতে পারেন, যতই ভাল করুক। আপনি দেখেন গত ম্যাচে লিটন এত সুন্দর একটা ইনিংস খেলেল, সেঞ্চুরি করল। কয়জন তাকে নিয়ে পজিটিভি স্টোরি করেছে? কটা স্টোরি হয়েছে? সে যে একশোটা রান করেছে, দেশের খাতাতেই তো নাম উঠবে। যে বাংলাদেশ-লিটন কুমার দাস। যখন আমরা বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত গাই তখন গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যায়। হয়ত সাংবাদিক মহল সেটা সিরিয়াসলি নেন না। কেউই চায় না ভাই খারাপ খেলতে। খারাপ ব্যাট করতে বা খারাপ বল করতে। আপনি আপনার ভেতর থেকে সর্বোচ্চ দিয়ে সব সময় চেষ্টা করবেন। নিউজিল্যান্ড কি প্রথম ম্যাচে ১০০ ভাগ দিয়ে চেষ্টা করেনি। অবশ্যই করেছে। তবু তো ওরা ঘরের মাঠে হারল।
নেতিবাচক নিউজ করা খুব স্বাভাবিক। এতে হয় টিআরপি বাড়বে, "টেস্ট খেলতে পারে না দশ ম্যাচে ১০ উইকেট নিছে ওকে কেন নেওয়া হয়"- এটা বললে লাইক হবে, ভিউ হবে। তাই না? যিনি করেছেন, উনি কিন্তু দেশের জন্য করে নাই। নিজের জন্য করেছেন। আমরা যখন খারাপ খেলি ওই রাতে ঘুমাতেই পারি না। যখন বোলিংয়ের কারণে আমার দেশ হারে তখন সারাটা রাত এরকম চিন্তা করি, ওই ম্যাচের ভিডিও দেখি আর ভাবি যে আমার কারণে হেরেছে। নিজের ভেতরে নিজের ঘৃণা তৈরি হয়।
২০১৩ সালে রবিউল ইসলামের পর ২০২২ সালে ইবাদত। পরেরবার পেসারদের পাঁচ উইকেটের জন্য কত অপেক্ষা?
ইবাদত: আমি তো আশা করেছিলাম এই ম্যাচেই তাসকিন বা শরিফুল কেউ আরও ৫ উইকেট পাবে। আমার তো ইচ্ছে প্রত্যেক ম্যাচে ৫ উইকেট পেস বোলারদের কেউ না কেউ পাক। আমি আশা করি যেন দীর্ঘ অপেক্ষা করা না লাগে। প্রত্যেকটা ম্যাচে যেন এরকম করতে পারি আমরা। আশা করব যাতে লম্বা সময় না লাগে।
পেস বোলিং তো বাংলাদেশে অনেক আনাদৃত ছিল। আপনার কি মনে হয় সেই ভাবনায় বদল এসেছে? বা আসতে যাচ্ছে?
ইবাদত: আমার জন্য এসব প্রশ্নের উত্তর দেওয়া কঠিন হয়ে যায়। আমরা সবাই চেষ্টা করছি। আমরা যে পাঁচ-ছয়জন পেসার আছি সবাই শতভাগ দিয়ে চেষ্টা করছি। আমার বিশ্বাস দেশের মাঠেও যদি আমরা তিন-চারজন পেস বোলার খেলি তাহলে ২০ উইকেট নিতে পারব ইনশাল্লাহ।
ক্যারিয়ার শেষে নিজেকে কোথায় দেখতে চান?
ইবাদত: এরকম কোন চিন্তা নাই। তবে দেশের জন্য খেলতে চাই, জিততে চাই। দেশকে জেতাতে চাই। এরকম পারসোনাল কোন পরিকল্পনা নেই। আর কিছু নিয়ে এখনো ভাবিনি।
Comments