দাবায় ইতিহাসের দ্বারপ্রান্তে পিতা-পুত্র জুটি

বাবা গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়াউর রহমানের কাছ থেকে দাবা খেলার জটিলতা শিখতে ইচ্ছুক ছিলেন না ফিদে মাস্টার তাহসিন তাজওয়ার জিয়া। তবে কোভিড -১৯ মহামারী চলাকালীন সময় নিজেকে বাড়িতে বন্দী অবস্থায় তার আগ্রহ ফুটে ওঠে। এখন তাজওয়ার খেলার প্রতি অনেক বেশি সিরিয়াস। এমনকি বাবার কাছ থেকে শেখার জন্য অনেক সময়ও ব্যয় করেন।

ফলে বাবা-ছেলে ইতিহাস গড়ার পথে। ২৮ জুলাই থেকে ভারতে আসন্ন ৪৪তম দাবা অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করতে প্রস্তুত তারা, যেখানে পিতা-পুত্রের এ জুটি প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ জাতীয় দলে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। জিয়ার ১৫তম বারের মতো অলিম্পিয়াডে অংশ নেওয়ার সময় তাজওয়ারের অভিষেক হবে ১৬ বছরে।

'যে অ্যাকাডেমিগুলিতে তার বাবা প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন সেখানে দাবা শিখতে আগ্রহী ছিলেন না তাহসিন। পরিবর্তে, ও বাইরে গিয়ে বিভিন্ন খেলনা কিনত, যা মাঝে মাঝে তার বাবাকে বিরক্ত করত। তাহসিনকে দাবা খেলোয়াড় বানানোর আশা ছেড়েই দিয়েছিল জিয়া। কিন্তু কোভিড-১৯ মহামারী পরিস্থিতি পরিবর্তন করে দেয়। এখন বাবা এবং ছেলে আরও বেশি সিরিয়াস এবং বাড়িতে ভিডিও দেখে, ম্যাচ বিশ্লেষণ করতে এবং দাবা ম্যাগাজিন পড়তে অনেক সময় ব্যয় করে,' আগের দিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন গর্বিত মা তাসমিন সুলতানা।

'আমার ছেলের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করার স্বপ্ন ছিল, বিশেষ করে যখন ও ঘরোয়া সার্কিটে ভালো পারফর্ম করা শুরু করে। এটা একটা দারুণ অভিজ্ঞতা হবে। এটা একটা সম্মানের এবং আমি ওকে নিয়ে গর্বিত কারণ ও মেধার ভিত্তিতে এই পর্যায়ে পৌঁছেছে। আমরা জাতির জন্য ভালো পারফর্ম করার চেষ্টা করব,' গতকাল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনের পর এমনটাই বলেন জিয়া।

বাংলাদেশ গেমসের সময় বাংলাদেশ আনসারের হয়ে একসঙ্গে খেলেছেন জিয়া এবং তাহসিন। প্রিমিয়ার দাবা লীগ, জাতীয় দাবা চ্যাম্পিয়নশিপ এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক রেটিং দাবা টুর্নামেন্টে একে অপরের বিপক্ষেও অনেকবার খেলেছেন। ক্লাসিক্যাল দাবাতে বাবার সঙ্গে টাই করেছিলেন তাহসিন। এমনকি একটি টুর্নামেন্টে রেপিড দাবার সাম্প্রতিক রাউন্ডে জিয়াকে হারিয়ে ছিলেনও।

'তাহসিন ভালো ফর্মে আছে। ও ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নশিপ এবং প্রিমিয়ার লিগে ভালো খেলেছে এবং শক্তিশালী গ্র্যান্ডমাস্টারদের বিপক্ষে ড্র করেছে। তাই, আমি মনে করি আগামী দিনে আরো টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করার কারণে ও আরও ভালো করতে থাকবে,' ছেলেকে নিয়ে এমন মূল্যায়নই করেছেন জিয়া। 'সবচেয়ে ইতিবাচক দিক হল যে ও এখনও তরুণ এবং অধ্যয়নরত এবং অনুশীলন করার জন্য ওর অনেক শক্তি রয়েছে। অবশ্যই, আমি ওকে আমাদের চেয়ে আরও ভালো অবস্থানে দেখতে চাই। আমি আশা করি ও এমন রেকর্ড তৈরি করবে যা বাংলাদেশী দাবা খেলোয়াড়রা অর্জন করতে পারেনি এখনো।'

তাহসিন মনে করেন যে সে বর্তমানে তার বাবার থেকে অনেক দূরে আছেন, তবে তাকে ছাড়িয়ে ভবিষ্যতে সুপার গ্র্যান্ডমাস্টার হতে চান তিনি, 'আমার বাবা সব দিক দিয়েই আমার চেয়ে ভালো। তিনি একজন অভিজ্ঞ জিএম। আমার বাবার সঙ্গে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করা ছিল স্বপ্ন। আমি আমার বাবার সাথে ২০১২ সাল থেকে অলিম্পিয়াড দেখতে যাচ্ছি এবং আমি এখন অলিম্পিয়াডে খেলতে যাচ্ছি। তিনি এবং আমি সত্যিই খুশি। আমি ২৭০০ রেটিং অতিক্রম করে একজন সুপার গ্র্যান্ডমাস্টার হতে চাই।'

বাবা-ছেলের সঙ্গে জিএম নিয়াজ মোর্শেদ, জিএম এনামুল হোসেন রাজীব এবং এফএম মেহেদি হাসান পরাগ পাঁচ খেলোয়াড়ের স্কোয়াড এবার চেন্নাইতে অংশ নিবে।

এদিকে, জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে বাজে পারফরম্যান্সের পর ৩৮ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো নারী দলে জায়গা পাননি ডব্লিউআইএম​রানী হামিদ। মহিলা দলে আছেন এফএম শামীমা শারমিন শিরিন, ডব্লিউএফএম নাজরানা খান ইভা, ডব্লিউএফএম নওশিন আঞ্জুম, সিএম জান্নাতুল ফেরদৌস এবং উম্মে তাসলিমা প্রতিভা তালুকদার।

দাবা অলিম্পিয়াডের শেষ সংস্করণে, বাংলাদেশ পুরুষ দল ১৮৫টি দেশের মধ্যে ৫৬তম এবং মহিলা দল ১৫১টি দেশের মধ্যে ৭২তম স্থান অর্জন করেছিল। তবে আয়োজকরা আশা করছেন এবার আরও ভালো ফল হবে। আজ ভারতের উদ্দেশে রওনা হবে দলটি।

Comments

The Daily Star  | English

Ending impunity for crimes against journalists

Though the signals are mixed we still hope that the media in Bangladesh will see a new dawn.

14h ago